পুলিশি হেফাজতে শিক্ষকের মৃত্যুতে কাশ্মীর জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়েছে
পুলওয়ামা থেকে অবন্তীপুর যেতে লাগে পাঁচ মিনিট, সেখানেরই জনপ্রিয় শিক্ষক ছিলেন রিজওয়ান
- Total Shares
পুলিশ হেপাজতে রিজওয়ান পণ্ডিতের আকস্মিক মৃত্যু ঘটনা গোটা কাশ্মীর জুড়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। বিশেষ করে তাঁর নিজের অবন্তীপুর অঞ্চলে। এই ঘটনায় যে ক্রোধের সঞ্চার হয়েছে তা থেকে তরুণ হৃদয়ে আবার সন্ত্রাসবাদ দানা বাঁধছে।
গত বৃহস্পতিবার রিজওয়ানের মৃত্যু হয়েছিল। সেদিন তাঁর প্রতিবেশী কমরেড শহিদ মনজুরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে। ভিডিয়োটিতে মনজুর দাবি করেছেন যে তিনি হিজবুল মুজাহিদিনে যোগ দিয়েছেন।
গত অক্টোবর থেকেই জঙ্গি সংগঠনগুলোতে নতুন সদস্যের সংখ্যা বেশ কমেছে। পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার আগে অবধি এই বিষয়টি নিয়ে সরকার ও নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীগুলো বেশ খুশিতে ছিল।
কঠোর ব্যবস্থা
রিজওয়ানের মৃত্যুর পর এক নতুন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। যে সব তরুণরা ভারত সমর্থক ছিলেন তাঁরাও আইন ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করে দিয়েছেন।
শাসন ব্যবস্থা ও সংবিধানে উল্লেখিত সমান অধিকারের উপর তাঁদের যে বিশ্বাস জন্মেছিল, রাজ্য জুড়ে একের পর এক গ্রেপতার পরে তাঁদের সেই বিশ্বাস অনেকটাই কেঁপে গিয়েছে। তাঁদের ধারণা কয়েকজনকে শুধুমাত্র সন্দেহর বশে গ্রেফতার করা হয়েছে।
শেষ কয়েকদিন ধরেই, সন্ত্রাসবাদী সন্দেহে বেশ কয়েকজন তরুণকে পুলিশ আটক করেছিল।
গত এক শতাব্দী ধরে পুলিশকে এতটা কড়া মনোভাব নিতে দেখা যায়নি। অনেকেই পুলিশের এই বাড়বাড়ন্ত নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে।
রসায়ন বিদ্যার শিক্ষক হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন রিজওয়ান [সৌজন্য: ইন্ডিয়া টুডে]
ঝামেলার উৎস
রিজওয়ানের মৃত্যুর পর এই ধারা অনেকটাই বন্ধ হয়েছে। এই ঘটনার পর গোটা উপত্যকা জুড়ে আন্দোলন শুরু হয়ে গিয়েছে।
এমন একটি পরিস্থিতি ২০১০ সালে সৃষ্টি হয়েছিল যখন মাছিলে তিনিজন ছেলেকে হত্যা করা হয়েছিল।
সেই ঘটনায় কাশ্মীর জুড়ে ব্যাপক গন্ডগোলের সৃষ্টি হয়েছিল এবং সেই বছরেই পাথর ছোড়ার ঘটনা তুঙ্গে পৌঁছেছিল।
বীভৎস নির্যাতন
রিজওয়ানের কিন্তু সহকর্মী ও পড়ুয়ারারা রিজওয়ানের শরীর জুড়ে ক্ষতচিহ্নের বর্ণনা দিয়েছে। এর ফলে ক্ষোভ আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে যে অঞ্চলে তাঁর বাড়ি সেই এলাকায়।
রসায়ন শাস্ত্রের শিক্ষক হিসেবে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন রিজওয়ান। তাঁর একটি কোচিং সেন্টারও ছিল যেখানে প্রচুর পড়ুয়া পড়তে আসত। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর বাড়িতে শেষ শ্রদ্ধা জানবার জন্য পড়ুয়ারা ভিড় করে।
