ডালমিয়ার সবচেয়ে বড় গুণ, তিনি সমালোচকদের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন
তাঁকে লোকে দক্ষ প্রশাসক হিসেবে চেনেন, কিন্তু তিনি একজন দক্ষ ব্যাটসম্যানও ছিলেন
- Total Shares
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মহলে জগমোহন ডালমিয়াকে সকলেই দক্ষ প্রশাসক হিসেবে চেনেন। কিন্তু তিনি একই সঙ্গে একজন দক্ষ ক্রিকেটার ছিলেন এটা হয়ত অনেকেই জানেন না। যৌবনে তিনি রাজস্থান ক্লাবের হয়ে কলকাতা লীগ ক্রিকেট খেলতেন এবং সেই সময় ব্যাটসম্যান হিসেবে তিনি যথেষ্ট নাম করেছিলেন। উইকেটরক্ষক হিসেবেও ডালমিয়া খুব ভালো খেলতেন। পরবর্তী সময় তিনি যখন প্রশাসনে আসেন তখনও তিনি কিন্তু খেলার চর্চাটা রেখেছিলেন।
সেই সময় ফ্র্যাঙ্ক ওরেল দে-তে ক্রীড়া সাংবাদিক ও সিএবি প্রশাসকদের মধ্যে একটি ৫০ ওভারের ম্যাচ হত। একদিন সেই ম্যাচে আমি ফিল্ডিং করতে করতে দেখলাম ডালমিয়ার চোখ জুড়ানো ব্যাটিং। চল্লিশের সামান্য বেশি রান করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যেও তাঁর ব্যাট থেকে বেশ কিছু অসাধারণ শট বেরিয়ে এসেছিল। ক্রিকেট ছেড়ে দেওয়ার বহু বছর বাদেও তিনি যে সাবলীলভাবে ব্যাট করলেন তা দেখে আমরা সকলেই চমকে গিয়েছিলাম।
ডালমিয়ার জীবনের মূলমন্ত্র ছিল নিয়মানুবর্তিতা
সত্যি কথা বলতে আজকে ইউরোপিয়ান ফুটবলের মত ক্রিকেটেও যে এত পয়সা এসেছে এর জন্য সবচেয়ে বেশি অবদান জগমোহন ডালমিয়ার। ৮৭ সালের বিশ্বকাপের সময় দূরদর্শনের টিভির সত্ত্ব পাওয়ার কথা। সেই সময় দক্ষ প্রশাসক ছিলেন ভাস্কর ঘোষ। দিল্লিতে গিয়ে ভাস্কর বাবুর সঙ্গে তীব্র তর্ক বিতর্কের পর তিনি সেই সত্ত্ব এক বিদেশী কোম্পানিকে মোটা অঙ্কের বিনিময় বেঁচে দেন। পরবর্তীকালে এই নিয়ে অনেক টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়। কিন্তু ডালমিয়াকে কেউই নড়াতে পারেনি।
সৌরভের সুযোগ পাওয়ার পিছনে সম্বরণের সঙ্গে ডালমিয়ার অবদানও কম নয়
সিএবির প্রশাসক হিসেবে ডালিমিয়া আবির্ভাব লগ্নে কোষাধ্যক্ষের দায়িত্ব পেয়েছিলেন। কোষাধ্যক্ষ হিসেবে তিনি যথেষ্ট সফল। সেই সময় তিনি শুধু টাকার ব্যবস্থা করেননি, প্রচুর টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত করে বহু তরুণ প্রতিভাকে তুলে এনেছেন। তাঁর সেই প্রচেষ্টার ফসল কিন্তু সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ও স্বয়ং। বিভিন্ন টুর্নামেন্টে সফল হয়ে সেই সময় সৌরভ নাটকীয়ভাবে ৯০ সালের রঞ্জি ফাইনালের বাংলা দলে ঢুকে পড়েন। সৌরভের সুযোগ পাওয়ার পিছনে সম্বরণের সঙ্গে ডালমিয়ার অবদানও কম নয়।
ডালমিয়া যেমন ছিলেন কর্মদক্ষ, তেমনই তিনি ছিলেন একজন প্রাণখোলা মানুষ। সৌরভের বাবাই একদিন আমাকে বলেছিলেন " ডালমিয়ার দক্ষতা একদিন গোটা ক্রিকেট বিশ্ব দেখতে পাবে।"
একবার আমি ওনাকে বলেছিলাম যে, "আপনি একদিন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে শাসন করবেন। আমি সেই স্বপ্নটাই দেখি।" উত্তরে তিনি শুধু মুচকি হাসি হেসেছিলেন। তবে আমার স্বপ্ন সত্যি হয়েছে।
ডালমিয়ার তাঁর সবচেয়ে বড় সমালোচকের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন
ভারতের ক্রিকেটের বাঘ বলা হত বিশ্বনাথ দত্তকে। সেই বিশ্বনাথ দত্তকেই পরাজিত করে তিনি বোর্ড সভাপতি হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি ইংরেজদের হারিয়ে আইসিসির সর্বোচ্চ আসন দখল করে নেন।
ডালমিয়ার সবচেয়ে বড় গুন ছিল যে তিনি তাঁর সবচেয়ে বড় সমালোচকের সঙ্গেও সুসম্পর্ক বজায় রাখতেন।
শেষ জীবনে আমি একদিন ডালমিয়াকে জিজ্ঞেস করলাম, "আপনি এত প্রাণ পান কী করে"?
জানেন, জবাবে তিনি ঠিক কী বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, "কঠোর নিয়মানুবর্তিতাই আমার জীবনে প্রান।" ভাবতে কষ্ট এই মানুষটা এখন আর নিয়ম মেনে সন্ধ্যে ছ'টা থেকে দশটা পর্যন্ত ইডেনে আসেন না।