ডোনাল্ড ট্রাম্প যাই বলুক, সাধারণ আফগানদের হৃদয় জুড়ে থাকবে মার্কিন ও ভারতীয় নাগরিকরা

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ভারতীয় সাহায্য নিয়ে মোদীকে কটাক্ষ করেছেন, কিন্তু ভারতের অবদান সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল

 |  3-minute read |   06-01-2019
  • Total Shares

আফগানিস্তান জুড়ে গত এক বছর ধরে চলতে থাকা রক্তপাতের একটা স্বাভাবিক প্রভাব সে দেশের অধিকাংশ বাসিন্দাদের উপর পড়েছে। আমরা 'ঘৃণার' স্বাদ পেতে খুব একটা বেশি পছন্দ করিনা। কারণ, আমরা জানি অতিরিক্ত ঘৃণার পরিণাম কী হতে পারে।

সুতারং, যতই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে নিয়ে মজা করে লাইব্রেরি নির্মাণ নিয়ে কটাক্ষ করুক না কেন, তাঁর প্রতি নিজের বিদ্বেষ দেখাতে চান না কেন, ট্রাম্পের এই প্রচেষ্টা সফল হবে না।

এই অঞ্চলের ইতিহাস সম্পর্কেও তিনি সম্যক ওয়াকিবহাল নন। সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান আক্রমণ করতে এসে দেউলিয়া হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু, তা সত্ত্বেও, এ দেশে বসবাসকারী বা আমাদের (আফগানদের) সঙ্গে কাজ করা মার্কিন নাগরিকদের প্রতি আমরা কোনও রকম বিতৃষ্ণা দেখায়নি।

body_010619024807.jpgযুদ্ধ বিধস্ত আফগানিস্তান [ছবি: রয়টার্স]

ভারতীয় ও মার্কিন নাগরিকরা আমাদের সমাজের একটি অংশ হয়ে উঠতে পেরেছে। কেউ কেউ তো আফগানদের ব্যক্তিগত বন্ধুও হয়ে উঠেছেন। এর কারণ, আর কিছু না পারি আমরা তাদের ভালোবাসা দিতে পেরেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষেত্রে একটা কথা বলতে পারি। দেশের রাজনৈতিক নেতাদের জন্য দেশের সাধারণ মানুষদের দোষারোপ কখনই করা যাবে। পৃথিবীর যে কোনও দেশেই ব্যালট বক্সের প্রতি রাজনৈতিক নেতাদের অকৃত্রিম ভালোবাসা লক্ষ করা যায়।

মোদীকে উদ্দেশ্য করে ট্রাম্পের মন্তব্য আফগানিস্তানে পৌঁছাতেই সোশ্যাল মিডিয়াতে আলড়োন ফেলে দিয়েছে আফগানরা। এ দেশের সাধারণ লোক সোশ্যাল মিডিয়াতে, বিশেষ করে টুইটারে, তাদের প্রতি ভারতের অবদানের কথা লিখতে শুরু করে দিয়েছে। যেমন একজন লিখেছেন, "ভারত আমাদের সত্যিকারের বন্ধু'। আর একটা পোস্টে লেখা হয়েছে, "ভারতীয় আর আফগানরা একে ওপরের সত্যিকারের বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু।'

body1_010619024859.jpgআফগানরা তাঁকে পাত্তা দিতে নারাজ [ছবি: রয়টার্স]

প্রথমে কিছু তথ্য তুলে ধরা যাক। ভারত আফগানিস্তানে কোনও লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠানের জন্য অর্থদান করেছে এ খবর আমার জানা নেই। ২০১৫ সালে আমাদের সংসদ ভবন খোলার সময়ে ভারত থেকে আসা সাহায্যে আমরা ঋণী। এছাড়া, ২১৮ কিলোমিটার লম্বা জরাঞ্জ ডেলারাম রাস্তা নির্মাণে বা হেরাতের ভারত আফগানিস্তানের ফ্রেইন্ডশিপ বাঁধের মতো পরিকাঠামোগত প্রকল্পে ভারতের সাহায্য অনস্বীকার্য। সংস্কৃত ও ক্রীড়াক্ষেত্রে কাবুলের স্তরে রাজপ্রাসাদ পুনরধিষ্ঠিত প্রক্রিয়ায় ও কান্দাহারে ক্রিকেট স্টেডিয়াম নির্মাণের সময়ে সাহায্য করেছিল ভারত।

এছাড়া ভারত সামরিক যন্ত্রপাতি এ দেশে পাঠায় এবং এ দেশের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনীর শ'য়ে শ'য়ে সদস্যকে সামরিক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। এ দেশের ৩১টি প্রভিন্সে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, সেচ ব্যবস্থা, পানীয় জল, বন্যা নিয়ন্ত্রণ, ক্রীড়া পরিকাঠামো ও প্রশাসনিক পরিকাঠামো সংক্রান্ত বেশ কিছু প্রকল্পে সাহায্য করতে চলেছে ভারত।

body2_010619024956.jpgআফগান ক্রিকেটে প্রভূত সাহায্য করেছিল ভারত [সৌজন্যে: আইসিসি]

আমরা জানি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও আমরা বেশ ঋণী। এর জন্যে ট্রাম্পকে ঢাক পিটিয়ে বেড়াতে হবে না। কাবুলের আমেরিক্যান বিশ্ববিদ্যালয়কে কত টাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দিচ্ছে তা আমি নিজে ব্যক্তিগতভাবে জানি। আমি একবারের জন্যেও অস্বীকার করিনা যে আফগানিস্তানের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা খরচ করা হয়। এছাড়া, গ্রেট ব্রিটেনের সেনার মতো বীর মার্কিন সেনারাও এ দেশে যুদ্ধ করতে এসে নিজেদের প্রাণ বলিদান দিয়েছেন।

ট্রাম্প হয়ত পৃথিবীর ইতিহাসকে পুনর্নির্মাণ করতে চাইছেন। কিন্তু ভুলে গেলে চলবে না যে ১৯৭৯ সালে সোভিয়েত আক্রমণের মাশুল আমাদের কী ভাবে গুনতে হয়েছিল। সেই সময় ২০ লক্ষ আফগান এক হয় প্রাণ হারিয়েছিলেন নয়ত প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েছিলেন। প্রায় ৭০ লক্ষ আফগান বাসস্থান হারিয়ে ছিলেন।

bpdy4_010619025107.jpg১৯৭৯ সালে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের আক্রমণ [ছবি: রয়টার্স]

নতুন বছরের শুরুতে ট্রাম্প তাঁর বক্তৃতায় যে আফগানিস্তানকে করা মার্কিন সাহায্যের কথা উল্লেখ করেছেন তাতে কাবুল বেশ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আফগানদের বহু রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছে। তা সত্ত্বেও, ওয়াইট হাউসের বাসিন্দা যেই হোক না কেন, সাধারণ আফগানদের সঙ্গে ভারতীয় ও মার্কিন নাগরিকদের সুসম্পর্ক সর্বদাই অটুট থাকবে।

দুই দেশের নাগরিকরা প্রয়োজনে সর্বদাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছে আর তা আমরা কখনই ভুলব না। তাই তো ভবিষ্যত সম্পর্কে আমি আশাবাদী। আমি মনে করি এই মানবিকতা কখনই হারিয়ে হবে না।

(লেখাটি এসেছে আফগানিস্তান থেকে)

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MOHAMMAD ANIL QASEMI MOHAMMAD ANIL QASEMI @mohammadanil

Entrepreneur, youth activist

Comment