মিশন শক্তি: মহাকাশে ভারতের উপগ্রহ হামলা পরমাণু পরীক্ষার মতোই গুরুত্বপূর্ণ
শত্রুদের কাছে স্পষ্ট বার্তা: তারা যেন মহাকাশের লক্ষ্মণরেখা অতিক্রমের ধৃষ্টতা না দেখায়
- Total Shares
ঠিক সকাল ১১:০৯ মিনিটে ডক্টর এপিজে আবদুল কালাম দ্বীপ থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়েছিল। আর, এর পর, মাত্র ১৮০ সেকেন্ডের মধ্যেই ভারত সেই এলিট ক্লাবের সদস্য হয়ে গেল যেই ক্লাবটির সদস্য দেশগুলো মহাকাশে উপগ্রহ ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে। এখনও অবধি শুধুমাত্র তিনটি দেশ - মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া ও চিন - মহাকাশে উপগ্রহ ধ্বংস করার ক্ষমতা দেখাতে পেরেছে।
মহাকাশে স্যাটেলাইট ধ্বংস করে ভারত এলিট ক্লাবের সদস্য হল [ছবি: এএনআই]
ডিফেন্স রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশনের (ডিআরডিও) প্রাক্তন অধিকর্তা ডক্টর ভি কে সারস্বত এই প্রকল্পটিতে পুরোভাগে ছিলেন। তিনি জানিয়েছেন, এই কর্মকাণ্ডটি পরমাণু পরীক্ষার মতোই গুরুত্বপূর্ণ - স্থল, জল ও আকাশের পর মহাকাশে যুদ্ধের কৌশলও এবার রপ্ত করে ফেলল ভারত। ইসরোর প্রাক্তন অধিকর্তা জি মাধবন নায়ারও এই কর্মকাণ্ডকে 'ঐতিহাসিক' আখ্যা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে এই 'সাহসী সিদ্ধান্তের' জন্য সাধুবাদ জানিয়েছেন।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একটি টুইট করে গোটা দেশকে বেশ উদ্বেগের মধ্যে রেখেছিলেন:
मेरे प्यारे देशवासियों, आज सवेरे लगभग 11.45 - 12.00 बजे मैं एक महत्वपूर्ण संदेश लेकर आप के बीच आऊँगा। I would be addressing the nation at around 11:45 AM - 12.00 noon with an important message. Do watch the address on television, radio or social media.
— Chowkidar Narendra Modi (@narendramodi) March 27, 2019
শেষ পর্যন্ত তিনি ১২:২৪ মিনিটে উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের সফল উৎক্ষেপণের খবরটি ঘোষণা করলেন।
An important message to the nation. Watch. https://t.co/0LEOATgOOQ
— Chowkidar Narendra Modi (@narendramodi) March 27, 2019
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী জানিয়েছেন, পরবর্তী প্রজন্মের উপর এই সাফল্য ঐতিহাসিক প্রভাব ফেলবে।
"প্রতিটি দেশেরই এমন কিছু মুহূর্ত আসে যা ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য আক্ষরিক অর্থে ঐতিহাসিক এবং যা নিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্ম গর্ববোধ করতে পারে। সে রকম একটি মুহূর্ত আজ এসেছিল। সাফল্যের সঙ্গে উপগ্রহ বিধ্বংসী (অ্যাস্যাট) ক্ষেপণাস্ত্র উৎপেক্ষন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। #মিশনশক্তি সফল হওয়ার জন্য সকলকে অভিনন্দন।"
বিজ্ঞানের জগতে এটি ভারতের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ, বিশেষ করে পুরো প্রক্রিয়াটিই যেখানে দেশজ।
ডক্টর সারস্বত জানিয়েছেন, "এই কর্মকাণ্ডটি শুধুমাত্র দেশের জন্য নয়। এই কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমরা মহাকাশে ভারতের ক্ষমতা প্রমাণ করতে পারলাম। পৃথিবীর বৃত্তে ভাসমান একটি উপগ্রহ ৭,০০০ থেকে ৮,০০০ মিটার/সেকেন্ড গতিতে প্রদক্ষিণ করে। এই গতিতে প্রদক্ষিণ করা একটি উপগ্রহকে আঘাত করে ধ্বংস করার জন্য আসাধারণ বৈজ্ঞানিক ক্ষমতা প্রয়োজন। আর আমরা তা অর্জন করতে পেরেছি।"
ভারত যে মাত্র তিন মিনিটের মধ্যে যে কোনও 'শত্রু' উপগ্রহকে ধ্বংস করে দিতে পারে তা এই প্রদর্শনে দেখানো হল।
সারস্বত জানালেন, "এই প্রদর্শনে আমরা ৩০০ কিলোমিটার দূরে মহাকাশে ভাসমান একটি উপগ্রহকে ধ্বংস করেছি। কিন্তু আমরা আরও দূরের উপগ্রহকেও ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখি। অগ্নি ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার মাধ্যমে প্রয়োজন পড়লে আমরা ২,০০০ কিলোমিটার বাইরের কোনও উপগ্রহকেও ধ্বংস করে দিতে পারি।"
এখানে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য লক্ষ করা যাচ্ছে - ভারত এখন আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও (আইসিবিএম) ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে।
ভারত এখন আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও (আইসিবিএম) ধ্বংস করে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে [সৌজন্যে: টুইটার]
প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্র জানাচ্ছেন, "কোনও আন্তর্মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রকে সনাক্ত করে সেটিকে ধ্বংস করে দেওয়ার জন্যই এই পরীক্ষাটি সফল ভাবে অনুষ্ঠিত করা হয়েছে। এই প্রযুক্তি যারা ব্যবহার করবে (সেনাবাহিনী) তারাও এই প্রযুক্তির দরাজ প্রশংসাপত্র দিয়েছে।"
যে কোনও পরমাণু অস্ত্রের মতোই একটি উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও মূলত 'ভয়' দেখানোর কাজে ব্যবহার করা হয়। একটি দেশের কাছে যদি উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র থাকা মানে 'শত্রুদেরকে' সাবধান করা - মহাকাশের লক্ষ্মণরেখা পেরোনোর ধৃষ্টতা যেন তারা না দেখায়।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এই প্রথমবার ভারতের কৌশলগত ক্ষমতার কথা ঘোষণা করলেন তা নয়। ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে তিনি ভারতের তৈরি প্রথম পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ (নিউক্লিয়ার সাবমেরিন) আইএনএস অরিহন্তের প্রথম সফল ডেটারেন্স পেট্রোল সম্পন্ন হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন।
ভারতের তৈরি প্রথম পরমাণু শক্তিচালিত ডুবোজাহাজ আইএনএস অরিহন্ত, প্রধানমন্ত্রী অরিহন্তের প্রথম ডেটারেন্স পেট্রোল সম্পন্ন হওয়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন [ছবি: রয়টার্স]
শুধুমাত্র প্রকল্প শক্তির প্রদর্শন করা নয়, ভারত সামরিক শক্তিরও ব্যবহার করে দেখিয়েছে - বালাকোটের এয়ার স্ট্রাইক ও উরির সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের মাধ্যমে। বিদেশ সচিব বিজয় গোখেল বেশ পরিষ্কার ভাবে জানিয়ে দিয়েছিলেন, জৈশ-ই-মহম্মদ জঙ্গি শিবিরের উপর হামলা একটি স্বতঃপ্রণোদিত হামলা ছিল।
এর ফলে, পাকিস্তানের মদত-পুষ্ঠ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের তরফ থেকে একটি কড়া বার্তা দেওয়া সম্ভব হয়েছিল - বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার বদলা নয়। সন্ত্রাসবাদ বন্ধ করার উদ্দেশ্যে এটি একটি স্বতঃপ্রণোদিত হামলা। একই ভাবে উরি হামলার পরবর্তী সার্জিক্যাল স্ট্রাইককেও স্বতঃপ্রণোদিত বলা হয়েছিল।
উরি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক, বালাকোট এয়ার স্ট্রাইক এবং এবার উপগ্রহ বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ - দেশের 'শত্রুদের' কাছে দেওয়াল লিখনটা বেশ পরিষ্কার।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে