মিটু: কর্মরত মহিলারা মুখ খুললেন, কিন্তু বাড়িতে নির্যাতনের শিকার শিশুদের কী হবে?
শিশু ভালো আর খারাপ স্পর্শের পার্থক্য না বুঝলে প্রতিবাদ করবে কী ভাবে?
- Total Shares
তনুশ্রী দত্ত #মিটু আন্দোলন সূত্রপাতের পর পরই গোটা দেশ জুড়ে অনেক মহিলা এই আন্দোলনে সামিল হয়েছেন, যাঁরা এতদিন নীরবতা পালন করছিলেন।
এই আন্দোলনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ধরণের মতামত উঠে আসছে এবং একটা জিনিস পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে যে এই ধরণের ঘটনা কার্যস্থলে এক প্রকার দৈনন্দিন ঘটনা হয়ে উঠেছে।
এই আন্দোলনের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে সংবাদমাধ্যমের জগতে ও বলিউডে। মিডিয়া অধিপতি থেকে শুরু করে গায়ক ও সঙ্গীত পরিচালক -- অনেকেরই নাম অভিযুক্তদের তালিকায় জায়গা করে নিয়েছে।
এঁদের মধ্যে হাতেগোনা কয়েকটি উল্লেখযোগ্য নাম -- এম জে আকবর, অলোক নাথ, অনু মালিক এবং সাজিদ খান -- যাঁদের বিরুদ্ধে মহিলা সহকর্মীরা অভিযোগ তুলেছেন যে তাঁরা সেই সহকর্মীদের কাছে কর্মস্থলকে 'নরকে' পরিণত করেছিলেন।
তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া নির্যাতনের কথা বলতে অনেকের তো আবার ১০ থেকে ২০ বছর সময় লেগে গিয়েছে। এঁদের অনেকেই সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁদের বিরুদ্ধে হওয়া নির্যাতনের কথা 'ফাঁস' করেছেন। আবার অনেকেই টেলিভিশন ও মুদ্রিত মাধ্যমে মুখ খোলার সাহস দেখিয়েছেন।
নির্যাতিতা মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিবারের সহায়তা একান্ত প্রয়োজনীয়। পরিবারের সদস্যদের উচিত তাঁদের বোঝানো যে চুপ করে থেকে কোনও সমাধান হবে না।
নির্যাতন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মুখ না খুলে নীরব থাকাটা আরও ভয়াবহ।
শিশুদের উপর যৌন নিগ্রহ হলে তারা কী বলছে সে কথা শুনতে হবে [সৌজন্য: টুইটার]
কোনও কোনও সময়ে তো পাঁচ বছরের শিশুও এমনকি তার চেয়ে কমবয়সীরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হয়। কিন্তু এত কম বয়সী শিশু তার অভিজ্ঞতার বিবরণ দেবে কী ভাবে?
দুর্ভাগ্যবশত, এ সব ক্ষেত্রে চোখের জল ফেলা ছাড়া আর কোনও গতি নেই।
আর এই অভিজ্ঞতার দুর্বিসহতা আরও বৃদ্ধি পায় যখন পরিবারে নিকট কেউ তাকে বোঝাবার চেষ্টা করে, "ভয় পেও না, এমন কিছুই হয়নি। মনে রেখো তুমি মেয়ে। মুখ খুললে তোমার জীবনই ধ্বংস হয়ে যেতে পারে।"
এখন প্রাপ্তবয়ষ্ক কিংবা একজন সেলিব্রিটি নিজের ইচ্ছেমতো সোশ্যাল মিডিয়ায় মুখ খুলতে পারেন, কিন্তু পারবারিক দ্বন্দ্বে আটকে পড়া একজন শিশুর কিছুই করার থাকে না।
চোখে স্বপ্ন নিয়ে একটা ভালো ভবিষ্যতের কথা ভেবে তারা ভয় ভয় বড় হয়। তাদের আত্মবিশ্বাস চিরজীবনের মতো শেষ হয়ে যায় আর তারা কোনও দিনও স্বভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে না। অনেকেই আবার আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে ওঠে।
তাই তো তাদের মুখ বন্ধ করে দেওয়া উচিত নয়। উল্টে তাদের অভিযোগ করার জন্য সাহস দেওয়া উচিত। তাদের বলা উচিত মুখ খুললে তাদের কথা বিশ্বাস করে নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিকৃতকাম কোনও পুরুষের শিকার হওয়া কাঠুয়ার মেয়েটির মতো আর একটি শিশুকেও আমরা কিছুতেই হারাতে চাই না।
দেশজুড়ে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে যেখানে বাড়ির কিশোরীদের নির্যাতিত হতে হয়েছে নিজের বাবা, কাকা, ভাই ও পারিবারিক বন্ধুদের হাতে। কর্মস্থলের ঘটনাগুলো প্রকাশ্যে এলেও এই ঘটনাগুলো অবশ্য এখনও প্রকাশ পায়নি।
প্রশ্ন হচ্ছে, এই সব নির্যাতিতাদের হয়ে কে মুখ খুলবেন?
অনেক ক্ষেত্রে এই নির্যাতিতাদের মায়েরাই মেয়েকে মুখ খুলতে নিষেধ করেন। মায়ের মনের আশঙ্কা, মুখ খুললে পরিবারের সম্মানহানি হতে পারে।
এক শ্রেণির পুরুষ এই ধরণের নির্যাতন করে থাকে কারণ এক হয় তারা অবসাদে ভুগছেন, নয়তো নিছকই মজার করার উদ্দেশ্যে, কিংবা শরীরের খিদে মেটাতে। এদের মধ্যে অনেকেই মানসিক রোগগ্রস্ত। যৌন নির্যাতনেই শিকার হয়ে দেশজুড়ে অনেক কিশোরীর জীবন তছনছ হয়ে গিয়েছে।
একজন বাচ্চা যদি 'ভালো স্পর্শ' আর 'খারাপ স্পর্শের' মধ্যে তফাৎটা না বুঝতে পারে তাহলে সে কী ভাবে নির্যাতনকারীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে? আপনি যদি মনে করে থাকেন যে যৌন নির্যাতন শুধুমাত্র কর্মক্ষেত্রেই হয় তাহলে আপনি বড় ভুল করছেন।
নির্যাতিত শিশুদের পাশে দাঁড়াবে কে [ছবি: রয়টার্স]
মেয়েদের রীতিমতো হুমকি দেওয়া হয় যে তাঁরা যদি পরিবারের কোনও সদস্যের হাতে নির্যাতিত হওয়ার খবর জমসমক্ষে নিয়ে আসেন তা হলে তাঁর কপালে বকুনি জুটতে পারে, তাঁকে বেদম প্রহার করা হতে পারে এমনকি তাঁকে খুনও পর্যন্ত করা হতে পারে। যে বিষয়টি এর চেয়েও বড় সমস্যা হল, এ সব ক্ষেত্রে নির্যাতিতার কথা কেউই বিশ্বাস করতে চান না।
তাহলে, তাঁদের হয়ে কথা বলবেন কে?
নির্যাতিতা মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিবারের সহায়তা একান্ত প্রয়োজনীয়। পরিবারের সদস্যদের উচিত তাদের বোঝানো যে চুপ থেকে কোনও সমাধান হবে না।
নির্যাতন নিয়ে আতঙ্কিত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে মুখ না খুলে নীরব থাকাটা আরও ভয়াবহ হতে পারে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে