ভুঁড়ি কমানো বাধ্যতামূলক: বিরিয়ানি আর মদ্যপান থেকে বিরত পুলিশকর্মীরা
মেনুতে এখন জোয়ার ও রাগির মতো গম জাতীয় শস্য, যোগ দিতে হবে সাঁতার ও যোগশিবিরে
- Total Shares
আধুনিকতার দিক থেকে দেশের পুলিশ বাহিনীগুলোর মধ্যে অন্যতম কর্নাটক পুলিশ। কিন্তু একটি ক্ষেত্রে কর্নাটক পুলিশও পিছিয়ে রয়েছে - শারীরিক সক্ষমতা। এই পুলিশ বাহিনীর অনেকেই একটি করে নধর ভুঁড়ির অধিকারী। আর তাই, কোনও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হলে এঁরা নাকি পথে নেমে লড়াই করতে পারেন না।
শহরে যদি কোনও উত্তেজনার সৃষ্টি হয় তাহলে রাস্তায় নামা উর্দিধারীদের চেহারা সম্পর্কে সাধারণ মানুষের যে ধারণা সৃষ্টি হয় তার সঙ্গে এই স্থূলকায় পুলিশকর্মীদের চেহারা কখনোই খাপ খায় না।
কর্নাটক রাজ্য রিজার্ভ পুলিশের ৭০ শতাংশ কর্মীর চেহারা নাদুস-নুদুস, তাঁদের পেটের কাছে এক খণ্ড চর্বির পুরু আস্তরণ রয়েছে। সেই কারণেই তাঁরা দাঙ্গা বা অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা জনিত পরিস্থিতিতে ঠিকমতো লড়াই করতে পারেন না। ১০,০০০ পুলিশকর্মীর মধ্যে ৭,০০০ পুলিশকর্মীই মেদবহুল। তাঁদের শরীরের ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকটাই বেশি।
কর্নাটক রাজ্য রিজার্ভ পুলিশের ৭০ শতাংশ কর্মীর চেহারা নাদুস-নুদুস
সম্প্রতি কর্নাটক পুলিশের এডিজি ভাস্কর রাও একটি নির্দেশিকা জারি করেছেন। নির্দেশিকায় বলা হয়েছে যে সমস্ত পুলিশকর্মীইকেই চাকরি ক্ষেত্রে প্রয়োজন অনুযায়ী শারীরিক ভাবে সক্ষম হতে হবে, না হলে তাঁদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেখা গেছে, ছুটিতে থাকলে অধিকাংশ পুলিশকর্মীই নিয়মিত মদ্যপান ও ধূমপান করে থাকেন এবং মাত্রাতিরিক্ত পরিমাণের কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খেয়ে থাকেন। এ জন্যই তাঁদের ভুঁড়ি বৃদ্ধি পায় এবং তাঁরা বিভিন্ন ধরনের লাইফস্টাইল রোগের শিকার হন। গত এক বছরে কর্নাটকে একশোর উপর পুলিশকর্মী ডায়াবেটিস ও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন।
শরীর ফিট করার লক্ষ্যে রাজ্যের পুলিশকর্মীরা এখন জোয়ার ও রাগির মতো গম জাতীয় শস্য খাচ্ছেন। বিরিয়ানি ভোজন ও মদ্যপান পাকাপাকি ভাবে ত্যাগ করতে হয়েছে। পুলিশকর্মীদের রীতিমতো কাউন্সেলিং করিয়ে ধূমপান ও মদ্যপান ত্যাগ করাতে হয়েছে। তাঁরা এখন সাঁতার ও যোগব্যায়াম শিবিরে যোগ দিচ্ছেন।
এই পুলিশকর্মীদের পরিবারবর্গ এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে। তাঁরা এখন নিশ্চিত যে তাঁদের বাড়ির পুলিশকর্মী এখন ফিট থাকবেন এবং দীর্ঘায়ু হবেন।
এই সংযম একেবারে উঁচুতলা থেকে শুরু করা হয়েছে। অর্থাৎ রাজ্য পুলিশের ডিজি থেকে থানার দারোগা অবধি সকলকেই শারীরিক সক্ষম থাকার জন্য এই সংযম মেনে চলতে হবে।
পছন্দের বিরিয়ানি আর খেতে পারবেন না পুলিশকর্মীরা
উঁচুতলার পুলিশ কর্মীদেরও এই সংযম প্রক্রিয়ার মধ্যে নিয়ে আসার একটি কারণ রয়েছে। এর আগে দেখা গিয়েছে যে একজন এডিজিপির খাওয়াদাওয়ায়র উপর কোনও সংযম ছিল না এবং তিনি একটি নাদুস-নুদুস ভুঁড়ির মালিক ছিলেন। এর ফলে তাঁর অধস্তন কর্মীদেরও কোনও রকম সংযম তৈরি হয়নি।
রিজার্ভ পুলিশ মূলত আপৎকালীন পরিস্থিতিতে ময়দানে নামে। তাদের হাতে তাই অবসর সময়ও যথেষ্ট। এই পরিস্থিতিতে তাঁদের শারীরিক সক্ষমতার উপর নজর রাখাটাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাঁরা যখন নিজেদের ব্যারাকে বা সদরদপ্তরে অবসর সময় কাটান তখন সহজেই ধুমপান, মদ্যপান ও হাই ক্যালোরি সমৃদ্ধ খাবারের প্রতি আসক্ত হয়ে পড়েন। সঠিক ডায়েট সম্পর্কিত কোনও ধারণা না থাকায় তাঁরা সহজেই শারীরিক ভাবে অক্ষম হয়ে পড়েন।
এই উদ্যোগের ফলে মনে করা হচ্ছে পুলিশকর্মীরা অচিরেই শারীরিক ভাবে সক্ষম হয়ে উঠবেন। তবে এ জন্য পুলিশকর্মীদেরও সদিচ্ছার প্রয়োজন রয়েছে। আশা করা যায়, আইন শৃঙ্খলার উপর নজর রাখার পাশাপাশি পুলিশ এবার নিজেদের শরীরের উপরও নজর রাখবেন।