শহরের কোনও কোনও অংশ স্বাভাবিক হলেও সমস্যা রয়েছে
ভাঙা সেতু নিয়ে সিদ্ধান্ত হয়নি, উদ্বেগে স্কুলপড়ুয়া ও অফিসযাত্রীরা
- Total Shares
গত মঙ্গলবার মাঝেরহাট সেতু ভেঙে পড়ার পর থেকেই কলকাতা শহর জুড়ে শুরু হয়ে যায় ব্যাপক যানজট, যা ছড়িয়ে পড়ে শহরতলিতেও। এর জেরে বহু মানুষ, বিশেষ করে অফিস যাত্রীদের বীষণ ভাবে ভুগতে হয়, সমস্যায় পড়ে স্কুল পড়ুয়ারাও। অনেকেই রাস্তায় আটকে পড়ে শেষ পর্যন্ত স্কুলে হাজির হতে পারেনি। শনি-রবিবার পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল, তবে সোমবার কিছুটা সমস্যা হতে পারে বলে আশঙ্কা।
সেতু ভেঙে পড়ার মোটামুটি এক ঘন্টার মধ্যেই শহরের চেনা ছবিটা একেবারে বদলে যায়। তারাতলা এলাকা দিয়ে যানবাহন চলাচল তো বন্ধই করে দেওয়া হয়। বেহালা, তারাতলা, নিউ আলিপুর, চেতলা, কালীঘাট, রাসবিহারী ও হাজরা অন্যদিকে গড়িয়াহাট থেকে সার্ভে পার্ক পর্যন্ত এবং টালিগঞ্জ ও প্রিন্স আনওয়ার শাহ রোড পর্যন্ত ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।
ঘটনাটা এতটাই আকস্মিক যে ট্র্যাফিক পুলিশের তরফ থেকে পুরো পরিস্থিতিকে সামাল দেওয়া দুষ্কর হয়ে ওঠে। একদিকে উদ্ধারকাজ, অন্যদিকে যানজট।
খুব শিগগিরই যে এই দুর্ভোগ মিটবে এমনটাও মনে হয় না
বহু গাড়িকে ঘুর পথে গন্তব্যে পৌঁছতে হয়, এখনও হচ্ছে। তাতে যে সব রাস্তার উপর চাপ বাড়ছে, সেখনে যানজট তৈরি হচ্ছে। ছোট রাস্তাগুলি ধরার চেষ্টা করছে চারচাকাগুলি, সকলেই ওই সব রাস্তা ধরতে যাওয়ায় সেখানেও যানজট। ফলে ব্যস্ত সময়ে শহরের কোনও কোনও অংশ পুরোপুরি থমকে যাচ্ছে। প্রধানসড়কে তার জের একবার এসে পৌঁছালেই একের পর এক রাস্তায় যানজট বাধতে শুরু করে দিচ্ছে। শহরের আয়তন ও জনসংখ্যার তুলনায় রাস্তার দৈর্ঘ্য কম এবং রাস্তার তুলনায় গাড়ির সংখ্যা অনেকটাই বেশি।
একটি বহুজাতিক তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থার রাজারহাট অফিসে কর্মরত সৌমিত্র দাস ঘটনার দিন এক ঘন্টায় রাজারহাটের সেক্টর ৫ থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত পৌঁছে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করেছিলেন, তবে ভোগান্তি শুরু হল গোলপার্কের পর থেকে। তাঁর বাড়ি মুদিয়ালিতে। গোলপার্ক থেকে মুদিয়ালি পর্যন্ত পৌঁছতে সময় লেগে যায় প্রায় দু'ঘন্টার কাছাকাছি। তিনি বলেন, “পরের দিন সকাল এগারোটা নাগাদ আমি অফিসার জন্য বের হই তবে সেদিন রাস্তা মোটামুটি ফাঁকাই ছিল। আমার মনে হয় যেহেতু বেহালা অঞ্চলের বহু মানুষ সেদিন অফিসমুখো হননি তাই গাড়িঘোড়ার চাপটা রাস্তায় একটু কমই ছিল।”
বিকেলের পর থেকে রাসবিহারী থেকে চেতলামুখী চারচাকা ও তার চেয়ে বড় গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়।