রিজওয়ান দু'টি বেসরকারি স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। এছাড়া কিছুদিনের জন্য তিনি অবন্তীপুর বিশ্ববিদ্যালয়তে শিক্ষকতা করেছেন। তিনি পড়ুয়াদের কাছে খুব জনপ্রিয় ছিলেন এবং ট্রাল থেকে পুলওয়ামা পর্যন্ত তাঁকে বেশ সম্মান করা হত। ট্রাল ও পুলওয়ামা অবন্তীপুরের পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তে অবস্থিত।
গ্রেফতারির খতিয়ান
গত বছর অবন্তীপুরে গ্রেনেড হামলায় যুক্ত থাকার অভিযোগে রিজওয়ানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাঁকে পাবলিক সেফটি অ্যাক্টে গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে পরিবারের পক্ষ থেকে প্রচুর চেষ্টার পরে তিনি মুক্তি পান।
সন্ত্রাসবাদের ইতিহাস
অবন্তীপুর পুলিশের নতুন ডিসি এর আগে ২০০৮ সালে যখন দায়িত্বে ছিলেন তখন ট্রাল থেকে সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার মুখ্য ভূমিকা নিয়েছিলেন। উপত্যকার পূর্ব দিকে অবস্থিত এই শহরে ১৯৯৮ সাল থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত সন্ত্রাসবাদ বেশ সক্রিয় ছিল।
আবার, ২০১০ সালে সন্ত্রাসবাদ কিন্তু এই শহরেই সর্বপ্রথম মাথাচাড়া দিয়েছিল।
সেই সময় নতুন নতুন ছেলেদের নিয়ে হিজাব-উল মুজাহিদেন নতুন করে পুনরুত্থান ঘটেছিল।
কাশ্মীরের প্রতিহিংসা পরায়ণতার কারণ অনেকেরই জানা নেই [ছবি: রয়টার্স]
নেতৃত্বে জৈশ
সম্প্রতি, হিজাব ও লস্কর-ই-তৈবাকে অনেকটাই পিছনে ফেলে দিয়েছে জৈশ-ই-মহম্মদ। পুলওয়ামা জঙ্গি হামলার আত্মঘাতী জঙ্গিরা অবশ্য জৈশের সদস্য ছিল।
দুর্ভাগ্য, অনেকেই কাশ্মীরের এই প্রতিহিংসা পরায়ণতার কারণ খুঁজে পায় না।
তারা ভাবনাচিন্তা না করে নিজেদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে।
পুলওয়ামা হামলার পরে পুলিশ গোটা উপত্যকা জুড়েই কঠোর পদক্ষেপ করতে শুরু করেছে। তবে, ঘটনাস্থলের কাছাকাছি এলাকাগুলোতে পুলিশের ধরপাকড় কিছুটা বেশি। পুলওয়ামার লেথপোরা অঞ্চলে ১৪ ফেব্রুয়ারি জঙ্গিহামলা হয়েছিল। সেই জায়গা থেকে অবন্তীপুর পৌঁছাতে গাড়িতে মাত্র মিনিট পাঁচেক সময় লাগে।
উপনির্বাচনের অভিজ্ঞতা
লোকসভা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখেই এখন কাশ্মীরে এতটা ধরপাকড় চলছে। কেন্দ্রের শাসক দল লোকসভা নির্বাচনের আগে আর কোনও জঙ্গি হামলা চায় না।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ যে একটি মাত্র আসনের (অনন্তনাগ) জন্য নির্বাচন কমিশন তিন দফায় ভোটদান পর্ব ঠিক করেছে।
তবে এই করে কতটা লাভ হবে সে বিষয়ে কিন্তু কেউই নিশ্চিত নয়। ২০১৭ সালের উপনির্বাচনের সময়ে রাজ্য সরকার বেশ কয়েকজনকে আটক করেছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও নির্বাচন চলাকালীন হিংসা বন্ধ করা যায়নি।
বাদগাম জেলাতে শ্রীনগর আসনের উপনির্বাচন চলাকালীন এতটাই হিংসা ছড়ায় যে তিন বাদে অনুষ্ঠিত হতে চলা অনন্তনাগ কেন্দ্রের উপনির্বাচন বন্ধ করে দিতে হয়।
সেই কেন্দ্রের উপনির্বাচন আজ পর্যন্ত করা সম্ভব হয়নি।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে