বসন্ত রথকে অপসারণের পর কাশ্মীর কেন ক্ষোভে ফেটে পড়েছে

কাশ্মীরিরা ভালো প্রশাসনের তারিফ করেন, প্রশাসন ভালো প্রশাসক খুঁজে পায় না

 |  4-minute read |   20-11-2018
  • Total Shares

আবার ক্ষোভে ফেটে পড়ে অশান্ত কাশ্মীর। তবে এবার একটু অন্য ধরনের কারণে।

জঙ্গি সমস্যায় জর্জরিত ওই উপত্যকার বাসিন্দারা - বিশেষ করে অঞ্চলের তরুনরা - এবার এক শীর্ষ স্থানীয় পুলিশ অফিসারের সমর্থনে মাঠে নেমে পড়েছে। এখানে উল্লেখ্য, এই অফিসারটি কিন্তু আদতে কাশ্মীরের বাসিন্দা নন, এমনকি মুসলমানও নন।

রাজ্যের আইজি (ট্রাফিক) বসন্ত রথ কিন্তু কাশ্মীর জুড়েই বেশ জনপ্রিয়। সম্প্রতি সরকার তাঁকে বর্তমান পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। আর, এর পরেই, ক্ষোভে ফেটে পড়েছে কাশ্মীর। কিছুদিন আগে, জাভেদ মিয়াঁদাদের প্রতি তাঁর পছন্দের কথা জানাতে জাতীয় ক্রিকেট দলের অধিনায়ক বিরাট কোহলির সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া শ্রীনগরের মেয়রকে তিনি 'বাঁধাকপি' বলে সম্বোধন করেছিলেন। সংবাদ মাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এই দু'টি কারণের জন্য তাঁকে তাঁর পদ খোয়াতে হল।

ডাকাবুকো অফিসার হিসেবে কাশ্মীর জুড়ে নামডাক আছে রথের। বর্তমানে, তাঁকে পাঠানো হয়েছে পুলিশের সশস্ত্র বাহিনীতে। তাঁর স্থলাভিষিক্ত হয়েছেন অলোক কুমার। এই অলোক কুমারকে ২০১৩ সালে এক মদ বিক্রেতার কাছ থেকে ১০ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে বাহিনী থেকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছিল।

প্রশাসনিক ব্যবস্থা বদলি নিত্যনৈমিত্তিক হয়ে থাকে। সাধারণ মানুষ তা নিয়ে মাথাও ঘামায় না। কিন্তু রথের অপসারণ নিয়ে মানুষের মধ্যে যে প্রভাব পড়েছে তা সত্যিই অকল্পনীয়।

৮ নভেম্বর বিরাটের সঙ্গে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছিলেন রথ। সেই সময় বিরাট লিখেছিলেন, যে সমস্ত ভারতীয় ক্রিকেটার অস্ট্রেলিয়া কিংবা ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের পছন্দ করেন তাঁদের ভারত ছেড়ে অন্যত্র চলে যাওয়া উচিত।

বিরাটের টুইটের প্রত্যুত্তরে রথ টুইট করেন:

এর পরেই শ্রীনগরের মেয়রের সঙ্গেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন তিনি।

দায়িত্ব নেওয়ার পরেই মেয়র তাঁর প্রথম সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, শ্রীনগরের সমস্ত জলাভূমিকে শুধুমাত্র পাখি দেখার জন্য নির্দিষ্ট করে রাখা যাবে না। বরঞ্চ, কিছু জলাভূমিকে নির্মাণ শিল্পে ব্যবহার করা যায় কিনা তা ভেবে দেখতে হবে।

রথ, যিনি শ্রীনগরকে 'সেকেন্ড হোম' হিসেবে সম্বোধন করে থাকেন টুইটারে পাল্টা দেন:

এর পরেই সোশ্যাল মিডিয়াতে দু'জনে সংঘাতে জড়িয়ে পড়েন। সেই সংঘাত শেষ হয় সরকার রথকে অপসারণ করার পরে।

টুইটারে লড়াই শুরু হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই সরকার রথকে পদ থেকে সরিয়ে দিল। কিন্তু এর আগে ট্রাফিকের দায়িত্ব পাওয়ার ক'মাসের মধ্যেই ট্রাফিক সমস্যা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে ফেলার জন্য প্রসংশিত হয়েছিলেন।

১৩ নভেম্বর এই অপসারণের খবর প্রকাশ পাওয়ার পর থেকেই সোশ্যাল মিডিয়াতে সরকারি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের ঝড় বয়ে গিয়েছে। আইএএস অফিসার শাহ ফাইজাল থেকে প্রাক্তন ডিজিপি এসপি বৈদ - এমনকি রাজ্যের সাধারণ মানুষও রথের সমর্থনে এগিয়ে এসেছেন।

ফেব্রুয়ারী ২০১৮ সালে ট্রাফিকের দায়িত্ব নিয়েছিলেন রথ। আর প্রথমদিন থেকেই তিনি ব্যাপক জনপ্রিয়। মূলত তাঁর কঠোর অনুশাসনের জন্যই তিনি কাশ্মীরি জনতার নজরে পড়ে যান। যখনই তিনি কিছু পরিদর্শন করতে পথে নেমেছে তখনই প্রিয় অফিসারের সঙ্গে সেলফি তোলার জন্য সাধারণ মানুষের মধ্যে হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে।

body_112018063803.jpgকাশ্মীরের জনপ্রিয় আইপিএস অফিসার বসন্ত রথ [ছবি: পিটিআই]

অশান্ত কাশ্মীরে যখন পুলিশ আধিকারিকদের সতর্ক করে দেওয়া হয়েছে যে সুরক্ষার জন্য তাঁরা যেন নিজেদের দেশের বাড়িতে না যান, তখন রথ কিন্তু কোনও রকম নিরাপত্তা ছাড়াই একা একা পাবলিক বাসে চেপে ঘুরে বেড়িয়েছেন।

ভাবতে অবাক লাগে, দিল্লি যেখানে কাশ্মীরি জনতার মন জয় করতে ব্যর্থ সেখানে এই ২০০০ ব্যাচের আইপিএস অফিসার কী ভাবে ওড়িশা থেকে এসে সাধারণ কাশ্মীরিদের মন জয় করে ফেললেন।

গত তিন দশক ধরে কাশ্মীরিরা পুলিশকে শুধুমাত্র সরকারের অঙ্গ হিসেবেই দেখে আসতে অভ্যস্ত।

রথ অবশ্য পুলিশের সম্পর্কে সাধারণ মানুষের এই ধারণাটা একেবারে বদলে দিয়েছিলেন। পরিস্থিতি এমন যে তাকে অপরসারণের তিনি দিনের মাথায় কাশ্মীরি যুবকরা ধরনা দিতে বসে। আন্দোলনকারীরা বলেছিলেন যে তাঁরা তাঁকে ব্যক্তিগত ভাবে চেনেন না। কিন্তু একজন পুলিশ অফিসার হিসেবে তাঁকে যথেষ্ট সম্মান করেন।

রথের প্রতি এই সমর্থন আরও একটি বিষয় পরিষ্কার করে দেয়, কাশ্মীরে এই মুহূর্তে যোগ্য নেতার অভাব রয়েছে। আর এই নেতাকে মুসলমান হতে হবে বা কাশ্মীর সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে এমনটা কিন্তু নয়।

কাশ্মীরে সরকারি কর্মচারীরা খুলেআম রাজভবন কিংবা প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংবাদমাধ্যমে মুখ খোলেন। অথচ শুধুমাত্র সোশ্যাল মিডিয়াতে মুখ খুলেই বলির পাঁঠা হয়ে গেলেন রথ।

'আজাদি'র খোঁজ করতে থাকা তরুণ কাশ্মীরিদের নতুন অনুপ্রেরণা হয়ে উঠেছিলেন রথ।

সমগ্র দেশ যখন ধর্মীয় মেরুকরণে আক্রান্ত তখন পূর্ব ভারতের এক হিন্দু পুলিশ অফিসার উত্তর ভারতে এক মুসলমান অধ্যুসিত অঞ্চলে ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করলেন। এর ফলে একটি নতুন বার্তাও পাওয়া গেল - কাশ্মীর কোনও ভাবেই কট্টর মুসলিমপন্থী নয়। কাশ্মীরিরা ভালো প্রশাসনের তারিফ করতে ভোলে না।

কিন্তু বসন্ত রথ যে প্রশাসক হিসেবে অসাধারণ তা প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা বুঝতেই পারেন না।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MAJID HYDERI MAJID HYDERI @majid_hyderi

The writer is a journalist based in Kashmir.

Comment