শতাব্দীর খাবার খেয়ে অসুস্থ যাত্রীরা: গাফিলতির দায় রেলকেও নিতে হবে
রেলকে দেখেই যাত্রীরা টাকা দেন, হোটেল রেস্তোরাঁ বা ক্যাটারিং সংস্থাকে দেখে নয়
- Total Shares
খাবারে বিষক্রিয়া হয়ে চলন্ত ট্রেনেই অসুস্থ হয়ে পড়লেন পুরী-হাওড়া শতাব্দী এক্সপ্রেসের অন্তত তিরিশ জন যাত্রী।
খবরের প্রকাশ, ভোরবেলা পুরী স্টেশন ছেড়ে ভুবনেশ্বরে পৌঁছে ট্রেনে ব্রেকফাস্ট দেওয়া হয়। খাওয়ার মিনিট পঁচিশ পর থেকেই কয়েকজন যাত্রী বমি করা শুরু করেন। এরপর আরও কয়েকজন একই রকম শারীরিক অস্বস্তির অভিযোগ করেন। ট্রেন যখন বালেশ্বর পৌঁছয় তখন যাত্রীরা সন্দেহ করেন রেলের দেওয়া খাবার থেকেই গোলমাল। সঙ্গে সঙ্গে কোচ অ্যাটেন্ডেন্ট এবং টিকিট চেকারদের জানান যাত্রীরা। তাঁরাই যোগাযোগ করেন খড়্গপুরে রেলের আধিকারিকদের সঙ্গে।
ট্রেন খড়গপুর পৌঁছাবার পর খড়্গপুরে অসুস্থ যাত্রীদের নামিয়ে রেল হাসপাতালে ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। রেলের চিকিৎসকরাই যাত্রীদের চিকিৎসা শুরু করেন। যাঁদের অবস্থার অবনতি হয়েছে এমন ১৪ জনকে সেখানকার রেল হাসপাতালে ভর্তি করে হয়। বাকি যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসার পর ট্রেন খড়্গপুর থেকে হাওড়ার উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
রেলের তরফ থেকে জানান হয়েছে যে ওই ট্রেনে মোট ৪৯৫টি খাবারের প্যকেটের ব্যবস্থা করা হয়েছিল। পুরী থেকেই খাবার উঠেছিল। রেলের এক আধিকারিকের দাবি, "খাবার পরীক্ষা করা হচ্ছে। যদি রেলের খাবার থেকেই এই বিষক্রিয়া হয়ে থাকে তবে দোষীদের কঠোরতম শাস্তি হবে।”
এই অভিযোগ প্রথম নয়, এর আগেও বহুবার শতাব্দী, দুরন্ত এমনকি রাজধানীর খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে
তবে এই অভিযোগ তো প্রথম নয়। এর আগেও বহুবার শতাব্দী, দুরন্ত এমনকি রাজধানীর খাবারের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অতীতেও বহু ক্ষেত্রে এই ভাবে যাত্রীরা অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। এবং প্রতিবারই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে রেল। বেশির ভাগ তদন্তে কী রিপোর্ট বেরিয়েছিল তা আর জানা সম্ভব হয়নি।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে - আউটসোর্স করা একটি সংস্থার ঘাড়ে দায়িত্ব চাপিয়ে রেল কি এই ভাবে নিজেদের দায়ে সারতে পারে?
reax of K R reddy, DRM KGP after Shatabdi exp food poison case pic.twitter.com/lqFbLGxFo8
— SumitroBandyopadhyay (@sumitrob) May 24, 2018
একটা কথা মাথায় রাখতে হবে যাত্রীরা কিন্তু ভারতীয় রেলেকেই দেখেই শতাব্দী, রাজধানী বা দুরন্তের টিকিট কাটে, যে ট্রেনগুলোতে বাইরে থেকে খাবার কিনে খাওয়ার সম্ভাবনা খুব কম। এই ট্রেনগুলোতে রেলের তরফ থেকে খাবার দেওয়া হয় আর তার জন্য রেল যাত্রীদের টিকিটের উপরে বাড়তি টাকা দিতে হয়। খাবারের জন্য এই বাড়তি টাকার পরিমাণ নেহাতই কম নয়।
সেই টাকা তো যাত্রীরা কোনও হোটেল, রেস্তোরাঁ বা ক্যাটারিং সংস্থাকে দেখে দেয় না। দেয় ভারতীয় রেলকে দেখে। সুতারং, ট্রেনে যাত্রীদের 'নিরাপদ' খাবার দেওয়ার দায়িত্ব কখনই এড়াতে পারে না রেল। প্রয়োজন পড়লে পরিকাঠামো বাড়াতে হবে। প্রয়োজন পড়লে আরও ভালো মানের পরিচিত ক্যাটারিং সংস্থাকে নিয়োগ করতে হবে। সে ক্ষেত্রে খবারের দাম হিসাবে বাড়তি টাকা রেল নিতে পারে যাত্রীদের থেকে। কিন্তু পয়সা কম বলে শুধুমাত্র ছোট ছোট অনামী ক্যাটারিং সংস্থাগুলোকে নিয়োগ করে যাত্রীদের অসুস্থ করে দেওয়ার মধ্যে কোনও যুক্তি থাকতে পারে না।
রেল অবশ্য এখনও বলছে, ওই যাত্রীদের বেশির ভাগই একটি গ্রুপের, ট্রেনটি সকালে ছাড়ার সময় যাত্রীরা অন্য কোনও জায়গা থেকে খাবার খেয়েছিল কিনা সেই খোঁজও নেওয়া হচ্ছে।