মহানগরে দুর্ঘটনা এড়াতে পারে মোটা অঙ্কের জরিমানা আর সিগন্যালের সঙ্গে যুক্ত গেট

ধীর গতির গাড়ি যানজটের কারণ, তবে বেপরোয়া গাড়ি চালানোও রুখতে হবে

 |  2-minute read |   20-03-2018
  • Total Shares

হাওড়ার কমিশনারেটে ডিসি ট্রাফিকের দায়িত্বে থাকার সময় বেশ কয়েকটি বিষয় আমার চিন্তার অন্ত ছিল না। এক নম্বর কোনা এক্সপ্রেসওয়ে। দুই, জিটি রোড। তিন, হাওড়া স্টেশনের প্রি-পেড ট্যাক্সি স্ট্যান্ড। যথাসম্ভব চেষ্টা করেছি কোনা এক্সপ্রেসওয়ে ও জিটি রোডকে যানজট মুক্ত করতে। দায়িত্বে থাকার সময় হাওড়া স্টেশনের ট্যাক্সি স্ট্যান্ডেও বেশ কয়েকটি নতুন প্রযুক্তি আমদানি করেছিলাম যাতে যাত্রীদের অকারণ হয়রানির শিকার না হতে হয়।

কলকাতা পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পর জানতাম যে কাজটা সহজ নয়। শহরটা বড়, যানবাহনের সংখ্যা ঢের বেশি। তারপর আবার শহরের জনসংখ্যার বাইরেও অন্য জেলাগুলো থেকে প্রতিদিন কয়েক লক্ষ মানুষ রুজি রোজগারের তাগিদে রোজ শহরে আসেন।

গত কয়েক মাস দায়িত্বে থাকার পর আমার উপলব্ধি হয়েছে নিয়ম না মেনে পথচারীদের পথ চলা ও রাস্তা পারাপার হওয়া এই শহরের ট্রাফিক সংক্রান্ত প্রধান সমস্যা। এজন্য আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে আইন ভাঙলে পথচারীদেরও জরিমানা করা হবে। জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার না হলে বা ফুটব্রিজ থাকা সত্বেও নীচ দিয়ে রাস্তা পার হলে কিংবা মোবাইল ফোনে কথা বলতে বলতে রাস্তা পারাপার করলে যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শহরের গুরুত্বপূর্ণ ক্রসিংয়ে চোখ রাখলেই দেখতে পারবেন এই ব্যবস্থা বলবৎ হয়ে গিয়েছে।

body_041018031338.jpgস্পিড লিমিটের উপর গাড়ি চালালেই চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে

শহরের বেশ কয়েকটা ক্রসিংয়ে আমরা স্বয়ংক্রিয় গেট বসিয়েছি, পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহারও শুরু হয়েছে। আর কিছুদিনের মধ্যে এই প্রযুক্তির পুরোদস্তুর ব্যবহার শুরু হয়ে যাবে। এই ব্যবস্থায় ট্রাফিক সিগন্যালের সঙ্গে এমন ভাবে গেটগুলির যোগাযোগ স্থাপন করা থাকবে যাতে যতক্ষণ সিগন্যাল সবুজ থাকে ততক্ষণ গেট বন্ধ থাকবে। যে মুহূর্তে সিগন্যাল লাল হয়ে যানবাহন বন্ধ হয়ে যাবে তখন আপনাআপনি গেটগুলো খুলে যাবে।

এ ছাড়া আমরা একটি ক্রসিংয়ের সব সিগন্যাল এক সঙ্গে বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। যে মুহূর্তে সব সিগন্যাল বন্ধ থাকবে পথচারীরা নিজেদের খেয়াল খুশি মতো যেদিক দিয়ে ইচ্ছে রাস্তা পারাপার করতে পারবে। আবার সিগন্যাল খুলে গেলে একজন পথচারীও আর রাস্তায় নামতে পারবেন না। এতে ট্রাফিকের গতি বাড়বে। আবার, একই সঙ্গে, দুর্ঘটনার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

শহরের আরও একটি বড় সমস্যা হচ্ছে গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা। এর জন্য কলকাতা পুলিশের তরফ থেকে একটি মোবাইল অ্যাপ চালু করা হয়েছে। এই প্রযুক্তিটির মাধ্যমে গাড়ি চালকরা মোবাইলে শহরের প্রতিটি পার্কিং স্পটের হদিশ পেয়ে যাবেন। একই সঙ্গে জানতে পারবেন যে ওই স্পটগুলিতে সেই সময় কোনও ফাঁকা জায়গা রয়েছে কিনা।

ধীর গতির যানও এই শহরের যানজটের এক উল্লেখযোগ্য কারণ। তা নিয়ে বেশ কয়েকটা পরিকল্পনা আমাদের মাথায় রয়েছে। তবে বেপরওয়া গাড়ি চালানোর ক্ষেত্রে আমরা কিন্তু যথেষ্ট সতর্ক। শহরের প্রায় প্রতিটি রাস্তায় গাড়ির গতি মাপার যন্ত্র বসান হয়েছে। স্পিড লিমিটের উপর গাড়ি চালালেই চালকের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করা হবে এবং মোটা অঙ্কের জরিমানা ধার্য হবে। আমার অভিজ্ঞতা বলে একমাত্র মোটা অঙ্কের জরিমানা করলেই চালকরা সচেতন হবে।

সাবধানে রাস্তায় চলাফেরা করুন। অযথা তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ট্রাফিক আইন ভঙ্গ করবেন না। আমাদের স্লোগানটা মনে আছে তো - বাড়িতে কেউ আপনার জন্যে অপেক্ষা করছে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

SUMIT KUMAR SUMIT KUMAR @sumitkumarips

The writer is an IPS officer. Presently posted as DC Traffic, Kolkata Police.

Comment