সরকার ও কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি পুজোর দিনগুলোতে কলকাতা পুরসভার অবদানও অনস্বীকার্য
দুর্গাপুজোর জন্য পুরসভার 'কর্মযজ্ঞ' মাস কয়েক আগেই শুরু হয়ে যায়
- Total Shares
দুর্গাপুজো মানেই এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। আর কলকাতার দুর্গাপুজো তো রীতিমতো একটি 'বিশাল' কর্মযজ্ঞ। শহরের অলিগলিতে, বড় রাস্তায়, পাড়ার খোলা মাঠে বা পুরসভার ঘেরা মাঠে, পুজোর মাস খানেক আগে থেকে সর্বত্রই গজিয়ে ওঠে একটি করে মণ্ডপ। শুধু কি মণ্ডপ! কোথাও কোথাও জায়গায় তো রীতিমতো মেলা বসে। খাবারের দোকান থেকে বিভিন্ন পসরার দোকান, জয় রাইড - কী থাকে না সেই মেলায়!
শহরের বুকে যখন এ ধরনের বিশাল 'কর্মযজ্ঞ' হচ্ছে তখন শহরের পুরসভার দায়িত্বও তো বিশাল। পুজোর সময় বিভিন্ন দিক দেখভালের জন্য পুরসভার প্রায় প্রতিটি বিভাগই দিবারাত্র কাজ করে। শুধুমাত্র পুজোর দিনগুলোতে নয়, দুর্গাপুজোর জন্য পুরসভার 'কর্মযজ্ঞ' কিন্তু পুজোর মাস কয়েক আগে থাকতেই শুরু হয়ে যায়।
বিজ্ঞাপন
পুজোর সময় মহানগরীর রাজপথ, বড় বড় পুজো কমিটির সামনের রাস্তা এমনকি বেশ কিছু তস্য গলির মুখ ঢেকে যায় বহুজাতিক সংস্থার ব্যানারে। এর জন্য আইনানুযায়ী পুরসভাকে নির্দিষ্ট ফি দিতে হয়। এমনিতেই, অর্থ সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে কলকাতা পুরসভা। আর, এই পরিস্থিতিতে এই ধরণের সুবর্ন সুযোগ কেই বা ছাড়তে চায়?
পুরসভার বিজ্ঞাপন বিভাগের কর্মীরা তাই পুজোর মাস কয়েক আগে থাকতেই মাপজোক শুরু করে দেন। কোথায় কোথায় হৰ্ডিংয়ের জায়গা নির্দিষ্ট করা হচ্ছে, কারা কারা সেখানে বিজ্ঞাপন দেওয়ার দায়িত্বে রয়েছে (পুজো কমিটিগুলো নাকি পুরসভার নির্দিষ্ট বিজ্ঞাপন এজেন্সি) , কোন কোন সংস্থা সেখানে বিজ্ঞাপন দিতে পারে - এ সব কিছুর পুঙ্খনাপুঙ্খ বিবরণ। এর ফলে সুনির্দিষ্ট করার চেষ্টা হয় যে ফি বাবদ পুরসভার যা পাওয়ার কথা তার সিংহভাগটাই যেন ভাঁড়ারে ঢোকে।
ভাগাড় কাণ্ডের পর এবার তটস্থ ছিল পুরসভা [ছবি: পিটিআই]
খাবারের দোকানগুলো পর্যবেক্ষণ
গত কয়েক বছর ধরে পুরসভা পুজোর দিনগুলোতেও খাবারের দোকানগুলোতে ইন্সপেকশনের বন্দোবস্ত করেছে। এ বছর ভাগাড় কাণ্ড সামনে আসার পর পুরসভা আরও বেশ তটস্থ ছিল। শুধু খাবারের পর্যবেক্ষণ নয় পুরসভার স্বাস্থ্য দপ্তরের ইন্সপেক্টররা এবছর ঠান্ডা পানীয় এমনকি প্যাকেজেড জলের বোতলের উপর ও নজরদারি চালিয়েছে। পুজোর দিনগুলোতে ছোট ছোট দলে ভাগ হয় সকাল থেকে দুপুর অবধি এই অভিযান চালান পুরসভার আধিকারিকরা।
জঞ্জাল পরিষেবা
পুজোর সময় শহরকে জঞ্জাল মুক্ত রাখা পুরসভার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। ওয়ার্ডভিত্তিক এই কাজ করে থাকে পুরসভা। সাহায্য চাওয়া হয় পুজো কমিটিগুলোর কাছ থেকে। কাউন্সিলর ও পুজো কমিটিগুলোর চাহিদা অনুযায়ী প্রতিটি ওয়ার্ডে আলাদা করে পৌছিয়ে দেওয়া হয় জঞ্জাল ফেলার বাক্স। তারপর ভোর রাতের দিকে সেগুলো নির্দিষ্ট একটি জায়গায় জড়ো করা হয় যাতে পুরসভার গাড়িগুলো ভোরবেলা এসে সেগুলা তুলে নিয়ে যেতে পারে। বস্তুত পক্ষে বেশ কিছু বছর ধরে দুর্গাপুজোর সময় এই পদ্ধতিটা 'রেগুলার' করে ফেলেছে পুরসভা।
প্রতিমা বিসর্জনের জন্য প্রায় শ'তিনেক কুলির ব্যবস্থা করেছিল পুরসভা [ছবি: পিটিআই]
বিসর্জন
কলকাতা পুরসভার অধীনে নয় নয় করে ৩৫টি ঘাটে ঠাকুর বিসর্জনের ব্যবস্থা রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বাবুঘাট, প্রিন্সেপ ঘাট ও নিমতলা ঘাট যেখানে তিনদিনে নয় নয় করে দু'হাজারেরও বেশি প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয়।
পুজোর কয়েকদিন আগে থেকেই পুরসভার জঞ্জাল ও বিদ্যুৎ বিভাগ এই ঘাটগুলো পরিষ্কারের কাজে নেমে পড়ে। এখানেই শেষ নয়, ঘাটে আসা পুজো কমিটিগুলোর যাতে প্রতিমা নামাতে বা বিসর্জন দিতে সমস্যা না হয় তার জন্য কুলিরও বন্দোবস্ত করা হয় পুরসভার তরফ থেকে। এ বছর যেমন প্রায় শ'তিনেক কুলির বন্দোবস্ত করা হয়েছে।
সব মিলিয়ে সরকার, কলকাতা পুলিশের পাশাপাশি পুজোর দিনগুলোতে কলকাতা পুরসভার আধিকারিক ও কর্মীদের অবদানও অনস্বীকার্য। দিবারাত্র জেগে এই কর্মীরা বাঙালির শ্রেষ্ট উৎসবকে সাফল্যমন্ডিত করে তোলেন।