হলই বা ডায়াবেটিস আম-লিচু খেতে পারেন, তবে মেপে
বাচ্চাদের ফল দেওয়া সময় তাদের বয়স বুঝে ফলের পরিমাণ বেঁধে দিন
- Total Shares
গ্রীষ্মকালে মানে যেমন অসম্ভব গরমে হাঁসফাঁস অবস্থা হয়, তেমন এই গ্রীষ্ম আবার ফলেরও মাস। গ্রীষ্মকালে বাজার ছেয়ে থাকে বিভিন্ন ফলে যেমন আম, লিচু, কাঁঠাল বা তরমুজ। সব ফলেরই কিছু না কিছু উপকারিতা থাকে, আম ও লিচুতও রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। আমরা যখন আম-লিচু খাই তখন কিন্তু শুধুমাত্র ফল দুটির স্বাদের জন্যই খাই, এই দুই ফলের পুষ্টিগুণের কথা ভাবি না। আবার এই দুই ফল সম্বন্ধে আমাদের অনেক ভুল ধারনাও রয়েছে।
তাই এই মরসুমের এই দুটো ফল সম্বন্ধে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কথাই বলি এখানে। আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, কার্বোহাইড্রেড ও পটাশিয়াম রয়েছে। আমে বিটাক্যারোটিন, ভিটামিন ই এবং সেলেনিয়াম আছে, আমে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে বলে আম বেশি খেলে অনেক সময় পেটের সমস্যাও দেখা দিতে পারে।
আমে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি, কার্বোহাইড্রেট ও পটাশিয়াম রয়েছে
আম ও লিচু খুব মিষ্টি ফল বলে যাঁদের ডায়েবেটিস রয়েছে তাঁরা এই ফলটা খেতে পারবেন না, এই ধারণাটা কিন্তু একদম ভুল। তাঁরাও এই ফল খেতে পারেন কিন্তু খাওয়ার সময় একটু মেপে খান। এখানে একটা কথা বলে রাখি ডায়েবেটিস রোগীরা যখন আম বা লিচু খাবেন সেদিন আর অন্য কোনও ফল না খাওয়াই ভালো। বেশি পরিমাণে আম খেলে কিন্তু শর্করা বেড়ে যাওয়ার একটা প্রবণতা থেকে যায়।
তবে শুধু আম-লিচু কেন, কোনও খাবারই মাত্রাতিরিক্ত খাওয়া ঠিক নয়। তাই লিচু কিংবা আম অতিরিক্ত খেলে তারও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। অতিরিক্ত মাত্রায় আম খেলে তা দ্রুত ওজন বাড়িয়ে দিতে পারে।
কার্বাইডে পাকানো আম এড়িয়ে চলা উচিৎ
অনেকেই আমাকে বলেন তাঁদের নাকি আম খেলে ফোঁড়া হয়। আম খাওয়ার জন্য যে ফোঁড়া হয় তার কিন্তু তেমন কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি পাওয়া যায় না। আগেকার দিনে মা-ঠাকুমার আমের বোঁটা বা মাথাটা কেটে জলে ভিজিয়ে রাখতেন যাতে কষ বেরিয়ে যেতে পারে ও ফোঁড়া না হয়। টোটকা হিসেবে এটা করা যেতে পারে। অনেক সময় দেখা গেছে যে আমের যে আঠা থাকে তার থেকে অনেকের ত্বকের সমস্যা যেমন চুলকানি হচ্ছে, সে ক্ষত্রে আঠা চামড়ায় লাগতে দেবেন না।
অনেক পরিমাণে আম বা লিচু খেলে হজমের সমস্যা বা পেটে ব্যথা দেখা দিতে পারে।
বাজারে আমের জোগান যাতে অনেকদিন থাকে তাই প্রাকৃতিক উপায়ে আম পাকতে না দিয়ে আগেই ক্যালসিয়াম কার্বাইড দিয়ে পাকানো শুরু হয়ে যায়। এই ব্যাপারটা নিয়ে বিশেষ মাথা ঘামিয়ে তেমন একটা লাভ আছে বলে আমার মনে হয় না কারণ আমরা সবাই কৃত্রিম ভাবে পাকানো ফলই খেয়ে থাকি। এখন যেমন অনেকেই গাছপাকা ফল কিংবা শাক-সবজি খান সেটা নিঃসন্দেহে ভালো তবে সেই সব ফল বা তরিতরকারির দামটাও যেমন অনেকটাই বেশি এর উপকারিতাও অনেক বেশি। আমরা শহরের বাসিন্দারা যখন বাজারে যাই তখন আমরা গাছপাকা বা কৃত্রিম উপায় পাকানো খাবাররের মধ্যে পার্থক্য করতে পারি না। তাই বাজার থেকে ফলমূল বা শাকসবজি এনে ভালো করে ধুয়ে নিন এবং কিছুক্ষণ জলে ভিজিয়ে রেখে খান।
সারা বছর আম বা অন্যান্য কোনও ফল দিয়ে বানানো বিভিন্ন হেলথ ড্রিঙ্ক বা পানীয় বাজারে পাওয়া যায়। খুব দামি পানীয় যাতে সুগারফ্রি বা শর্করাবিহীন বলে লেখা থাকে, সেগুলো খেতে পারেন কারণ সে গুলোর মধ্যে কিছুটা হলেও আসল ফলের নির্যাস থাকে।
এই ফলে শর্করার পরিমাণ অনেকটা থাকে বলে যাঁদের ডায়েবেটিস রয়েছে তাঁদের সীমিত পরিমাণে লিচু খাওয়া বাঞ্ছনীয়
অতিরিক্ত লিচুও খাওয়াটাও কোনও কাজের কথা নয়, তাতে পেটে বিভিন্ন অসুবিধা হতে পারে ও হজমের সমস্যা হতে পারে। লিচুতে শর্করার পরিমাণ অনেকটা বেশি থাকে বলে যাঁদের ডায়াবেটিস রয়েছে তাঁদের সীমিত পরিমাণে লিচু খাওয়া উচিৎ। লিচুতে ক্যালরিও অনেক বেশি। তবে ফলটিতে পটাসিয়াম, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও ভিটামিন সি রয়েছে প্রচুর। তবে অনেক সময় অতিরিক্ত লিচু খেলে রক্তচাপ কম হতে পারে।
যাঁরা অ্যালার্জিতে ভোগেন তাঁদের ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েই আম বা লিচু খাওয়া উচিৎ। বাইরের কাটা ফল খাবেন না, গোটা ফল কিনে কেটে খান। চার দিকে এখন নিপা ভাইরাস নিয়ে হইচই চলছে, তাই মোটা খোলা রয়েছে ফল খান যেমন তরমুজ, আনারস, বা মুসম্বি প্রভৃতি।
লিচুতে ক্যালোরিও অনেক বেশি
যদি দেখেন ফলটি কোনও জায়গায় খোবলানো রয়েছে তা হলে সেই ফলটি খাবেন না। ভালো করে ধুয়ে নিয়ে গোটা ফল খান। বাচ্চাদের ফল দেওয়া সময় তাদের বয়স বুঝে ফলের পরিমাণ বেঁধে দিন, না হলে পেট খারাপ বা পেটে ব্যথা হতে পারে।
একদম শেষে একটা কথাই বলব আম বা লিচু খুবই সুস্বাদু দুটি ফল যা সারাবছর মেলে না, তাই মনের আনন্দে আম-লিচু খান, শুধু স্বাস্থ্যোর কথাটা মাথায় রাখুন।