কেরলে বন্যা: বন্যা মোকাবিলায় চাই এমন একটি পদ্ধতি যাতে সময়মতো পূর্বাভাস দেওয়া যায়
কেরলে কেন্দ্রীয় জল কমিশনের স্থানীয় কার্যালয় থাকলে দুর্যোগের মাত্রা কম হতে পারত
- Total Shares
কেরলের বন্যা প্রমাণ করে দিল যে এই ধরণের বড়সড় প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে মোকাবিলা করার জন্য আমরা এখনও যথেষ্ট প্রস্তুত নই।
২০০৫ সালের মুম্বাইয়ে যে বন্যা হয় ঠিক তেমনভাবেই কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, চেন্নাইয়ের মতো দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রত্যেকবছর এই ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে।
প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে অল্প সময়ের মধ্যে ব্যাপক বর্ষণের ফলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হচ্ছে। পরিবেশ-বিজ্ঞানের কথায় একে চরম প্রাকৃতিক পরিস্থিতি বলা হয়।
যে সব প্রতিষ্ঠান পূর্বাভাস দেয়, তাদের মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার (ডেইলি ও)
বহু বছরের গবেষণার পরে পরিবেশ বিজ্ঞানীরা বলছেন যে বিশ্ব উষ্ণায়নের ফলে এই ধরণের প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের মাত্রা আরও বাড়বে। এই সব দুর্যোগ যে সব সময় আবহাওয়া পরিবর্তনের ফলেই হচ্ছে এমনটা নয়।
চেন্নাইয়ের বন্যার কথাই ধরা যাক। বিজ্ঞানীদের মতে চেন্নাইয়ের বন্যার জন্য শুধুমাত্র আবহাওয়ার পরিবর্তনই দায়ী নয় বরং গত তিন দশক ধরে যে অস্থিতিশীল ভূমিব্যবহার নীতি চলে আসছে, সেটিও একই ভাবে দায়ী।
তাই যখন বিভিন্ন জলবায়ু পরিবর্তনের জেরে চরম প্রাকৃতিক দুর্যোগ ঘটে যাচ্ছে তাই এই পরিস্থিতিকে ঠেকাতে যখন আমাদের হাতে কিছুই নেই তখন এই পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকাই শ্রেয়, তাতে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা কমবে।
তাই এমন একটা পদ্ধতি তৈরি করতে হবে যাতে পূর্বাভাস ও আন্দাজ মোটামুটি মিলে যায়।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস দেওয়ার বিশ্বমানের পদ্ধতি আমাদের দেশে আছে। প্রত্যেকবছর জুন মাসে দক্ষিণপূর্ব মৌসুমি বায়ু কেরল দিয়ে ভারতে প্রবেশ করে বলে ভারতের আবহাওয়া সম্পর্কিত মানমন্দিরগুলির কয়েকটি কেরলের উপকূলেও রয়েছে।
আমাদের দেশে এমন অনেক উপযুক্ত ও উন্নত মানের দূরনিয়ন্ত্রিত কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে যা আবহাওয়া ও ভারতের ভূপৃষ্ঠের উপর সর্বক্ষণ নজর রেখে চলেছে।
এমন একটা পদ্ধতি তৈরি করতে হবে যাতে আবহাওয়ার পূর্বাভাস খুব কাছাকাছি হয়
এ ছাড়াও নাসার মতো বিভিন্ন সংস্থা থেকে আমরা অবহাওয়ার ও পরিবেশ সম্পর্কিত উপগ্রহচিত্র পেয়ে থাকি। সেই সব উপগ্রহচিত্র ও কোনও এলাকার নদী ও জলাশয়ের পরিস্থিতি বিচার করে বন্যার পূর্বাভাস দেওয়া যেতে পারে। সেই পূর্বাভাস অবশ্যই প্রতিটি মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে হবে এবং দরকারে কোনও এলাকা থেকে মানুষজনকে সরিয়ে নিতে হবে।
এই পুরো পদ্ধতির সঙ্গে কেন্দ্রীয় ও রাজ্য স্তরের বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক, প্রশাসনিক, সরকারি বিভাগ যুক্ত রয়েছে।
তবে আমাদের দেশে এই সব সংস্থা একে অপরের সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করে না।
পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত থাকলে ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কাও কমে
সেন্ট্রাল ওয়াটার কমিশন (সিডব্লিউসি) বন্যার পূর্বাভাস দেয়, তবে কেরলে এই ধরনের পূর্বাস দেওয়ার মতো একটিও কার্যালয় নেই এই প্রতিষ্ঠানটির। কেরলে বন্যার ভয়াবহ পরিস্থিতি সম্পর্কে দ্য সাউথ এশিয়া নেটওয়ার্ক ফর ড্যামস, রিভার্স অ্যান্ড পিপলের আধিকারিক হিমাংশু ঠক্কর বলেন, "বাঁধ যখন পূর্ণ হয়ে গেছে, যখন জল ছেড়ে দেওয়া ছাড়া অন্য কোনও উপায় নেই তততক্ষণ পর্যন্ত অপেক্ষা না করে আগে থেকেই বাঁধগুলি জল ছাড়া শুরু করতে পারত।"
আমরা যদি বন্যা মোকাবিলার জন্য খুব তৎপর হতাম তা হলে প্রত্যেকবছর অতিবৃষ্টির ফলে অসম ও ওড়িশায় বন্যা হত না, আরও স্পষ্ট ভাবে বলতে গেলে, এ জন্য আমাদের নির্দিষ্ট একটি সংস্থা দরকার। নদী, বাঁধ, বৃষ্টি, হিমবাহ গলে যাওয়া প্রভৃতি তথ্য তারা সংগ্রহ করবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলি থেকে এবং তা বিশ্লেষেণ করে পূর্বাভাস দেবে। তাদের সংগ্রহ করা বিশ্লেষণ করা তথ্য যেন সকলের নাগালে থাকে। সংস্থাটি বারতীয় জলবায়ু সংস্থা, ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা এবং জাতীয় বিপর্যয় মোকাবিলা সংস্থার সঙ্গে সমন্বয় রেখে কাজ করবে। কেন্দ্রীয় জল কমিশনের নানাবিধ কাজ থাকে, তাই তাদের পক্ষে এ কাজ করা মুশকিল।
(সৌজন্য: মেল টুডে)
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন