ভারতের পরিপ্রেক্ষিতে ইসলামিক সন্ত্রাস শব্দটি একেবারেই অনুপযুক্ত

শুধু মুসলমান বললে কিছুই বোঝায় না, ইসলাম ধর্মও বহু ছোট-বড় গোষ্ঠীতে বিভক্ত

 |  2-minute read |   29-05-2018
  • Total Shares

ভারতে একটি ধারণা প্রচলিত রয়েছে যে মুসলমান মহিলারা তো বটেই, ও পুরুষরাও পিছিয়ে পড়া শ্রেণীভুক্ত। শুধুমাত্র বোরখা পরিহিত মুসলমান নারীরা নন, মুসলমান পুরুষদেরও আধুনিক হিসেবে গণ্য করা হয় না।

দেশের জনসখ্যার ১৪ শতাংশ মুসলমান। কিন্তু সাধারণ ভাবে তাদের আর্থিক অবস্থাটা বেশ শোচনীয়। এর উপর আবার নতুন একটি শব্দের আমদানি ঘটেছে, 'ইসলামিক সন্ত্রাস'। 

সঙ্ঘ পরিবার ও বাকি হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো সবসময়ই মুসলমানদের দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক হিসেবে প্রচার করে তাঁদের এক ঘরে করে রাখবার চেষ্টা করে চলছেন। একটা কথা আমরা মানতে বাধ্য যে ২০০২ সালে নরেন্দ্র মোদী গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী থাকার সময় যে দাঙ্গা হয়, সেই দাঙ্গায় মুসলমানরা সব চেয়ে বেশি নিহত হয়েছিল।

সবচেয়ে দুশ্চিন্তার বিষয়, দেশের বেশ কিছু বুদ্ধিজীবী ও বিদ্বজনেরাও প্রচার করেন যে মুসলমানদের নিয়ে আতঙ্কের কারণ রয়েছে। শুধু তাই নয় এই বুদ্ধিজীবীরা আবার 'মুসলমান নৃশংসতার' কথা পাঠেক্রমের অন্তর্ভুক্ত করবার জন্য জোর সওয়াল করেন। যে ভাবে সঙ্ঘ পরিবার আশ্রিত বুদ্ধিজীবীরা পাঠ্যক্রম নিয়ে সর্বক্ষণ মাথা ঘামান তাতে খুব শীঘ্রই হয়ত ইসলামিক সন্ত্রাস পাঠ্যক্রমে বাধ্যতামূলক বিষয় হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হবে।

body_052918015400.jpgমুসলমানরা বিভিন্ন ছোট বড় সম্প্রদায়ে বিভক্ত

কিন্তু মৌলিক ভাবে ইসলামিক সন্ত্রাস শব্দটি একেবারেই ঠিক নয়। একই যুক্তিতে ইসলামিক সন্ত্রাস বলে কিছুই নেই সেই ধারণটাও ভুল। এই শব্দটি ব্যবহারের প্রথম সমস্যা মুসলমানদের সার্বিক কোনও সংঘটন নেই। মুসলমানরা বিভিন্ন ছোট বড় সম্প্রদায়ে বিভক্ত। যেমন শিয়া ও সুন্নির মতো বড় সম্প্রদায় এবং আহমদিয়াজের মতো ছোট ছোট সম্প্রদায়।

এই যুক্তিতে শুধুমাত্র মুসলমান বলে কাউকে অভিহিত করে কিছু বোঝানো যায় না। এই যুক্তিতই ইসলামিক সন্ত্রাস কথাটি খাটে না। যেমন ধরুন, বাগদাদে শিয়া সম্প্রদায়ের উপর বোমাবর্ষণ করেছিল আইসিস। এই আইসিস জঙ্গিরা সুন্নি সম্প্রদায়ভুক্ত। সে ক্ষেত্রে তা আর আলাদা করে ইসলামিক সন্ত্রাসের আখ্যা পাবে কী করে?

body1_052918015424.jpgকাশ্মীরে জঙ্গি কার্যকলাপ তো পাকিস্তানের মদতপুষ্ট, এর সঙ্গে ধর্মের সম্পর্ক নেই

ভারতের পরিপ্রেক্ষিতেও ইসলামিক সন্ত্রাস শব্দটির কোনও মানে হয় না। জম্মু ও কাশ্মীরে যে সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলোকে সক্রিয় ভাবে পিছন থেকে মদত জোগাচ্ছে পাকিস্তান, তাদের পিছনে লক্ষ্য একটাই, কাশ্মীরকে ভারত থেকে আলাদা করে দেওয়া।

কিন্তু এতো আর ইসলামিক সন্ত্রাসের লক্ষ্য হতে পারে না বা এই ধরণের লক্ষ নিয়ে কোনও সন্ত্রাসকে ঠিক ইসলামিক সন্ত্রাস বলা চলে না। এই সন্ত্রাসবাদী সংগঠনগুলো কাশ্মীরিদের উপর আক্রমণ করে না। তাদের আক্রমণের লক্ষ ভারতীয় সেনাবাহিনীর জওয়ানরা। কিন্তু আপনি যদি নিরীহ কাশ্মীরিদের হত্যার হিসেবে খুঁজতে যান তাহলে দেখবেন সেই রাজ্যেও দাঙ্গার ফলে হিন্দুত্ববাদীদের হাতে বহু মানুষ নিহত হয়েছেন। কিন্তু আমরা তো কখনও হিন্দুত্ব সন্ত্রাস শব্দটি ব্যবহার করি না। সে ক্ষেত্রে, আমরা কেন ইসলামিক সন্ত্রাস শব্দটি ব্যবহার করে থাকি?

আসল সত্যিটা হল এই যে কিছু লোক কয়েকটি অসৎ উদ্দেশ্য নিয়ে একটি শত্রুপক্ষ খাড়া করবার চেষ্টা করে চলেছেন। অথচ বাস্তবে এই শত্রতার কোনও অস্তিত্বই নেই। বিদেশের শিক্ষাবিদরা কিন্তু এই বিষয় খুবই সচেতন। তাঁরা হুটহাট করে ইসলামিক সন্ত্রাসের মতো শব্দ ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

KAMAL MITRA CHENOY KAMAL MITRA CHENOY @kamaichenoy

The writer is an academic and activist.

Comment