বিকেলের পর থেকে রাসবিহারী থেকে চেতলামুখী চারচাকা ও তার চেয়ে বড় গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়
অভিরূপ গুহর অফিস রবীন্দ্র সদন এলাকায়। তিনিও পরের দিন অফিস আসার ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা জানান। অভিরূপ বলেন, "আমার বাড়ি নিউ আলিপুরের বুড়োশিবতলা এলাকায়। বুঝতেই পারছেন এই এলাকায় বাড়ি হওয়ার ফলে আমার ভোগান্তির আর শেষ ছিল না। পরের দিন চেতলা হয়ে গোপালনগর, সেখানথেকে হয়ে লালবাতি হয়ে চিড়িয়াখানার সামনে দিয়ে রবীন্দ্রসদন পৌঁছতে সময় লাগে গিয়েছিল দু’ঘন্টা কুড়ি মিনিটের কাছাকাছি।”
এলাকাবাসীর ভোগান্তির সৃষ্টি করে এবং ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হওয়ার পর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে যে চেতলার খালপাড় ধরে যে বাজার বসে সেটিকে সরিয়ে নিয়ে ব্রিজের নীচের দু'দিকে যে সরু রাস্তা গেছে সেখানে বসানো হবে। যে বাসগুলো ডাফরিন রোড দিয়ে যাওয়ার কথা সেগুলিকে আলিপুরের দিকে না পাঠিয়ে খিদিরপুর দিয়ে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়।
বিভিন্ন অটোরিকশা স্ট্যান্ডে লাইন দীর্ঘতর হচ্ছিল, একই অবস্থা বাস স্ট্যান্ডেও। সময়মতো নিজের গন্তব্যে না পৌঁছতে পারার ভয় যে শুধু পথ যাত্রীদের ছিল এমনটা নয় নাকাল হতে হচ্ছে ট্রেন যাত্রীদেরও, যদিও তার কারণ ভিন্ন।
এলাকাবাসীর ভোগান্তির সৃষ্টি করে
সামনেই পুজো আর এই ব্রিজের ভাঙা অংশ সরানোর কাজ কবে শেষ হবে সেটা এখনও স্পষ্ট নয়। তাই খুব শিগগিরই যে এই দুর্ভোগ মিটবে এমনটাও মনে হয় না।
প্রথম দিন রাস্তায় গাড়ির চাপ ছিল, অন্যদিকে পুলিশ সাধ্যমতো চেষ্টা করলেও বেশ কিছুটা পরিকল্পনার অভাব দেখা গিয়েছিল। কারণ যে সব রাস্তা ওয়ানওয়ে নয়, অর্থাৎ দুই দিক দিয়েই গাড়ি চলাচল করতে পারত, সেই রকম বেশ কয়েকটি রাস্তা নো এন্ট্রি করে দেওয়া হয়েছিল বা একদিক দিয়ে গাড়ি চলাচল করার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। যেমন গোপালনগর ও কালীঘাট ব্রিজগামী গাড়িগুলির মধ্যে যেগুলি চেতলাহাট রোড দিয়ে যাতায়াত করে, সেই দিকের ব্রিজ রোডে গাড়ি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে গোপালনগরের দিকের রাস্তাটিতে গাড়ি আটকে থাকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত।
ওই স্থানে একটি নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে নাকি আগের সেতুকেই পুনর্নির্মাণ করা হবে সে বিষয় এখনও পরিষ্কার কিছু জানা যায়নি।
এই দুর্ভোগ যে আর কতদিন চলবে সেটা এখন অফিস যাত্রীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে।