ডেঙ্গির তথ্য নয়, সরকার ও পুরসভা আসলে নিজেদের ব্যর্থতা গোপন করছে
গোপন করে নয়, সঠিক পদক্ষেপ ও সচেতনতা প্রচারেই ডেঙ্গি রোধ সম্ভব
- Total Shares
বেশ কয়েকবছর ধরেই কলকাতা পুরসভা এলাকা ডেঙ্গি সমস্যায় জর্জরিত। পুরসভার উচিত তথ্য গোপন না করা। তা না করে, মেয়রের নেতৃত্বে পুরসভার এক শ্রেণীর আধিকারিক ও রাজ্য সরকার তথ্য গোপন করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছে।
গত বছর কলকাতার ডেঙ্গি পরিস্থিতি এতটাই শোচনীয় হয়েছিল যে আমি কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করতে বাধ্য হই। বিস্তর টালবাহানার পর হাইকোর্ট আমার জনস্বার্থ মামলাটিকে গ্রহণ করে। হাইকোর্টের বক্তব্য ছিল, ডেঙ্গির মতো রোগের তথ্য প্রকাশ করা বা গোপন করা জনস্বার্থের বিষয়। সুতারং, জনস্বার্থে এই মামলাটি গ্রহণ করা উচিত। এই মামলা এখনও পড়ে রয়েছে। শুনানি শেষ হয়নি।
এই মামলা এতটা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার পিছনে কিছুটা হলেও রাজ্য সরকার দায়ী। নানান আছিলায়, সরকার মামলাটিকে দীর্ঘায়িত করে তোলার চেষ্টা করছে।
ডেঙ্গির তথ্য গোপনের প্রতিবাদে পুরসভার সামনে বামেদের বিক্ষোভ [ছবি: পিটিআই]
আসলে, সরকার বা পুরসভা ডেঙ্গির তথ্য গোপন করছে না। নিজেদের প্রশাসনিক ব্যর্থতাকে গোপন করে চেষ্টা চলছে। ২০১০ সালের তৃণমূল কংগ্রেস পুরসভা দখল করেছে। ২০১১ সালে রাজ্য সরকার গঠন করে ছিল তৃণমূল। ওই সময় থেকেই নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকতে ও অন্যের উপরে নিজেদের ব্যর্থতার দায়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
২০০৬ সালে আমি মেয়র থাকার সময়ে ডেঙ্গি নিয়ে হাহাকার পড়ে গিয়েছিল শহর জুড়ে। সেই সময় মহানাগরিক হিসেবে আমি নিজে কলকাতার অধিকাংশ ওয়ার্ডে সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে গিয়েছিলাম। পুরসভার থেকেও ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে মানুষদের মধ্যে সচেতনতামূলক প্রচার করা হয়েছিল। একটি বিশেষ ডেঙ্গি মোকাবিলা বাহিনী তৈরি করা হয় এবং যা যা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার প্রয়োজন ছিল সেই সব পদক্ষেপ করা হয়ে ছিল।
একটু স্মরণ করে দেখবেন যে ২০০৭ থেকে ২০১০ সালে কলকাতায় সে ভাবে ডেঙ্গি সমস্যা লক্ষ করা যায়নি। এর কারণ, সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ করা হয়েছিল।
একটা কথা মনে রাখা প্ৰয়োজন ডেঙ্গির তথ্য গোপন করে কোনও দিনও ডেঙ্গি গোপন করা সম্ভব নয়। ডেঙ্গির প্রকোপ কমাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলোর পাশাপাশি মানুষের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তোলা একান্ত প্রয়োজনীয়।
কিন্তু সরকার আর পুরসভা যে ভাবে এগোচ্ছে তাতে শহরে ডেঙ্গির প্রকোপ যদি মহামারীর আকার ধারণ করে তাহলে অবাক হওয়ার কিছুই থাকবে না। মহামারীর আকার ধারণ করলে কেন্দ্রীয় সরকারের ত্রাণ পাওয়ার কথা। যে ভাবে তথ্য গোপন হচ্ছে তাতে সেই ত্রাণ থেকেও বঞ্চিত হবে পুরসভা।