ভারতের তরুণ সমাজের প্রতি আমার আস্থা কেন খুব কম

বেশিরভাগ যুবকই দেশপ্রেমী নয় এবং দেশের সমস্যার যুক্তিগ্রাহ্য সমাধান কী জানে না

 |  3-minute read |   15-09-2018
  • Total Shares

দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের নির্বাচনে চারটি পদের মধ্যে তিনটিতে জয়ী হয়েছে আরএসএসের ছায়া সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ। সকলেই জানে যে আরএসএস হল একটি সাম্প্রদায়িক সংগঠন, অর্থাৎ এ থেকে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে তরুণ সমাজের বড় অংশই এখন সাম্প্রদায়িকতা ও জাতপাতের দিকে ঝুঁকছে।

জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএনইউ) ছাত্র সংসদের নির্বাচনও সন্দেহাতীত ভাবেই বামপন্থীরা জয়ী হবে। কিন্তু প্রশ্ন হল কী ধরনের বিপ্লব এখানে দেখা যাবে যেখানে জেএনইউ ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সভাপতি ঘোষণা করেছেন যে তিনি লোকসভা নির্বাচনে বেগুসরাই থেকে লড়বেন! সন্দেহ নেই যে আরেক জন মহান ‘বিপ্লবী’ শেহলা রাশিদও খুব শীঘ্রই রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন এবং সাংসদ বা বিধায়ক হবেন এবং পরে মন্ত্রীও হয়ে যেতে পারেন যেমন তাঁর আগের সব মহান ছাত্ররা হয়েছেন।

jnu1_091418095345_091518085029.jpgদেশের তরুণসমাজ আবেগপ্রবণ এবং সমস্যা সমাধানে বিজ্ঞানসম্মত সমাধান তাদের কাছে নেই (ছবি: পিটিআই)

অনেকই বলে থাকেন যে তরুণরাই আমাদের একমাত্র ভরসা। তা হতে পারত যদি সত্যিই আমাদের তরুণ সমাজ মনেপ্রাণে দেশপ্রেমিক ও বিজ্ঞানমনস্ক মানসিকতার হত। তবে আমি খুব কম তরুণের মধ্যেই এই গুণাবলি দেখেছি। একবার আমি জেএনইউতে গিয়ে দেখি একদল তরুণতরুণী উপাচার্যের কার্যালয়ের বাইরে "হাল্লা বোল, হাল্লা বোল" বলে চিকার করছে। আমার মনে হয় এই সব 'বিপ্লবী'রা শুধু 'হাল্লা বোল' ও 'আজাদি' বলে চিৎকারটুকুই করতে পারে।

ওরা আবেগপ্রবণ, তবে দেশের সমস্যার কোনও যুক্তিগ্রাহ্য সমাধান তাদের জানা নেই। এই কারণেই ওদের উপর আমার কোনও ভরসা নেই। যারা আখলাক, পেহলু খান ও রাকবর খানকে পিটিয়ে মেরেছ তারাও সকলেই তরুণ, কেউই বয়স্ক নন।

যখন কাশ্মীরি জঙ্গি বুরহান ওয়ানি মারা গেল, শুনেছি তখন নাকি জেএনইউ-র ছাত্র বুরহান ওয়ানি তাকে চে গেভারার সঙ্গে তুলনা করেছিলেন।

চে গেভারার নির্দিষ্ট ও আধুনিক মতাদর্শ ছিল। বুরহান ওয়ানি (এবং অন্য কাশ্মীরি জঙ্গিদের) মতাদর্শ কী? তা হল (ছিলও) ইসলামি মৌলবাদ। সুতরাং যদি ধরেও নিই যে জঙ্গিরা জয়ী হল এবং কাশ্মীর আজাদ হয়ে গেল তা হলেই বা কী হবে? কাশ্মীরের কী হবে? তারা আবার সেই অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগে ফিরে যাবে, শরিয়তি আইন চালু হয়ে যাবে, মহিলাদের জোর করে বোরখা পরতে বাধ্য করা হবে এবং ব্যাভিচারের শাস্তি হবে পাথর ছুড়ে হত্যা করা।  

burhan-wani1_0914180_091518085115.jpgবুরহান ওয়ানির সঙ্গে চে গেভারার তুলনা করেছেন জেএনইউ-র ছাত্রনেতা উমর খালিদ (ছবি: এএনআই)

শুধু তাই নয়, এই ধরনের কথা বলার আগে উমর খালিদ কি চে গেভারার 'ফোকো' তত্ত্ব সম্বন্ধে জানার কোনও প্রয়োজন বোধ করেছিলেন? এই তত্ত্ব অনুযায়ী, যদি কোনও বিপ্লবের কোনও লক্ষ্য পুরো দেশকে জাগাতে না পারে তা হলে তা অন্তত মুষ্টিমেয় মানুষকে জাগিয়ে তুলবে।  

এটা সেই রাশিয়ার প্রাক-বৈপ্লবিক যুগের পুরোনো নারদনিক তত্ত্ব ছাড়া কিছুই নয়, এটাও সেই রক্ষণশীল এক মতবাদ যা ১৯৬৮ সালে বলিভিয়ায় চরম ভাবে ব্যর্থ হয়েছিল এবং দেশটিকে সম্পূর্ণ ভাবে বিধ্বস্ত করে দিয়েছিল, চে নিজেও এই তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছিলেন।

che-copy_09141809570_091518085146.jpg কিউবায় সফল বিপ্লবের রূপকার ছিলেন চে (ছবি: রয়টার্স)

শুধুমাত্র কিউবায় (নির্দিষ্ট কয়েকটি কারণের জন্য) মাত্র দু’বছরের মধ্যে বিপ্লব সফল হয়েছিল বলে চে  মনে করেছিলেন যে সর্বত্রই একই রকম ভাবে সাফল্য আসবে। উমর খালিদ কি এই বিষয়টি জানতেন? আমার তো সন্দেহ রয়েছে।

তাই আমি খুব দুঃখের সঙ্গেই জানাচ্ছি যে ভারতের তরুণ সমাজের প্রতি আমার খুবই কম আস্থা রয়েছে। সোজা কথায় তাদের বেশিরভাগই ব্যক্তিগত জীবনে উন্নতি লাভের ব্যাপারেই আগ্রহী, তারা যদি আইএসএ, পিসিএস বা পুলিশ আধিকারিকের বা কোনও বেসরকারি সংস্থায় এগজিকিউটিভ বা শিক্ষকের আরামের কোনও চাকরি পেয়ে যায় বা আইনজীবী হতে পারে বিপ্লব সেখানেই শেষ হয়ে যায়। অনেকেই রাজনীতিতে যোগ দেয় এবং আমাদের দেশের রাজনীতিকদের মতো কুটিল হয়ে যায়।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

MARKANDEY KATJU MARKANDEY KATJU @mkatju

Former Judge, Supreme Court of India and former Chairman, Press Council of India

Comment