প্রকৃতি নয়, কেরল বন্যার জন্যে দায়ী আমরাই
সরকার যদি আগে থেকেই বিপদ সঙ্কেতটা বুঝত তাহলে এতটা ভয়াবহ পরিস্থিতি হত না
- Total Shares
কেরল এখন গত ১০০ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সঙ্গে লড়াই করে চলেছে। আসুন একবার দেখে নেওয়া যাক ঠিক কী কী কারণে ছবির মতো সুন্দর এই রাজ্য এই পরিস্থিতির সম্মুখীন হল।
কেরলকে বলা হয় 'ভগবানের আপন দেশ'। অথচ এই রাজ্যেই মুষলধারে বৃষ্টির জন্যে ভয়াবহ বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। কিছু এলাকায় ভূমিধসও নেমেছে। মৃত্যের সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৩৫০ ছাড়িয়ে গিয়েছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, জল নেমে গেলে মৃত্যদেহের সংখ্যা বাড়তে পারে।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন ইতিমধ্যেই গোটা দেশের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে বলেছেন, "আমরা একটি ভয়াবহ বিপর্যয়ের সম্মুখীন হয়েছি। সকলকে এক হয়ে এই বিপর্যয়ের মোকাবিলা করতে হবে।"
আমরা সকলেই মনে করে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণেই এই ধরণের পরিস্থিতি উদয় হয়ে থাকে। কিন্তু সত্যিটা হল এই যে এই ধরণের পরিস্থিতির জন্যে মানুষের অবদানও কম নয়।
২০১৫ সালের চেন্নাইতেও এই একই কারণে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল। তামিলনাড়ুর বিধানসভায় সম্প্রতি কম্পট্রলার ও অডিটর জেনারেল অফ ইন্ডিয়ার একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করা হয়েছিল। সেই রিপোর্টে ২০১৫ সালের বন্যাকে 'ম্যান মেড ডিসাস্টার' বলে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের কথা যদি মেনে নিতে হয় তাহলে হয়ত কেরলের জন্যেও এই ধরণের রিপোর্ট তৈরি করতে হবে।
পরিবেশ বিজ্ঞানী তথা পশ্চিম ঘাট বিশেষজ্ঞ ভিএস বিজয়ন জানিয়েছেন, "কেরলের এই বিপর্যয় মানুষের জন্যেই সৃষ্টি হয়েছে। গডগিল কমিটির রিপোর্ট মেনে যদি পর্বতমালাকে সুরক্ষিত করবার ব্যবস্থা করা হত তাহলেই এই পরিস্থিতি এড়ানো যেত।"
কেরল এখন গত ১০০ বছরের সবচেয়ে ভয়াবহ বন্যার সঙ্গে লড়াই করে চলেছে
বিজয়ন যে রিপোর্টটির কথা উল্লেখ করছেন তা সনামধন্য পরিবেশ বিজ্ঞানী মাধব গডগিললের নেতৃত্বে একটি দল তৈরি করেছিল। ২০১১ সালে এই রিপোর্টটি কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে পেশ করা হয়েছিল। এই বন্যায় কেরলের যে সমস্ত এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তার মধ্যে বেশ কিছু এলাকাকে এই রিপোর্টে বাস্তুতন্ত্রের বিচারে স্পর্শকাতর এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল।
এই রিপোর্টে বেশ কয়েকটি এলাকায় খনি বন্ধ করবার উপদেশ দেওয়া হয়েছিল ও খাদান থেকে পাথর তুলতে নিষেধ করা হয়েছিল। রিপোর্টে জঙ্গল কাটার উপরও বিধিনিষেধ আরোপ করবার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল এবং জঙ্গলে যত্রতত্র নির্মাণের অনুমতি না দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল।
কমিটির তরফ থেকে সুপারিশ করা হয়েছিল যে ১,৪০,০০০ কিলোমিটার বিস্তৃত পশ্চিম ঘাটকে তিন তিনটে জোনে বিভক্ত করা হোক। কোন কোন এলাকায় ঠিক কতটা পরিবেশগত সুরক্ষার প্রয়োজন তার উপর ভিত্তি করে এই তিনটে জোন তৈরি করা হবে।
কিন্তু কেরল সরকার এই রিপোর্টটিকে বাতিল করে দিয়েছিল।
এবার বন্যার পরে গডগিল জানিয়েছেন যে সরকারের পরিবেশনীতিতে স্বচ্ছতা না থাকার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন যে প্রাকৃতিক কারণে নয়, মানুষের জন্যেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
অন্য অনেক পরিবেশবিদও একই মত পোষণ করে জানিয়েছেন যে পর্যটন শিল্পের জন্যে যত্রতত্র হোটেল নির্মাণ বা খাদান থেকে পাথর তোলা ও জঙ্গলের মধ্যে অবৈধ নির্মাণের জন্যেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।
বর্তমানে কেরলের পরিস্থিতি বেশ খারাপ। স্বাভাবিক হতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে কারণের খোঁজ শুরু হবে। তবে একটা কথা বলা যেতেই পারে, সরকার যদি আগেই বিপদ সঙ্কেতটা আঁচ করতে পারত তাহলে পরিস্থিতি কিন্তু এতটা ভয়াবহ হত না।
এই মুহূর্তে যেটা আমাদের প্রধান কর্তব্য, কেরলের পরিস্থিতি থেকে যেন দেশের বাকি রাজ্যগুলো শিক্ষা নেয় তা নিশ্চিত করা।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে