ভারতীয় রেলের সবচেয়ে বড় নামের স্টেশন অন্ধ্রপ্রদেশ-তামিলনাড়ু সীমানায়, সবচেয়ে ছোট ওড়িশায়

এই রাজ্যে রয়েছে এক নামহীন স্টেশন, অধিকার বোধের লড়াইয়ের জন্য নাম দেওয়া যায়নি

 |  3-minute read |   21-10-2018
  • Total Shares

ভারতকে একসূত্রে বেঁধেছে যে তার নাম ভারতীয় রেল। দেশ জুড়ে প্রায় ৮০০০ স্টেশন আর কি বা তাদের নামের বাহার। বহুত্ত্ববাদী ভারতের রেল স্টেশনের নামেও তার প্রতিফলন। কেউ এত্তবড় তো কেউ এট্টুখানি পুচকি কেউ আবার নামসংকর । কোথাও একাধিক গ্রামের নাম মিলিয়ে তো কোথাও ঠাঁই পেয়েছে সম্পর্ক তো কোথাও বিশেষ ঘটনা।

এই প্রসঙ্গে নামকরণের একটা মজার গল্প মনে পড়ে গেল। এক ভদ্রলোকের অনেকগুলো সন্তান সন্ততির পর আবার যমজ সন্তান জন্মালে নাম খুঁজে না পেয়ে একজনের নাম রেখেছিলেন নামতা আর অন্যটির নামমাত্র। যদিও এই সব নামকরণের মধ্যে অনেক বিধি-বিধান, আইন-কানুন আছে আমরা সে সবের মধ্যে না গিয়ে শুধু নামের চমৎকারিত্বের দিকটাই দেখব।সে ভারি মজার ব্যাপার।

ভারতীয় রেলে সবথেকে বড় নামের স্টেশন কোনটি জানেন? অন্ধ্রপ্রদেশ-তামিলনাড়ু সীমানায় রয়েছে ভারতের সবথেকে বড় নামওয়ালা স্টেশনটি। নাম বেঙ্কটনরসিংহরাজুভারিপেটা। দক্ষিণ রেলওয়ের রেনিগুন্টা-আরাক্কোনাম সেকশেন এই স্টেশনটি পড়ে। এখানেই শেষ নয়। এই নামের আগে হামেশাই ‘শ্রী’ বসিয়ে দেওয়া হয়। এই স্টেশনটিতে দিনে মাত্র গুটিকয় প্যাসেঞ্জার ট্রেন থামে। এই বারে দেওয়া যাক আরও একটি বিস্ময়কর তথ্য। অতি কষ্টে উচ্চারিত এই স্টেশনের আসল নাম ‘‘বেঙ্কট নরসিংহ রাজু ভারি বাহাদুর ভারি পেটা।’’

আর ভারতীয় রেলের সবথেকে ছোট্ট নামের স্টেশনটি রয়েছে আমাদের পড়শি রাজ্য ওড়িশায়, স্টেশনের নাম ‘ইব’। ‘ইব’ নদীর পাশেই এই স্টেশনটি গড়ে তোলা হয়। স্টেশনটি বেশ পুরনো। ১৮৯১ সালে নাগপুর-আসানসোল মেন লাইন চালুর পরে এই স্টেশন চালু হয়েছিল। ১৯০০ সালে হাওড়া-নাগপুর-মুম্বই লাইনের অংশ হয়ে ওঠে ইব। এই রেলপথ চালু হওয়ার পরে ঘটনাচক্রে এখানকার মাটির নীচে কয়লা পাওয়া যায়। পরে এই এলাকা ইব ভ্যালি কোলফিল্ড নামে পরিচিত হয়। কেন যে ইব-কেই সবচেয়ে ছোট নামের ষ্টেশন বলে? সে কি ইংরাজি বানান দিয়ে? তবে বাংলা বানান দেখলে আরও আছে- দীঘা, ঘুম, টুং।

body1_102118020102.jpg

body2_102118020119.jpgসবচেয়ে বড় ও ছোট নামের স্টেশন যথাক্রমে অন্ধ্র ও ওড়িশাতে [সৌজন্যে: ভারতীয় রেল]

এতো গেল ছোট আর বড়র গল্প কিন্তু মজা অভি বাকি হ্যায় দোস্ত, কী নেই সেই সব নামে?

ভাতার আছে, শালী আছে, সহেলী আছে, আছে মিঁয়া কি ওয়াদা, লোটা পাহাড় আছে, পঞ্জাবে আছে কালাস্তেসন। বিহারে বিল্লি জংশন। আগ্রার আশে পাশে আছে মুত গলি, ঘটিয়া আজম খান, গাধা পাদ আরও কতো কি! বাঙ্গালোরের কাছে আছে লোট্টে গোল্লা হাল্লি, আর ওড়িশায় আছে সিঙ্গাপুর রোড স্টেশন। কেরলে দিভাইন নগর, মুম্বাইয়ের চিনচকোপোলি। রাজস্থানের একটা ষ্টেশনের নাম ওরনিয়া চাচা (a cross-dressing uncle)। উঁহুঁ, এখানেই শেষ নয়- নামের এই মস্ত ঝুলি এতে রাম রাবণ আছে, নেবে এ এ এ...? আরও আছে এই রাজস্থানে যেমন শ্রী ভদ্রিয়া লাঠি, জেঠা চন্দন। উত্তরবঙ্গের কোচবিহারে আছে রাজাভাতখাওয়া।

রেলেতে নামসংকরায়ণও হয়েছে বৈকি, যেমন পটনা আর মুঘলসরাইয়ের (এই নামটির ঐতিহাসিক মূল্য থাকায় অপরিবর্তিত রাখলাম)মাঝে টুইনিংগঞ্জ (Twiningganj), বেরিলী আর রামপুরের মাঝে ক্লাটারবাকগঞ্জ (Clutterbuckganj) সবচেয়ে মজার নামসংকরায়ণের উদাহরণ রয়েছে বিজয়ওয়াড়া এবং গুডুরের মাঝে স্টুয়ার্টপুরম (Stuartpuram)।

body_102118020208.jpgপশ্চিমবঙ্গে রয়েছে এক নামগোত্রহীন স্টেশন [ছবি: ইন্ডিয়া টুডে]

এই বাংলায় পুরুলিয়াতে আছে বা ছিল অপ-প্রচারিত ভুতুড়ে স্টেশন বেগুনকোদর, আর বহুত্ববাদের এক চরম উদাহরণ দক্ষিণ পূর্ব রেলের নারায়ণপাকুড়িয়ামুড়াইল স্টেশন। তিনটি পাশাপাশি গ্রামের নাম জুড়ে এই স্টেশনের নাম হয়।

আরও মজার হল এই ভারতের এই বাংলায় রয়েছে এক নামহীন ষ্টেশন। অধিকার বোধের লড়াই থেকে এই বিপত্তি। বাঁকুড়া-মসাগ্রামের মধ্যে রাইনা বা রাইনগর। প্রাথমিক ভাবে স্টেশনের বোর্ডে নাম ছিলো রাইনগর। কিন্তু সমস্যা শুরু হতে স্টেশন বোর্ড থেকে রাইনগর নামটি মুছে দেওয়া হয়।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PALLAB MUKHOPADHYAY PALLAB MUKHOPADHYAY

The writer is the former Public Relations Officer, South Eastern Railway and an avid historian.

Comment