মিটু আন্দোলনের প্রভাব দীর্ঘস্থায়ী নয়, বরঞ্চ তা ক্ষণস্থায়ী
আন্না হাজারের আন্দোলন বা নির্ভয়ার মতো লোকে এই কথাও দ্রুত ভুলে যাবে
- Total Shares
#মিটু আন্দোলনের জেরে যে খবরগুলো প্রকাশিত হচ্ছে শুধুমাত্র সেগুলোই নয়, মহিলাদের উপর যে কোনও হেনস্থা, নিগ্রহ ও আক্রমণের খবরকেই আমি ধিক্কার জানাচ্ছি।
তবে এই আন্দোলনের দৌলতে কয়েকটি ভালো জিনিস লক্ষ করা গেছে। এমজে আকবর-সহ সিনেমা এবং সংবাদ জগতের আরও বেশ কয়েকজন অভিযুক্তের নাম প্রকাশ্যে এসেছে।
কিন্তু এত কিছুর পরেও এই #মিটু আন্দোলনের প্রভাব অবশ্য সুদূরপ্রসারী নয়, বরঞ্চ বেশ ক্ষণস্থায়ী। কিছুদিন বাদেই মহিলাদের উপর যৌন নির্যাতন আবার শুরু হয়ে যাবে। আর, এবার এই নির্যাতনগুলো বেশ সুপরিকল্পিত ভাবে হবে যাতে ধরা পড়ে যাওয়ার আশঙ্কা না থাকে।
#মিটু-র সৌজন্যে অভিযুক্তদের নাম প্রকাশ্যে এসেছে [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]
আমাদের মতো একটি শোষণমূলক সমাজে মহিলাদের উপর যৌন নিগ্রহের ব্যাপারটি বেশ সহজাত। কারণ এই ধরণের সমাজে যে কোনও ধরণের জিনিস বা সম্পর্ক অতি সহজেই বিক্রয়যোগ্য পণ্য হয়ে ওঠে - যা দিয়ে বেচা-কেনা করা যায়। যাদের অর্থবল ও ক্ষমতাবল রয়েছে তাঁরা মহিলাদের শরীরকে একটি পণ্য হিসাবেই দেখেন, যে পণ্যটি তাঁদের সুখী করতে পারবে। আর, তাঁদের লক্ষ পূরণের জন্য তাঁরা নানান পন্থাও অবলম্বন করবেন - যেমন একজন উচ্চপদস্থ ব্যক্তি তাঁর মহিলা সহকর্মীদের চাকরি যাওয়ার বা পদোন্নতি আটকে দেওয়ার হুমকি দিতেই পারেন! বিশেষ করে যেখানে সেই কর্মীর চাকরির কোনও সুরক্ষা নেই। বর্তমান ভারতে বিভিন্ন শ্রেণীর লোকেদের মধ্যে সম্পদের এতটা তফাৎ রয়েছে যে যৌন নিগ্রহ বা হেনস্থা হওয়াটা যেন স্বাভাবিক ও অনিবার্য হয়ে পড়েছে। টাকা কথা বলে আর সেই টাকার জোরে যৌন নির্যাতন বা নিগ্রহ করা যেতেই পারে।
ভারতে নাগরিকদের অর্থনৈতিক অবস্থার বিশাল তারতম্য রয়েছে [ছবি: রয়টার্স]
আমরা যদি সত্যি সত্যি যৌন হেনস্থা বা নির্যাতন বন্ধ করতে চাই তাহলে সমাজ থেকে শোষণ কমাতে হবে। আর এটা সম্ভব যদি প্রতিটি মানুষের সম্পদের মধ্যে বৈষম্য কম করা যায়। কিন্তু আজকের ভারতে তা অসম্ভব।
তাই, #মিটু আন্দোলনে কোনও লাভ হবে না - সপ্তাহখানেক ধরে এ নিয়ে দেশজুড়ে উত্তাল চলবে, আবার সবকিছুই থিতিয়ে যাবে, আবার সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে যাবে। ঠিক যেমনটা আন্না হাজারের আন্দোলন বা নির্ভয়া ধর্ষণের ঘটনায় হয়েছিল।
ক্ষোভ থাকলেও, আন্দোলনের প্রভাব সুদূরপ্রসারী নয় [ছবি: রয়টার্স]
আমার মতে যৌন হেনস্থার অভিযোগগুলো গুরত্বপূর্ণ। কিন্তু বেকারত্ব, কৃষকদের হতাশা, উপযুক্ত স্বাস্থ্য ও শিক্ষা পরিষেবার অভাব, সংখ্যালঘুদের উপর আক্রমণ বা পেট্রল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধির মতো আরও অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলো নিয়ে এই মুহূর্তে দেশ জর্জরিত।
আমি মনে করি মহিলাদের উপর নির্যাতনকে দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হিসেবে দেখিয়ে দেশের আরও বড় বড় সমস্যাগুলোর থেকে নজর ঘোরানোর চেষ্টা চলছে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে