অন্য রাজ্যের স্কুলগুলোতে বেতন নিয়ন্ত্রণ হলেও পশ্চিমবঙ্গে এতদিনেও তা করা যায়নি
প্রথম সারির স্কুলের ক্ষেত্রে বেতন অন্যান্য স্কুলের চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি হবে
- Total Shares
বেসরকারি স্কুলগুলো যাতে ছাত্রছাত্রীদের থেকে আর ইচ্ছে মতো বেতন বা 'টিউশন ফি' নিতে না পারে সেই নিয়ে তৎপর হল রাজ্য স্কুলশিক্ষা দপ্তর। নানা সময় বিভিন্ন শিক্ষা সম্পর্কিত বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয় তাঁর ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাই এবার তাঁর প্রস্তাব মতো স্কুলশিক্ষা বিভাগ বিষয়টি নিয়ে বিবেচনা করছে।
যদিও এখনও খসড়া প্রস্তাবের স্তরেই রয়েছে।
নতুন নিয়মটি বলবৎ হলে স্কুলের ফি নির্ধারণ করার সময় শিক্ষাদপ্তরকে বেশ কয়েকটি বিষয় বিবেচনা করতে হবে। যেমন স্কুলটি কোন এলাকায় অবস্থিত, কতজন ছাত্রছাত্রী সেই স্কুলে পড়াশোনা করে, শিক্ষক-শিক্ষিকার মোট সংখ্যা কত এবং তাঁদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ঠিক কতখানি, বিভিন্ন খাতে স্কুলটির কত খরচ, স্কুলটিতে খেলার মাঠ আছে কি না প্রভৃতি। বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তির সময় যে ফি নেওয়া হয় তাতেও লাগাম দেওয়া হবে। স্কুল ডোনেশন নেওয়ার অঙ্কও বেঁধে দেওয়া হতে পারে।
এগুলো বিবেচনা করে বেশ কয়েকটি স্তরে স্কুলগুলিকে নিয়ে আসা হবে। প্রথম সারির স্কুলগুলির ক্ষেত্রে স্কুলের বেতন অন্যান্য স্তরের স্কুলগুলোর চেয়ে তুলনামূলক ভাবে বেশি হবে। বিভিন্ন শ্রেণীতে ভর্তির সময় যে ফি নেওয়া হয় তাতেও লাগাম দেওয়া হবে।
এই বিষয় ২০০২ সালে টিএমএ পাই ফাউন্ডেশন বনাম কর্নাটক সরকারের একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল যে শহরাঞ্চলের অবিভাবকরা তাঁদের সন্তানকে ইংরেজি মিডিয়ামে ভালো শিক্ষার জন্য বিভিন্ন বেসরকারি স্কুলে ভর্তি করান। এই সুযোগ নিয়ে বহু বেসরকারি স্কুল চড়া টিউশন ফি নেয়।
অভিযোগ বিভিন্ন সময় নানা খাতে বেসরকারি স্কুলগুলি নিজেদের ইচ্ছে মতো বেতন ঠিক করে। স্কুলগুলিতে টিউশন ফির নামে বা অন্যান্য খাতে যে অস্বাভাবিক টাকা নেওয়া হয় তার ফলে অবিভাবকদের উপরে চাপ পড়ে। যত বড় স্কুল বা যত অভিজাত স্কুল তার টিউশন ফি ও তত বেশি। শুধু তাই নয় বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল নানা সময় নানা কারণে অবিভাবকদের থেকে মোটা টাকা নিয়ে থাকেন, কখনও স্কুলটির উন্নয়নের জন্য, কোনও বা স্কুল কক্ষে শীতাতপ যন্ত্র বসানো হবে তাই কিংবা স্কুলের বইখাতা এবং ইউনিফর্ম কেনার জন্য।
বিভিন্ন সময় নানা খাতে বেসরকারি স্কুলগুলি নিজেদের ইচ্ছে মতো বেতন ঠিক করে
হার্টলি হায়ার সেকেন্ডারি হাই স্কুলের অধ্যক্ষা মৈত্রেয়ী দাস বলেন, "সব বেসরকারি স্কুল সমান নয়। তাই স্কুলের ফি'র নির্দিষ্টি কোনও অঙ্ক বেঁধে দেওয়াটা বোধয় কাজের কথা নয়। কারণ শহরতলির একটি স্কুলের বেতন কখনওই এমন একটি স্কুলের সমান হতে পারে না যে স্কুলটি মহানগরের বুকে অবস্থিত এবং সুযোগসুবিধাও অনেক বেশি। তবে স্কুল কর্তৃপক্ষকে স্কুলটির শিক্ষার মান এবং স্কুলের ফলাফলের দিকেও নজর দিতে হবে।"
বহু আইসিএসসি ও সিবিএসই বোর্ডের অধীনে থাকা স্কুল থেকে সরাসরি সে সব কিনতে হয় আবার কখনও ঘুরপথে স্কুলের নির্ধারিত দোকান থেকে কিনতে হয়। পরিকাঠামো এবং বিভিন্ন জিনিসের নামে তাঁরা বিপুল টাকা নিচ্ছে কিন্তু অনেক সময় সেই সব স্কুলের শিক্ষার মানের ক্ষেত্রে একটা বিরাট প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে। কারণ সেই সব স্কুলে ভর্তি করাবার পরেও পড়ুয়াদের প্রাইভেট টিউশন নিতে হচ্ছে।
তাই অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধির পাশাপাশি অন্যান্য ফি বৃদ্ধিকে কেন্দ্র করে বেশ কয়েকটি স্কুলের অবিভাবকরা বিক্ষোভও দেখিয়েছেন।
এন্টালির লোরেটো কনভেন্টের অধ্যক্ষা জেসিকা গোমস বলেন, "স্কুলের বেতনের পাশাপাশি আমরা সব নজর রাখি ছাত্রছাত্রীরদের যাতে সবচেয়ে বেশি উপকৃত হতে পারে। একই সঙ্গে শিক্ষার মান বজায় রাখতেও আমরা বদ্ধপরিকর। তাই এই বিষয়ে সরকার নতুন কী পদক্ষেপ করে সেই দিকেই তাকিয়ে রইলাম আপাতত।"
যদিও শিক্ষা মহলের একাংশ মনে করছেন যে নিয়মটি কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত কিছু বললে তা শুধু মাত্র অনুমানের উপর ভিত্তি করেই কথা বলা হবে। পাশাপাশি আরেকাংশ মনে করছেন সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সব কিছুই দাম বাড়ছে তাই শিক্ষার বিভিন্ন খাতেও খরচ বেড়েছে। তাই পরিকাঠামো, সুস্থ শিক্ষাদানের পরিবেশ এবং প্রযুক্তির সঙ্গে তালে তাল মিলিয়ে ছাত্রছাত্রদের শিক্ষা প্রদান করতে হলে একটা নির্ধারিত একটি টাকার অঙ্ক অনেক ক্ষত্রেই মেনে চলা যায় না। তবে তাঁরা এও মন করেন যে শিক্ষার নামে যা ইচ্ছে অর্থ দাবি করা কখনওই ঠিক কথা নয়। তা সামাজিক শোষণেরই নামান্তর।