ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর: প্রকৃতিটুকু ছাড়া ভূস্বর্গ এখন 'নেই-সর্গিক', নেই কোনও স্বর্গীয় ব্যাপার
নিসর্গের রূপ আহরণ করার কথা, কিন্তু চাপা আতঙ্ক ভয় ভ্রমণের আমেজটাই নষ্ট করে দেয়
- Total Shares
নেই-সর্গিক!
ভূস্বর্গ তখন নৈসর্গিক। এখন সেই নিসর্গে দীপাবলি চলছে, ক্রমাগত। ছেলেবেলার ক্যাপ ফাটানোর বন্দুক এখন আসল, বুড়িমার চকলেট বোমা ভয়াবহ গ্রেনেডে পরিণত। কেউ ওদের বলেও না যে শব্দবাজি এখন নিষিদ্ধ, বদলে নিজেরাই আরও জোরদার বাজি ফাটায়। তাই স্বর্গ এখন 'নেই-সর্গিক'। নেই কোনও স্বর্গীয় ব্যাপার একমাত্র প্রকৃতি ছাড়া। সেটাও বদলে যাচ্ছে আসতে আসতে।
কাশ্মীরের প্রকৃতির সঙ্গে আরও অনেকগুলো অনুসঙ্গ ভূস্বর্গের শোভাবর্ধন করেছে চিরকাল। ডাল লেকে প্রথম যে বার নৌকায় চাপলাম... মাঝি আনোয়ার মিঞার কথা খুব মনে পড়ে। লেক ঘোরাতে ঘোরাতে বিভিন্ন কথার মধ্যেই বেশ সুরেলা গান ধরছিলেন মাঝে মাঝে। তখন সেই প্রকৃতির সঙ্গে এই গান মিশে একাত্ম হয়ে গিয়েছিল, দু'টোকেই কোনও ভাবে আলাদা করা যায়নি। কিন্তু আজ সেই গানে আর সেই স্বতস্ফূর্ততা নেই, কেবল আছে গভীর বেদনা এবং তীব্র প্রতিবাদ। হয়তো কাছের কাউকে হারিয়েছেন তিনি, দেশি বা বিদেশি গুলিতে - তাঁর কাছে দু'টিই সমান।
ভূস্বর্গে নেই কোনও স্বর্গীয় ব্যাপার, একমাত্র প্রকৃতি ছাড়া [ছবি: এএফপি]
আমি একজন পর্যটক, ভারতের মাটিতে স্বর্গ দেখতে গিয়েছি বারবার। কিন্তু শেষ কয়েক বছর যেন চেনা স্বর্গ অচেনা হয়ে গেছে, অনেকটা যমালয়ের মতো লাগছে। পৌঁছানোর পরেই দেখি যমালয়ের দ্বাররক্ষীর মতো ছড়িয়ে রয়েছে সেনা জওয়ানরা।
সমস্যা তো কাশ্মীর নিয়ে সেই ১৯৪৮ সাল থেকেই, যখন রাজা হরি সিং নিরুপায় হয়ে ভারত সরকারের সাহায্য চাইলেন। তখন থেকেই পাকিস্তানী জঙ্গি উৎপাত। কিন্তু তা সত্ত্বেও এখনকার পরিস্থিতি যেন ভিন্ন। বাইরে সন্ত্রাসবাদ, এবং ভিতরের নিরাপত্তার মধ্যে পড়ে আমার মতো পর্যটকের প্রাণ ওষ্ঠাগত। যে স্বর্গে নির্দ্বিধায় বিচরণ করে প্রকৃতির অমলিন রূপ আরোহণ করার কথা, সেখানে সর্বদা একটা সুপ্ত ভয় সর্বদা সন্তর্পণে চলার প্রবণতা ভ্রমণ এবং উপভোগের আমেজটাকেই নষ্ট করে দেয়।
যমালয়ের দ্বাররক্ষীর মতো ছড়িয়ে রয়েছে জওয়ানরা [ছবি: রয়টার্স]
যে উপত্যকার অধিবাসীরা সন্ত্রস্ত, সেই উপত্যকায় পর্যটকদের কী অবস্থা হবে সেটা বলাই বাহুল্য। কখনও সখনও শোনা যায় কাশ্মীরি আদিবাসীরাই নাকি জঙ্গিদের মদত দেয়, সত্যটা যদিও জানা নেই। প্রশ্ন হল, যদি মদত দিয়েও থাকে তবে কেনই বা দেয়?
সত্যিই কি সরকার চাইলে এই সমস্যাগুলো দমন করতে পারে না? তবে কী কারণে কাশ্মীর সমস্যা এখনও বিদ্যমান?
পর্যটকরা নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়লে পর্যটন বন্ধ হওয়াই উচিত [ছবি: রয়টার্স]
ভারতের কত মানুষ কাশ্মীরে যান বা যেতে চান, শুধুমাত্র এই সমস্যার জন্য তাদের কপালে স্বর্গ জোটে না। জঙ্গি হোক বা সেনা জওয়ান হোক, পাশে বন্দুকধারী নিয়ে ভ্রমণ কেমন যেন শাস্তির মতো হয়ে যায়। পর্যটকরা যখন নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়ে তখন পর্যটন বন্ধ হওয়াই উচিত। পর্যটন চালু রেখে এমন ভীতির পরিবেশ বহাল রেখেই বা কী লাভ? তার চেয়ে বরং কয়য়ক বছর ভ্রমণ পিপাসুদের ভূস্বর্গ থেকে দূরে রেখে সমস্যার সমাধান করাই ভালো।
একজন পর্যটক হিসেবে আমার প্রিয় কাশ্মীরকে চিনতে না পারাটা যথেষ্ট মর্মান্তিক।