জাতীয় গ্রন্থাগার: ঠিকা কর্মীদের পুনর্বহাল না করায় সমস্যা হতে পারে রক্ষণাবেক্ষণে
সরকারি লালফিতের ফাঁস নাকি ব্যক্তির ঔদাসীন্য, প্রশ্ন সেটাই
- Total Shares
পুলিশ থেকে শিক্ষা এমনকি গ্রন্থাগার, যে কোনও ক্ষেত্রে কর্মীসমস্যা মেটাতে রাজ্য সরকারের সহজ দাওয়াই হল ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা। কিন্তু কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠানে সে ভাবে নিয়োগের উদারহণ অন্তত এখনও অবধি দেখা যাচ্ছে না, এমনকি অভিযোগ, নির্দিষ্ট কয়েকটি ক্ষেত্রে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে দক্ষ ও অদক্ষ কর্মী নিয়োগের ব্যাপারে সুপারিশ থাকলেও, বাস্তবে তা কার্যকর হচ্ছে না। এ জন্য বিভিন্ন স্তরে দরবার করেও কিছু হচ্ছে না।
কর্মীদের কথামতো তাঁরা বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন পর্যায়ে সুপারিশ করেছেন। ডিরেক্টরের কাছে গেলে তিনি পাঠিয়েছেন এস্টাবলিশমেন্ট বিভাগে, সেখানে সমস্যা বলার পরে তাঁরা পাঠিয়েছেন সহ-গ্রন্থাগারিকের কাছে। সেখান থেকে আবার এস্টাবলিশমেন্ট বিভাগ... এভাবেই তাঁরা ঘুরপাক খেয়েছেন। গত বছর ৩১ অক্টোবর থেকে ৬০ জন কর্মী কার্যত বেকার।
জাতীয় গ্রন্থাগার। (ছবি: উইকিম্যাপিয়া)
যে সব বিভাগে এই ধরনের কর্মী নিয়োগের কথা রয়েছে সেই সব বিভাগের মধ্যে রয়েছে বাঁধাই বা বাইন্ডিং যেটি রক্ষণাবেক্ষণ বা প্রিজার্ভেশন বিভাগের অন্তর্গত। এই বিভাগে কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানে তার প্রভাব সরাসরি পাঠকদের উপরে পড়বে এবং রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে নষ্ট হতে পারে বইপত্র ও নথি।
এ ব্যাপারে তাঁর মতামত জানতে চেয়ে জাতীয় গ্রন্থাগারের অফিসার অন স্পেশাল ডিউটি (ওএসডি) ডঃ কে কে কচুকোষিকে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠানো হলেও এই প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়া পর্যন্ত কোনও উত্তর তাঁর কাছ থেকে পাওয়া যায়নি।
কয়েক জনের কর্মহীন হলে প্রথম প্রশ্ন হল মানবিকতার, আরেকটি প্রশ্ন হল বাস্তব পরিস্থিতির যার সঙ্গে সম্পদের সুরক্ষা ও নিয়মনীতির প্রশ্নও জড়িত।
অনেক দিন আগে নীরদচন্দ্র চৌধুরীর একটি উক্তি কোনও একজনের লেখায় পড়েছিলাম। নীরদচন্দ্র চৌধুরী নাকি কোনও পেপারব্যাক বই পড়তেন না। কোনও বই যদি শুধুমাত্র পেপারব্যাকই প্রকাশিত হত, তা হলে সেই বইটি তিনি বাঁধিয়ে নিতেন চামড়া দিয়ে, তারপরে পড়তেন।
জাতীয় গ্রন্থাগারও বাঁধানো বই ইস্যু করে থাকে। অর্থাৎ পেপারব্যাক বই এলে তা ইস্যু করার আগে বাঁধিয়ে নিতে হয়। এটাই রীতি। কিন্তু এখন সেই বিভাগে কর্মী প্রায় না থাকায় প্রশ্ন উঠছে, নতুন যে সব পেপারব্যাক বই প্রকাশিত হচ্ছে বা জাতীয় গ্রন্থাগারে আসছে, সেই বইগুলি কবে আগ্রহী পাঠকরা পাবেন।
একই সঙ্গে সংরক্ষণের প্রশ্নটিও রয়েছে। জাতীয় গ্রন্থাগারে বই কোনও কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে এমন খবর অনেক সময়ই আমরা দেখতে পাই। এখানেও সেই প্রশ্নটি উঠে আসছে, নতুন করে কোনও বই ক্ষতিগ্রস্ত হলে তা দ্রুত আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা কী ভাবে সম্ভব হবে।
এবারে আসা যাক মানবিকতার প্রশ্নে। যে সব কর্মী আজ কর্মহীন তাঁদের অনেকই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে জাতীয় গ্রন্থাগারের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। নিয়োগকর্তা বদলেছে, কিন্তু নিযুক্ত হয়েছেন একই ব্যক্তি। তাঁদের কেউ কেউ অদক্ষ থেকে দক্ষ হয়েছেন। এখন তাঁদের পক্ষে অন্যত্র কাজ পাওয়া মুশকিল হয়ে গেছে। তাই তাঁরা এখন সঙ্কটে। অনুনয়-বিনয় করে কোনও লাভ না হওয়ায় এখন তাঁরা ভাবছেন ধর্নায় বসবেন।
সুপারিশ থাকার পরেও কেন এমন অবস্থা? সরকারি লালফিতের ফাঁস নাকি কয়েক জন ব্যক্তির ঔদাসীন্য? ব্যক্তিবিশেষের ঔদাসীন্যে যদি কারও সংসার অচল হয়ে যায়, যদি জাতীয় সম্পদ নষ্ট হয়ে যায় তা হলে তার দায় কে নেবে?
এক কথায়, কেউ নেবে না। কেউ যদি সত্যিই উদ্যোগী হতেন, তা হলে কয়েকটি পরিবার সমস্যা থেকে রেহাই পেত এবং জাতীয় সম্পদ রক্ষা পেত, বাঁধানো হয়নি বলে পাঠকরা বই পাবেন না, এমন পরিস্থিতিও তৈরি হত না।