এক দশক ধরে হচ্ছে না ভারত পাক টেস্ট সিরিজ: ক্রিকেট ও ভক্তদের কাছে এ অপূরণীয় ক্ষতি

দুই দেশ মুখোমুখি হলে নতুন নায়কের জন্ম হয়, আবার নায়করাও শহীদ হন

 |  4-minute read |   13-06-2018
  • Total Shares

গত মাসে পাকিস্তান যে ভাবে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে লর্ডস টেস্ট জিতল তা কিন্তু সচরাচর দেখা যায় না। উপমহাদেশের টেস্ট দল ইংল্যান্ডের স্যাতস্যাতে ঠান্ডা আবহাওয়ায় খেলতে যাওয়া মানেই প্রথম টেস্টে পরাজয় অবধারিত। কোথাও যেন একটা অলিখিত নিয়ম আছে: ইংল্যান্ড দল যতই দুর্বল হোক না কেন, বিলেতে সিরিজের প্রথম টেস্টে উপমহাদেশের দলকে নাস্তানাবুদ হতেই হবে।

প্রায় এক দশক ধরে সংযুক্ত আরব আমিরশাহী পাকিস্তানের "ঘরের মাঠ"। সে দেশের খেলোয়াড়দের জন্য আইপিএলে কোনও লোভনীয় চুক্তি বরাদ্দ নেই। তাঁরা বিশ্ব জুড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া অপেক্ষাকৃত কম জনপ্রিয় টি-২০ টূর্ণামেন্টগুলো খেলে বেড়ান। হাতে গোনা কয়েকজন পাকিস্তানি ক্রিকেটারের কাউন্টি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এত সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও, গত পাঁচ বছর ধরে টি-২০ ও একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে পাকিস্তান কিন্তু বেশ ভালো পারফর্ম করে চলেছে।

body1_061318022753.jpgলর্ডসে নয় উইকেটে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছে পাকিস্তান

বছরখানেক আগে ইংল্যান্ডে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শুরুটা ভালো করতে পারেনি পাকিস্তান। তবে, শেষ পর্যন্ত সেমিফাইনালে ইংল্যান্ডকে নিজেদের ঘরে মাঠে উড়িয়ে দিয়ে ও ফাইনালে ভারতকে পরাস্ত করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান। ওই টুর্নামেন্টে পাকিস্তানের পারফর্মেন্স দেখে অনেকেরই ১৯৯২ বিশ্বকাপের কথা মনে পড়ে গিয়েছিল। ৯২ সালে অস্ট্রেলিয়াতেও বিশ্বকাপের মাঝ পর্বে পাকিস্তানের বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করে দিয়েছিল। কিন্তু সেখান থেকে অনবদ্য প্রত্যাবর্তন করে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয় ইমরান খানের পাকিস্তান

এখন প্রশ্ন হল, পাকিস্তানের এই ধরণের রাজকীয় পারফর্মেন্সগুলোর ব্যাখ্যা কী ভাবে করা সম্ভব?

body_061318022818.jpg২০০৪ সালে সৌরভের নেতৃত্বে পাকিস্তানে প্রথম সিরিজ জেতে ভারত

পাকিস্তানের ধাবাহিকতার অভাব ইংল্যান্ডেও লক্ষ করা গেছে। লর্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্ট জিতেও লিডসে দ্বিতীয় টেস্টে পরাজিত হয়েছে পাকিস্তান। পাক সমর্থকরা নিশ্চয়ই দ্বিতীয টেস্টে হারের পর মনমরা হয়ে পড়েছিলেন। কিন্তু তাঁদের প্রতি সশ্রদ্ধ সম্মান জানিয়েই বলছি এর জন্যেই দল হিসেবে পাকিস্তান আর পাঁচটা দলের থেকে আলাদা। তাই তো ক্রিকেট প্রেমী মাত্রেই পাকিস্তানের খেলা চেটেপুটে উপভোগ করে। কোনও সিরিজ বা টুর্নামেন্টে পাকিস্তান অংশগ্রহণ করা মানেই তা জমে যেতে বাধ্য।

অনেকটা যে ভাবে গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে ভারতের বিরুদ্ধে খেলেছিল সেইভাবেই ইংল্যান্ডের সঙ্গে দুটি টেস্ট খেলল পাকিস্তান। চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির রাউন্ড ম্যাচে হতশ্রী ক্রিকেট খেলেছিল পাকিস্তান। অথচ ফাইনালে সেই দলটিই অসাধারণ। পাকিস্তান ঠিক যেন দক্ষিণ আফ্রিকার উল্টো। হ্যান্সি ক্রোনিয়ের দেশের যেমন একদিনের ক্রিকেটে 'ভালো খেলিয়াও চ্যাম্পিয়ন না হতে পারার' সুদীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে।

টেস্ট ক্রিকেট সংগঠনের ক্ষেত্রে সব সময় দু দেশের শত্রুতা, মানসিকতা ও দুই দেশের পারফর্মেন্স ও দুই দেশের ক্রিকেট দ্বৈরথের ইতিহাস গণ্য করা উচিৎ। যেমন ধরুন ভারত শ্রীলঙ্কা সিরিজ। কোনও কারণ ছাড়াই গত দশবছর ধরে এই দুই দেশ নিজেদের মধ্যে ভুঁড়ি ভুঁড়ি ম্যাচ খেলে গেছে।

body2_061318022854.jpgভারত পাক ম্যাচ মানেই নতুন নায়কের আবির্ভাব

কয়েকটি ম্যাচ বাদ দিলে ভারত শ্রীলঙ্কার বেশিরভাগ খেলাই প্রচন্ডরকমের একঘেয়ে। উল্টোদিকে ভারত পাকিস্তান সিরিজগুলো দেখুন। যে কোনও ফরম্যাটেই ভারত পাকিস্তান ম্যাচ মানে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। ভারত শ্রীলঙ্কার মতো দুটি অসম প্রতিপক্ষের লড়াই নয়।

তাই তো খুব কষ্ট হয় এই ভেবে যে প্রায় এক দশক হতে চলল ভারত পাকিস্তানের মধ্যে কোনও দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজ হচ্ছে না। বিশ্বের দুই কঠিনতম প্রতিপক্ষের মধ্যে যদি বছরের পর বছর টেস্ট ম্যাচ না হয় তাহলে তা কিন্তু ক্রিকেটের কাছে বড় ক্ষতি।

বর্তমান ভারতীয় দলের কোনও ক্রিকেটারই এখনও অবধি ভারত-পাক সিরিজের উত্তেজনা আঁচ উপলব্ধি করতে পারেননি। পড়ে পাওয়া যে কয়েকটি ম্যাচে প্রতিপক্ষ হিসেবে পাকিস্তানকে পাওয়া গেছে সেখানে বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মা ভালো পারফর্ম করেছিলেন।

body3_061318022925.jpgপ্রায় এক দশক হতে চলল ভারত পাকিস্তানের মধ্যে কোনও দ্বিপাক্ষিক টেস্ট সিরিজ হচ্ছে না

গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে দুটি ম্যাচে ভারত পাকিস্তান মুখোমুখি হয়েছিল। তার আগে সেই ২০১৫ বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ওভালে। ২০১৬ সালের টি-২০ এশিয়া কাপে একটি ভারত পাকিস্তান ম্যাচ হয়েছিল। এই প্রত্যেকটা টুর্নামেন্টেই দু'য়ের বেশি দল খেলেছিল।এর থেকে পরিষ্কার যে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নিয়ে কোনও পক্ষেরই কোনও আগ্রহ নেই। দেখে শুনে মনে হচ্ছে, দুটি দেশ যেন দূর সম্পর্কের আত্মীয়, শুধুমাত্র পারিবারিক কোনও অনুষ্ঠানের সময় একে ওপরের সঙ্গে সাখ্যাত হয়।

গত এক দশক ধরে ভারত ও পাকিস্তানের যে কটা হাতেগোনা ম্যাচ হয়েছে তাতেও নতুন নতুন নায়কদের জন্ম হয়েছে। ২০১১ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ওয়াহাব রিয়াজ, ২০১২ সালে ঢাকাতে বিরাট কোহলি এবং গত বছর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে ফাকহার জামান। এই ম্যাচগুলোতে অনেক নায়ককেই আবার শহীদও হতে হয়েছে। যেমন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালের বিরাট কোহলি।

এত নাটকীয় মুহূর্তের পরও বিশ্বের দুটি সর্ব শক্তিমান দল এক দশকের উপর টেস্ট খেলেনি। তাই মনে প্রশ্ন জাগে ভারত পাক ম্যাচ ছাড়া বিশ্ব ক্রিকেট নাটকীয় হয়ে উঠবে কী ভাবে?

লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

RAHUL JAYARAM RAHUL JAYARAM @rajayaram

The writer is Assistant Professor at the Jindal School of Liberal Arts & Humanities.

Comment