বিচারপতি নিয়োগকে ঘিরে কেন সরকার এবং বিচার ব্যবস্থার মধ্যে একটা অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল?
কোনও লিখিত নির্দেশিকার না থাকায় নিয়োগ নিয়ে বিরোধ হচ্ছে
- Total Shares
মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পদে ইন্দিরা বন্দ্যোপাধ্যায় ও বিনীত সারন ছাড়াও তৃতীয় বিচারপতি পদে শপথ গ্রহণ করেন কে এম জোসেফ। রাষ্ট্রপতির নিয়োগ সংক্রান্ত নির্দেশিকায় (ওয়ারেন্ট অফ অ্যাপয়েন্টমেন্ট) অনুযায়ী ভারতের প্রধান বিচারপতি দীপক মিশ্র এঁদের শপথবাক্য পাঠ করান।
বিচারপতি পদে কে এম জোসেফের নিয়োগ নিয়ে দেশের বিচার ব্যবস্থা এবং সরকারের মধ্যে একটা সঙ্ঘাত আজ প্রায় বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল। আজ থেকে প্রায় ছ'মাস আগেই বিচারপতি পদে ইন্দু মালহোত্রা এবং কে এম জোসেফের নাম সুপারিশ করা হয়েছিল। তবে কতটা বরিষ্ঠ বা সিনিওরিটি এবং আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্বের কথা বিচার করে ইন্দু মালহোত্রাকে বিচারপতি হিসেবে সিলমোহর দিলেও কেএম জোসেফকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগের ছাড়পত্র দেয়েনি কেন্দ্র। দীর্ঘদিন কেটে যাওয়ার পর বিচারপতি হিসেবে কলেজিয়াম তাঁর নাম আবার সুপারিশ করে পাঠান। যদিও অনেকেই মনে করেন তাঁর নাম সুপারিশ করে আরও আগে পাঠানো উচিত ছিল কলেজিয়ামের।
কে এম জোসেফ
কলেজিয়ামের দ্বিতীয়বারের বৈঠকে ঠিক হয়ে যে বিচারপতি পদে নিয়োগের সুপারিশ করে কে এম জেসফের নাম আবার পাঠানো হবে। কলেজিয়াম ঠিক করে যে সরকার বিচারপতি হিসেবে আরও নাম সুপারিশ করতে বললে কে এম জোসেফের নাম পুনরায় পাঠানো হবে।
তিনজন বিচারপতির মধ্যে একদম শেষে কেএম জোসেফ শপথ গ্রহণ করাকে ঘিরে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে কারণ তাঁর নাম অনেক আগেই সুপারিশ করে পাঠানো হয়েছিল। কেন্দ্র যদিও বলে যে এ ক্ষেত্রে তারা সিনিয়রিটির বিচার করেছে। হাইকোর্টের বিচারপতিদের মধ্যে সর্বভারতীয় স্তরে পদোন্নতির দিকটা বিচার করেই শপথ গ্রহণের ক্রম ঠিক করা হয়েছে।
এই বিতর্কের পরিপ্রেক্ষিতে যে বিষয়টা উঠে এসেছে তা হল দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার স্তম্ভগুলির মধ্যে পারষ্পরিক বিরোধিতা অর্থাৎ সংসদ, প্রশাসন এবং বিচারবিভাগ - এই তিনটি প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব সাংবিধানিক গতিপ্রকৃতি ও ক্ষমতা নিয়ে সংঘাত। পাশাপাশি একে অপরকে নিয়ন্ত্রণও করে। কে কার চেয়ে বরিষ্ঠ, তা নির্ণয়ের পাশাপাশি এই পারস্পরিক লড়াইয়ের মধ্যে পড়ে যে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি চাপা পরে যাচ্ছে সেটা হল বিচারবিভাগীয় নিয়োগের (ন্যাশনাল জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশন)-এর মামলায় একটি এমওপি (মেমোরান্ডাম অফ অ্যাপয়েন্টমেন্ট) মেনে চলার নির্দেশ। এ ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা চাপা পড়ে যাচ্ছে।
নির্দিষ্ট এই মামলায় সুপ্রিম কোর্ট একটি লিখিত প্রক্রিয়াগত নির্দেশ (এমওপি) বলবত করা বাধ্যতামূলক করে দেয় যাতে বিচারবিভাগীয় নিয়োগ ও সেই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার অধিকার সম্বন্ধে সুস্পষ্ট নির্দেশিকা থাকে। বিগত তিন বছরে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিরা সরকারের সঙ্গে এবিষয়ে একাধিকবার আলোচনা ও দরকষাকষি করেছেন। বিচারপতি টি এস ঠাকুর খোলাখুলি ভাবে আক্রমণাত্মক পন্থা নিয়েছিলেন। আবার বিচারপতি জে এস খেহার আপোসে আলোচনার পথ ধরে জনস্বার্থ মামলাগুলিকে ওপেন কোর্টে শুনানির পক্ষে সওয়াল-জবাব করেছেন। কিন্তু এত আলাপ আলোচনার পরেও এই বিষয়ে জট ছাড়ানোর ক্ষেত্রে খুব একটা সাফল্য আসেনি।
আগামী দিনগুলিতে একাধিক বিচারপতির পদত্যাগ ও নতুন বিচারপতি নিয়োগের সাক্ষী থাকবো আমরা। প্রশাসনিক ও বিভাগের সম্পর্ক স্বভাবতই খানিকটা দ্বন্দ্বমূলক কাজেই কোনও লিখিত নির্দেশিকার না থাকায় নিয়োগসংক্রান্ত বিরোধ ও বিতর্কের অবসান ঘটার সম্ভাবনা কম। এ ক্ষেত্রে প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তনের প্রয়োজন রয়েছে।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন