সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন কিন্তু একটা মস্ত বড় চ্যালেঞ্জ

সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন মানে শুধু শক্তি বৃদ্ধি নয়, তার সম্মানও বজায় রাখতে হবে

 |  3-minute read |   19-07-2018
  • Total Shares

বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম সেনাবাহিনী ভারতের। সেই ভারতীয় সেনাবাহিনী এবার ব্যাপক ভাবে পুনর্গঠনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।

ভারতীয় মাত্রই ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য গর্ববোধ করি। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ভারতীয় সেনাবাহিনীর স্বাস্থ্য একবারেই ভালো নয়। তাই এই পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় একটি প্রশ্নই বারংবার উদয় হচ্ছে - এই পুনর্গঠন কি সমস্ত সমস্যার সমাধান করতে পারবে? এর আগে ২০০৪ সালে ভারতীয় সেনাবাহিনী এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেছিল।

একটা বিষয়ে দৃষ্টিপাত করা যাক: ভারতীয় সেনাবাহিনীর জন্য বরাদ্দ অর্থের ৮৭ শতাংশই খরচ হয়ে যায় দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করতে, যার মধ্যে রয়েছে জিনিসপত্র রক্ষণাবেক্ষণ, স্পেয়ার পার্টস ও কর্মচারীদের বেতনের খরচ। এই আর্থিক বছরের হিসেবে অনুযায়ী (যা ৩১ মার্চ, ২০১৯ সালে শেষ হবে) সেনাবাহিনীর বেতনের খরচ ৮০,৯৪৫ কোটি টাকা হবে বলে হিসেব করা হয়েছে। পেনশন বিলের হিসেবে আরও ৯৫,৯৪৯ কোটি টাকা।

উল্টোদিকে, এই আধুনীকিকরণের খরচ ২৬,৬৮৮ কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে।

সেনাবাহিনীর এক বর্ষীয়ান আধিকারিকের মতে, "এই ভাবে চলতে থাকলে একটা সময় আসবে যখন বেতন, পেনশন ও দৈনন্দিন ব্যয় নির্বাহ করে সেনাবাবিহিনীর ভাঁড়ারে উদ্বৃত্ত বলতে কিছুই থাকবে না।"

নিঃসন্দেহে, ভারতীয় সেনাবাহিনীর শৌর্ষ তার ঐতিহ্য বহন করে। কিন্তু সেনাবাহিনীর সমস্যাগুলোও কিন্তু বেশ ঐতিহ্যমণ্ডিত।

উনিশ শতকের প্রথম দিকে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির হাত ধরে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পত্তন ঘটে। শুরুর দিনগুলোতে এই সেনাবাহিনীকে মারাঠা, শিখ, আফগানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছিল। কালে কালে এই সেনাবাহিনীর রূপের অনেক পরিবর্তনই ঘটেছে। কিন্তু এর সেনাবাহিনীর আদব-কায়দা এখনও অনেকটাই ঔপনিবেশিক রীতি-নীতি মেনেই চলে আসছে। পৃথিবীর কোনও সেনাবাহিনীর সৈনিক ও আধিকারিকদের জন্যে এখন আর বিভিন্ন ভাষায় যুদ্ধের রীতিনীতি পাঠ করাবার প্রথা চালু নেই। এই কিছুদিন আগে পর্যন্তও ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিজস্ব খাটাল ছিল যেখানে কয়েক হাজার উন্নত মানের গরু রাখা থাকত।

body_071918053019.jpg

আরও একটি প্রশ্ন রয়েছে, স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে আমরা আমাদের সেনাবাহিনীর সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করব?

সেনাবহিনী অভিযোগ তুলেছে যে স্বাধীনতার পর থেকেই আমলাদের থেকে তাদের সম্মান অনেকটাই কমেছে। কথাটা কিছুটা সত্যি। ব্রিটিশ ভারতে সেনাবাহিনী সবচেয়ে বেশি সম্মান পেত কারণ সেই যুগে সেনবাহিনীকে ব্যবহার করে দেশ শাসন করা হত।

কিন্তু আমলাদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর সম্মান এক করে দিলে সেনাবাহিনীর সম্মান কিন্তু কমবে বই বাড়বে না। একটি রাষ্ট্রের কাছে সেনাবাহিনী অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই তাদের অবহেলা করা কখনই উচিৎ নয়।

সেনাবাহিনীর আরও একটি বিষয় নিয়ে চিন্তা করবার প্রয়োজন রয়েছে। শর্ট সার্ভিস কমিশনের কি আরও বাড়াতে হবে? পিরামিড আকারে পার্মানেন্ট সার্ভিসে কমিশন মানে উপরের দিকে চাহিদার সৃষ্টি হবে। তাই তো প্রতিটি পদে ৪০ শতাংশ মতো অফিসারকে ছেটে ফেলতে হয়।

সেনাবাহিনীর পশু বিভাগে ৩,০০০ আধিকারিক ও হাজার আটেক খচ্চর রয়েছে। এ ছাড়া সেনাবাহিনীতে গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণার জন্য প্রচুর লোক নিয়োগ করা আছে। এখন প্রশ্ন হচ্ছে ভারতীয় সেনাবাহিনীর কি সত্যি এত কিছুর প্রয়োজন রয়েছে? গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব কি প্রস্তুকারক সংস্থার উপর তুলে দেওয়া যায় না? আর যখন হেলিকপ্টার করে মাল প্রত্যন্ত অঞ্চলে পৌঁছে দেওয়া যায় তখন এতগুলো খচ্চরের কীসের প্রয়োজন?

এই ঐতিহ্যমণ্ডিত বিষয়গুলো ছাড়াও সেনবাহিনীর উদ্ভট ধরণের পদগুলোর উপরও নজর দিতে হবে।

আইএএস এবং আইপিএসের মতো ভারতীয় সেনাবাহিনীরও কি মাত্র ছ'টি পদ রাখা উচিৎ? সেনাবাহিনীর এখন নয়টি পদ রয়েছে। একটি প্রস্তাব আনা হয়েছে যে সকল আধিকারিককে মেজর জেনারেল হিসেবেই অবসর নিতে হবে। একজন ব্রিগেডিয়ারের অধীনে ৩,০০০ লোক থাকে আর মেজর জেনারেলের অধীনে ৯,০০০ লোক থাকে। রেজিমেন্ট, ব্রিগেড, ডিভিশন ও কর্পসের মতো পদগুলো থাকুক। ব্রিগেডিয়ার পদটি সরিয়ে দিলে শুধুমাত্র কোলোনেলদের সিনিয়র কোলোনেল হিসেবে সম্বোধন করতে হবে।

এই মুহূর্তে ভারতীয় সেনাবাহিনীর পুনর্গঠন মানে শুধুমাত্র শক্তিশালী বা সমৃদ্ধশালী করে তোলা নয়। আমাদের দেখতে হবে পুনর্গঠনের পর সেনাবাহিনী সম্মান কতটা বৃদ্ধি পায়।

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

sudhi ranjan sen sudhi ranjan sen @sudhiranjansen

Editor, India Today TV. Covers security and diplomatic issues.

Comment