সল্টলেক-রাজারহাট-নিউ টাউনে ট্রাম চালানো হলে ট্রাম বাঁচবে, শহরও দূষণমুক্ত থাকবে

রাত পর্যন্ত যাঁরা কাজ করেন তাঁদের সুবিধা হবে এই সরকারি পরিষেবা থাকলে

 |  2-minute read |   30-11-2018
  • Total Shares

ট্রাম নিয়ে আমার উৎসাহ চিরকালই। এই শহরের ঐতিহ্যের অঙ্গ হল ট্রাম। এ কথাও ঠিক যে ট্রামের মতো দূষণমুক্ত যান খুবই দরকারি কলকাতা শহরের জন্য। তাই সময়ের দাবিতে হোক বা পুলিশের দাবি মেনে যানজটের যুক্তিতে বা অন্য কোনও কারণে যখনই কোথাও সাময়িক ভাবে ট্রাম চলাচল বন্ধ করা হয়েছে তখনই দেখা গেছে যে সেই রুটে ট্রাম আর চালু হয়নি।

tram-2_082818025736_113018062835.jpgকোনও রুটে একবার বন্ধ হলে আর চালু হয়নি ট্রাম (ছবি: লেখক)

ট্রামের জাদুঘর করার সুবাদে আমার সঙ্গে আলাপ হয়েছিল ক্যালকাটা ট্রাম কোম্পানির তৎকালীন কর্ণধার নীলাঞ্জল শাণ্ডিল্যর। সেই পরিচয়ের সূত্র ধরেই পুজোর আগে ওঁকে আমি একটি প্রস্তাব দিই। তবে উনি বলেন এ ব্যাপারে হিডকোর চেয়ারম্যান দেবাশিস সেনের সঙ্গে কথা বলতে।

তারপরে দেবাশিস সেনকে টেলিফোন করে ৬০ সেকেন্ডে প্রস্তাবটি জানাই। আমি বলি যে ট্রামগুলি তো অচল হয়ে পড়েই রয়েছে ট্রামের বিভিন্ন ছাউনিতে। লাইনও পড়ে থেকে নষ্ট হচ্ছে। আবার কলকাতার উপকণ্ঠে গড়ে উঠতে থাকা রাজারহাট-নিউটাউনে বাসের সংখ্যা কম। নতুন এই শহরে আলাদা ভাবে ট্রামের জন্য লাইন পাতার উপায়ও রয়েছে। তাই যদি ট্রামের মতো দূষণমুক্ত যান শহরের এই অংশে চালানোর কথা বিবেচনা করা হয়।

এর বেশি আমি কিছু বলিনি তাঁকে। তবে কয়েক দিন আগে বিধানসভায় একটি প্রশ্নের জবাবে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী যখন এই প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করেন তখন আমি খুব খুশিই হই। আমার প্রস্তাব সরকার মেনেছে নাকি আগে থেকেই সরকারের এই পরিকল্পনা ছিল সে কথা আমি বলতে পারব না, তবে একটি কথা বলতে পারি, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ট্রাম চলবে।

কলকাতায় ট্রামের জাদুঘর হয়েছে। এখনও শহরের বুকে ট্রাম চলে, কয়েকটি ব্যস্ত রুটেও ট্রাম চলে। পুরোনো রাস্তা, অট্টালিকার মতো বাড়ির বাশ দিয়ে চাকায় ঘর্ঘর শব্দ করে ট্রাম যখন চলে তখন আমার খুব ভালো লাগে। ট্রামে যাত্রীরাও অনেকে ওঠেন। তবে অফিসের সময়ে লোকে ট্রামে চড়েন না। ঘুরেফিরে তখন সেই মন্থরগতির কথাই আসে।

tram-3_082818025832_113018063016.jpgরাজারহাটে ট্রাম চালুর প্রস্তাব রয়েছে (ছবি: লেখক)

কলকাতায় ট্রাম চালু হয়েছে উনবিংশ শতাব্দীর শেষ দিকে, তখন মূলত পণ্য পরিবহণের কথা ভেবেই চালু হয়েছিল। এখনও বড়বাজার থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত লাইন সেই সাক্ষ্য বহন করছে। আগে বউবাজার, স্ট্র্যান্ড রোড হয়ে আর্মেনিয়ান ঘাট পর্যন্ত লাইন ছিল, মানে ব্যবসায়িক এলাকাগুলো ট্রামের মাধ্যমে যুক্ত করা হয়েছিল।

এখনও খিদিরপুর-বিধান সরণীতে যে সব লাইন চালু রয়েছে, ঐতিহ্যের সঙ্গে খাপ খাইয়ে সেই সব লাইন থাক। তবে নতুন জায়গাতেও নতুন পরিকল্পনা করে এই লাইন চালু করা যেতেই পারে।

এখন সেতুগুলির যা অবস্থা তাতে তার উপর দিয়ে ট্রাম চালানো কতটা সম্ভব সে কথা সত্যিই হলফ করে বলা মুশকিল। তাই সল্টলেক-রাজারহাট-নিউ টাউনে এই পরিষেবা চালু করা যেতে পারে। সেখানে ধর্মতলার বাস টার্মিনাসের মতো ট্রাম টার্মিনাসও করা যেতে পারে।

আমার তো মনে হয় কলকাতা শহরে ছোট ছোট গাড়ি চলুক, ইলেক্টিক বা ব্যাটারিচালিত। বড় গাড়ি প্রবেশেরই প্রয়োজন নেই। তাতে শহরের দূষণের মাত্রাও কমবে। আর নতুন করে গড়ে ওঠা শহরে ট্রাম চালানো হোক। সেখানে জিপিআরএস সিস্টেম চালু করা হোক যাতে যাত্রীরা ট্রামের অবস্থান জানতে পারেন। রাতের দিকে যখন অনেকের ফেরার প্রয়োজন হয়, তখন সরকারি এই পরিষেবা চালু থাকলে রাতের দিকে এলাকার লোকজনের সুবিধা হবে আবার যাঁরা অনেক রাত পর্যন্ত ডিউটি করেন তাঁরাও এই পরিষেবা গ্রহণ করতে পারেন। এখনও এটি চালু করার সুযোগ রয়েছে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SOUVIK MUKHERJEE SOUVIK MUKHERJEE

One of the Architects of Tram Museum, Kolkata and Collector

Comment