গরম কালে শুধু শরীর ঠান্ডা রাখতেই নয়, পেশির ক্ষয় রোধ করতেও লাউ খান
গোটা খান বা রস করে লাউয়ের অনেক পুষ্টিগুণ রয়েছে
- Total Shares
আমি লাউ খুব ভালোবাসি তাই গত সপ্তাহে আমি প্রচুর পরিমাণে লাউ খেলাম। মধ্যাহ্নভোজে ছিল লাউ বা দুধি। অনেকটা বোতলের মতো দেখতে বলে দুধিকে ইংরেজিতে বটেল গর্ড বলা হয়।
আর লাউ দিয়ে তৈরি বিশেষ এই খাদ্য তালিকায় ছিল লাউ দিয়ে ছোলার ডাল, লাউয়ের ঠান্ডা রায়তা এবং লাউয়ের খোসা আর অঙ্কুরিত ছোলার একটা তরকারি। এই আনাজটি খুব একটা দর না পেলেও লাউ আমার খুব প্রিয়। কেন? যদিও লাউয়ের অনেক পুষ্টিগুণ আছে কিন্তু লাউয়ের সুন্দর গন্ধ, মিষ্টি স্বাদটা ও তার বিভিন্ন গুণাগুণার জন্য লাউ আমার প্রিয়।
প্রথমত, লাউ একটি গরমের সবজি যাতে প্রচুর পরিমাণে জল থাকে (৯৬ শতাংশ), তাই খুব ঠান্ডা। তা ছাড়া এতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম রয়েছে যা আমাদের শরীরের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে ও শরীরের ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে।
লাউ ক্লান্তি দূর করে এবং গরমে শরীরকে ঠান্ডা ও সতেজ করে। গরমকালে আমরা খুব ঘামি বলে আমাদের শরীর থেকে জলের সঙ্গে ইলেক্ট্রোলাইট বেরিয়ে যায় তাই লাউ খেলে ক্লান্তি দূর হয়। লাউ একটা খুব ভালো ডিটক্সিফায়ার যা নাক থেকে রক্ত ক্ষরণ বন্ধ করে ও ত্বকে কোনও রকম ফুসকুড়ি বা আলসার হতে দেয় না। শরীর থেকে বিভিন্ন বাজে ও ক্ষতিকর পদার্থ সরিয়ে দিতে সহায়তা করে ডিটক্সিফায়ার।
আস্ত না খেয়ে এই সবজিটি রস করে খান
লাউয়ে রয়েছে অনেক প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও খনিজ যেমন ভিটামিন সি, ভিটামিন বি, ভিটামিন কে, ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, আয়রন,ফোলেট ও ম্যাঙ্গানিজ। আমরা অনেকেই এটা হয়ত জানি না যে লাউতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি রয়েছে। ২৫০ গ্রাম লাউ থেকে আমরা ২৫ এমজি ভিটামিন সি পাই, আমাদের সারা দিনে যতখানি ভিটামিন সি লাগে তার প্রায় অর্ধেক।
ভিটামিন সি-তে যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে সেটা আমাদের শরীরের কোষকে ক্ষতি হওয়া থেকে রোধ করে, রক্তে কোলেস্টরলের মাত্রা ঠিক রাখে, মস্তিষ্ক সচল রাখে এবং শরীরে কোলাজেন উৎপাদন করে। কোলাজেন একটি প্রোটিন যা আমাদের শরীরের টিসুকে শক্তিশালী বানায়।
লাউ থেকে আমরা যে ভিটামিন সি এবং দস্তা পাই তা ত্বকের অকাল বার্ধক্য ও কুঁচকে যাওয়াকে রোধ করতে সাহায্য করে। লাউয়ে থাকে ভিটামিন বি যা চুলের অকালপক্ক্যতা রোধ করায় কার্যকরী। দস্তা আমাদের স্নায়ু ভালো রাখে ও সর্দি, কাশি ও জ্বর হতে দেয় না।
যেহেতু লাউ খুব সহজে হজম হয়ে যায় তাই গরমকালে যখন আমাদের পাচনতন্ত্র একটু দুর্বল থাকে তখন লাউ খেলে তা খুব সহজেই হজম হয় যায়। লাউয়ে দ্রবণীয় ও অদ্রবণীয় তন্তু বলে সবজিটি হজমে সহায়তা করে। তাই লাউ খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়, গ্যাস-অম্বল দূর করতে সাহায্য করে লাউ ও অর্শ সারায়। গা গোলানো ও বমি ভাব দূর করে লাউ। লাউয়ে জল ও তন্তুর মাত্রা বেশি থাকে বলে এটা আমাদের পাচনতন্ত্র ও অন্ত্র ঠিক রাখে।
লাউ অতিরিক্ত পিত্ত বেরোনো বন্ধ করে বলে বদহজম কম হয়।
লাউ খেলে ওজন কমে। ১৫ ক্যালরি থাকে ১০০ গ্রাম লাউয়ে। এছাড়াও লাউয়ে ভিটামিন, খনিজ ও পুষ্টিকর ফাইবার থাকে বলে আমাদের শরীর যথেষ্ট পুষ্টি পায় ও অসময় খাবার প্রবণতা বা ইচ্ছে দূর করে। লাউয়ে থাকা ভিটামিন কে বিপাকে সহায়তা করে।
লাউ দিয়ে ছোলার ডাল স্বাদেও ভালো এবং উপকারি
যকৃৎ ভালো রাখে লাউ। এ যুগে যখন আমরা অনেক ধরণের ক্ষতিকর খাবারদাবার খাই তখন যকৃৎ সুস্থ রাখা খুব দরকার। আয়ুর্বেদের মতে লাউ যকৃৎ ভালো রাখে এবং যকৃতের ফোলা রোধ করে।
অনেককেই হয়ত বিশ্বাস করবেন না যে লাউ শরীরকে ঠান্ডা করে ও আরাম দেয়। লাউয়ে কোলিন নামে একটি নিউরোট্রান্সমিটার রয়েছে যা মস্তিস্ক সতেজ রাখে তাই মানসিক অস্থিরতা, বিষণ্ণতা ও অন্যান্য কোনও মানসিক চঞ্চলতা হয় না। মস্তিস্ক সতেজ রাখতে ও মনমেজাজ ভালো রাখতে লাউয়ের মতো কমদামি একটা সবজির তুলনা হয়ে না।
রস করে খান!
রান্না না করে এই সবজিটি রস করে খান। লাউয়ের রস বানানো এতটা সহজ বলে এই সবজির রস আরও সহজেই পাওয়া যায়। লাউয়ের রস সবাই খেতে পারেন, বিশেষ করে যাঁরা ডায়াবেটিসে ভোগেন তাঁদের জন্য তো লাউয়ের রস খুব উপকারী কারণ এটি রক্তে শর্করার পরিমাণ কম করে ও রক্তচাপের ভারসাম্য ঠিক থাকে।
দৈহিক পরিশ্রমের পর লাউয়ের রস খেলে উপকার হয়
কী ভাবে বানাবেন
লাউয়ের ছাল ছাড়িয়ে টুকরো করে কেটে ব্লেন্ডারে দিয়ে রস করে নিন। এবার এর সঙ্গে একটু গোলমরিচ,পরিমাণ মতো নুন ও পুদিনা পাতা মিশিয়ে নিন। এর সঙ্গে চা-চামচের এক চামচ আদাবাটা যোগ করুন। শেষ কয়েক ফোঁটা লেবুর রস দিয়ে খান।
দৈহিক পরিশ্রমের পর লাউয়ের রস খেলে উপকার হয়। কারণ কোনও দৈহিক পরিশ্রমের পর আমাদের শরীরে গ্লুকোস ও কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কম হয়ে যায় সেটাকে আবার ঠিক করতে সাহায্য করে। এছাড়া শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ফেরায় লাউ।
শরীরে ইলেক্ট্রোলাইট ফেরায় লাউ
বটল গর্ড ও আদা একসঙ্গে রস করে খেলে শরীরের পেশির ক্ষয় রোধ করে ও পেশি ভালো রাখে, কারণ এই রসে পটাসিয়াম ও অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীরের পেশির পুষ্টি জোগায় ও আরাম দেয়। তাই লাউয়ের মরসুমে সপ্তাহে দুই থেকে তিনবার লাউ খাওয়া খুব উপকারি।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন