#মিটু শুরু হয়েছে, এবার প্রয়োজন #হাউউইলচেঞ্জ আন্দোলনের
আন্দোলনের শুরুর পর কয়েকজন যে প্রকাশ্যে এসে ক্ষমা চেয়েছেন, তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ
- Total Shares
#মিটু আন্দোলন কিন্তু কোনও ধরণের প্রচার নয়। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ আতঙ্কের পরিস্থিতিতে সত্যিকারের সাহস দেখানো। এই আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে কেঁচো খুঁড়তে বেশ কিছু কেউরে বেরিয়ে আসবেই, যদিও অধিকাংশ অভিযোগই প্রমান করা সম্ভব হবে না।
শুধুমাত্র প্রকাশ্যে নয়, ঘনিষ্ঠ মহলেও যৌন্য হেনস্তার বিবরণ নিজের মুখে দেওয়াটা অস্বস্তিকর। তাই অনেকেই মুখ খুলতে চান না। এর ফলে, এই ঘটনাগুলো মানসিক ক্ষতের সৃষ্টি করে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই ক্ষত হয়ত অনেকটাই মুছে যায় কিন্তু ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে, ভবিষ্যতের সম্পর্কগুলো মজবুত করতে বাধা সৃষ্টি করে এবং যার উপর অত্যাচারিতদের বিষণ্ণ করে তোলে।
মানসিক চিকিৎসকরা এই পরিস্থিতিতে কিছুটা কাজে আসতে পারেন - বাস্তবটা মেনে নিয়ে জীবনে এগিয়ে যাওয়ার মন্ত্র দিয়ে। একজন প্রশিক্ষিত থেরাপিস্টের কাছে মুখ খুলতে পারলে অত্যাচারিতদের মন অনেকটাই হালকা হয়। তাঁরা আর নিজেরাই নিজেদের নিয়ে লজ্জাবোধ করেন না।
স্টকহোম সিনড্রোম বা পোস্ট ট্রম্যাটিক ডিসঅর্ডারের মতো রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। সমাজেরও এক্ষেত্রে কিছ দায়ে দায়িত্ব রয়েছে। সংসারের প্রতিটি পুরুষ মানুষই খারাপ নয়। তাই পুরুষরা চাইলে ভুলগুলো শুধরে ফেলতেই পারেন বা ভুলগুলোর পুনরাবৃত্তি রোধ করতে পারেন।
সপ্তাহখানেক আগে #মিটু আন্দোলনে যোগ দিয়েছে ভারত। অনেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে এবং একের পর এক টুইটে খ্যাতি একবারে মাটিতে এসে ঠেকেছে। ঘটনাগুলোর সঙ্গে যাঁরা যুক্ত তাঁদের উপর যে এর ফলে খুব বড় প্রভাব পড়বে এমনটাও নয়। কিন্তু, এর মধ্যেও কয়েকজন প্রকাশ্যে ক্ষমা চেয়েছেন।
অত্যাচারিতরা মানসিক আঘাত পান [সৌজন্যে: টুইটার]
এই বিষয়গুলো নিয়ে মুখ খোলার জন্য সাহসে প্রয়োজন। যাঁরা খুলছেন তাঁরা সত্যিকারের সাহসী। কারুর নাম না করেই আমাদের এই সাহসীদের ধন্যবাদ জানানো উচিত।
বছর খানেক আগে বিশ্বজুড়ে #মিটু আন্দোলন সারা ফেলেছিল। সেই সময় অস্ট্রেলীয় সাংবাদিক তথা চিত্রনাট্যকার বেঞ্জামিন ল আরও একটি হ্যাশট্যাগের প্রচলন করেছিলেন - #হাউউইলচেঞ্জ।
#মিটু আন্দোলনের সূত্রপাতের পর অনেকে পুরুষই এই আন্দোলনের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন। মহিলাদের জীবনে যাতে পরিবর্তন ঘটে সে চেষ্টাও করেছেন। যাঁরা মহিলাদের দুঃখ কষ্টের সঙ্গে ওয়াকিবহাল তাঁরা জানেন পরিস্থিতি বদল করতে মনোভাবেও কী ধরণের পরিবর্তন আনতে হয়। অনেকেই হয়ত কোনও দিনও কোনও মহিলার সঙ্গে অভব্য আচরণ করেননি। কিন্তু এই বিষয় মুখ না খুলে তাঁরা কিন্তু ঘুরে পথে অত্যাচারীদের সমর্থন করছেন।
এই মুহূর্তে ভারতের প্রয়োজন হাউ উইল আই চেঞ্জ-এর মতো একটি হ্যাসট্যাগ। কিন্তু এই ধরণের একটি হ্যাসট্যাগ আমাদের দেশে কোনও দিনও আমরা দেখতে পাব কিনা তা নিয়ে সন্দেহের যথেষ্ট অবকাশ রয়েছে।
এই বিষয়গুলো নিয়ে সম্যক ধারণা রয়েছে অনেকেরই। তাঁরা সমাধান সূত্র খুঁজতেও চান। অনেকেই অত্যাচারিতদের অভিজ্ঞতা খুব ভালো করেই জানেন। এখানে মূল সমস্যাটা হচ্ছে একজন মহিলা সম্পর্কে সমাজের ধারণাটা ঠিক কী। আমরা যতই উন্নয়নের বুলি আওড়াই না কেন মহিলাদের উপর অত্যাচার হলে আমরা চোখ বন্ধ রাখতেই পছন্দ করি।
এবার প্রয়োজন #হাউউইলচেঞ্জ আন্দোলনের [সৌজন্যে: টুইটার]
পণ নির্যাতন, বাড়িতে বা কর্মক্ষেত্রে হেনস্তা, ধর্ষণ, যৌন্য নিগ্রহের মতো ঘটনার তথ্য সংকলিত করতে গিয়েই তো ন্যাশনাল ক্রাইম ব্যুরোর বার্ষিক রিপোর্টার খাতা মোটা হয়ে যায়। তাও এমন পরিস্থিতিতে যখন এই ঘটনাগুলোর সিংভাগ কোথাও লিপিবদ্ধ হয় না।
যতক্ষণ হন পর্যন্ত সমাজের সংখ্যাগরিষ্ঠদের মানসিকতার পরিবর্তন হচ্ছে ততদিন অবধি সমাজেরও পরিবর্তন হবে না।
নিউজরুমগুলিতে যে খবরগুলো রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করে সেই খবরগুলো কিন্তু আমাদের নিয়েই, আমাদের সমাজকে নিয়েই এবং আমাদের সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গিকে নিয়েই। যতক্ষণ না এই বিষয়গুলোর পরিবর্তন ঘটছে ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা হাউ উইল আই চেঞ্জ আন্দোলন প্রত্যক্ষ করতে পারব না।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে