আমরা এখন ইসলামোফোবিয়ার কথা বলছি কিন্তু মানবিকতার অস্তিত্বই তো সঙ্কটে
বিশ্বজুড়ে কাশ্মীরিফোবিয়া বেড়েছে, ভারতে কাশ্মীরিফোবিয়া বৃদ্ধি হয়েছে
- Total Shares
ইসলামিফোবিয়া। কাশ্মীরিফোবিয়া। এই শব্দগুলো মুসলমানদের কাছে রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে উঠেছে।
বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের আক্রমণ করা হচ্ছে। মুসলমানদের প্রতি জমে থাকা বিদ্বেষ কিংবা তাদের সম্পর্কে প্রচলিত কুসংস্কারগুলো থেকেই এই আক্রমণগুলোর সূত্রপাত।
শেষ কয়েকবছরে, আমরা ভারতেই কাশ্মীরিফোবিয়া বৃদ্ধি হতে দেখেছি।
সম্প্রতি, গোটা দেশেই, কাশ্মীরি পড়ুয়া, চাকুরীজীবি এবং ব্যাবসায়ীদের আক্রমণ করা হয়েছে। ১৪ ফ্রেব্রুয়ারি পুলওয়ামা আক্রমণের পর কাশ্মীরিফোবিয়া উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু গোষ্ঠী মিনিট পনেরোর মধ্যে বিখ্যাত হয়ে উঠতে কাশ্মীরি পড়ুয়া ও ব্যবসায়ীদের লাঞ্চিত করেছে। কাশ্মীরিদের আক্রমণ করে তারা তাদের দেশাত্মবোধের পরিচয় দিতে চেয়েছে।
পুলওয়ামা জঙ্গিহামলার পর কাশ্মীরিফোবিয়া বৃদ্বি পেয়েছে [ভিডিও গ্র্যাব]
এদের দেশাত্মবোধ দেখে মনে হচ্ছে দেশের প্রতি তাদের অবদান বোধহয় কাশ্মীরে কর্তব্যরত জওয়ানদের চাইতেও বেশি, যাদের প্রতিনিয়ত কাশ্মীরি মুসলমাদের মাঝে থেকেই সময় ব্যয় করতে হয়। কী ভাবে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মাঝে কাশ্মীরিরা স্বভাবিক জীবন যাপনের জন্য লড়াই করে চলে, তা এই জওয়ানরা কিন্তু পরিষ্কার দেখতে পায়। আর পাঁচজনের মতোই কাশ্মীরিরাও যে তাদের পরিবারকে শান্তিতে রাখতে চায় এবং সন্তানদের একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে চায়, তাও কিন্তু এই জওয়ানদের দৃষ্টি এড়ায় না।
তাই তো জওয়ানরা সাধারণ কাশ্মীরিদের আক্রমণ করে না।
কিন্তু গোটা দেশজুড়েই কাশ্মীরিফোবিয়া চলছে। আর, এই কাশ্মীরিফোবিয়া নিয়ে সাধারণ কাশ্মীরিদের দুশ্চিন্তার অন্ত নেই।
খুব সম্ভবত, নিউজিল্যান্ডের ভয়াবহ হত্যা কাণ্ডের পর মানুষ বুঝতে পারবে যে সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম নেই। এই ইসলামোফোবিয়ার জেরে নিউজিল্যান্ডে ৪৯জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে এবং আরও ৪৮জন আহত হয়েছে। মানুষের অভিব্যক্তিগুলোর মধ্যে সবচাইতে খারাপ অভিব্যক্তি হচ্ছে সন্ত্রাস। সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম নেই, সন্ত্রাসের কোনও দেশ নেই। সন্ত্রাসবাদী হামলা হয়ে চলেছে কারণ আমরা নিজেদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নই এবং মানুষের মূল্য কতটা সে সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণা নেই। যে কোনও দুটি জাতির মধ্যে পারস্পরিক সম্মানটাও নেহাতই কম।
সন্ত্রাসের কোনও ধর্ম নেই, সন্ত্রাসের কোনও দেশ নেই [ছবি: রয়টার্স]
বর্তমান পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন ধরণের সংস্কৃতির মধ্যে থাকা পার্থক্যগুলোকে আমাদের বুঝতে হবে এবং এই পার্থক্যগুলোকে মেনে নিতে হবে। গোড়ামি এবং ধর্মান্ধতা থেকে সন্ত্রাসবাদের জন্ম হয়। তাই, সংযম ও গ্রহণযোগ্যতাই হচ্ছে মূলমন্ত্র।
এই ভয়ঙ্কর আক্রমণগুলো ইসলামোফোবিয়ার জন্যই হচ্ছে। প্রতিটি ধর্মাবলম্বী মানুষদের মধ্যে মুসলমান ধর্ম সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন (ওআইসি) ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো গুরত্ব সহকারে এই সম্পর্কিত প্রচারগুলো করতে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ইসলামিক সোসাইটি (সংক্ষেপে ইসনা) ও এই ধরনের আরও কিছু সংগঠন মুসলমান সমাজের উন্নতির স্বার্থে বেশ কয়েকটি দৃষ্টান্তমূলক কাজ করেছে। এই সংগঠনগুলোর প্রচারের ফলে ইসলাম সম্পর্কিত সচেতনতা বৃদ্ধি করা গিয়েছে এবং ইসলামোফোবিয়া অনেকটাই হ্রাস করা সম্ভব হয়েছে। প্রতিটি সমাজেই এই ধরণের কিছু মঞ্চ থাকা উচিত যারা ইসলামকে মানুষের কাছে তুলে ধরবে, মুসলমান দেশগুলোকে সমর্থন করবে এবং শিক্ষামূলক ও সামাজিক অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করবে যাতে মুসলমানদের সঙ্গে অন্যান্য ধর্মাবলম্বী লোকেদের মধুর সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলগুলোতেও এই ধরণের প্রচেষ্টার প্রয়োজন যাতে ইসলামোফোবিয়াকে নির্মূল করা যেতে পারে।
ভবিষ্যতে এই ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আটকাতে বিদ্বেষ, ভেদাভেদ ও ধর্মান্ধতার বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে এক হতে হবে।
এই আক্রমণগুলো শুধুমাত্র মুসলমানদের ক্ষেত্রেই ট্রাজেডি নয়। প্রতিটি ধর্মাবলম্বী মানুষদের কাছেই এই ঘটনাগুলো অপ্রীতিকর। তাই, মানবিকতার উপর হামলা হলে, প্রতিটি ধর্মাবলম্বী মানুষের একত্রে তার বিরোধিতা করা উচিত।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে