বিরাটের ভারত স্বপ্ন দেখাচ্ছে সমর্থকদের, দলে যোগ্য পেসারদের অভাব পূরণ হয়েছে

পাকিস্তান ইমরান-আক্রম-ওয়াকার ইউনিসদের তৈরি করতে পারলেও ভারত পারত না কেন

 |  3-minute read |   31-08-2018
  • Total Shares

১৯৯২ সালের একটি টেস্ট ম্যাচের কথা মনে পড়ে যাচ্ছে। আজহারউদ্দিনের ভারত তখন অস্ট্রেলিয়া সফরে। সিরিজের তৃতীয় টেস্ট সিডনিতে। শেন ওয়ার্নের অভিষেক হয়েছিল সেই ম্যাচে। সিডনির সেই টেস্টেই বিহারের বঙ্গসন্তান সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়েরও অভিষেক ঘটেছিল। সেই ম্যাচে মোট চারজন পেসার নিয়ে নেমেছিলেন আজহারউদ্দিন - সুব্রত ছাড়াও দলে ছিলেন কপিল দেব, মনোজ প্রভাকর ও জাভাগল শ্রীনাথ।

প্রথমে ব্যাট করতে নেমে ৩১৩ রান তোলে অস্ট্রেলিয়া। জবাবে রবি শাস্ত্রীর দ্বিশতরান ও সচিনের শতরানের উপর ভর করে ভারত প্রথম ইনিংসে ৪৮৩ রান করেছিল। ১৭০ রানে পিছিয়ে থেকে শেষ দিনে অস্ট্রেলিয়া আট উইকেটে ১৭৩ রান তুলে কোনও মতে ম্যাচ বাঁচায়। শেষ দিনে টানটান উত্তেজনার মধ্যে অল্পের জন্য টেস্ট হাতছাড়া হওয়ার নিদর্শন বহু রয়েছে। কিন্তু সেদিন অনেক ভারতীয় সমর্থকই আজহারের উপর ক্ষোভে ফেটে পড়েছিলেন। ক্ষোভের যথেষ্ট কারণও ছিল।

body_083118021655.jpgদেবাশিস মোহান্তিরা ধারাবাহিক ভাবে টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারেননি, শ্রীনাথ পেরেছিলেন

অস্ট্রেলিয়ার প্রথম ইনিংসে ভারতীয় বোলারদের মধ্যে সেরা ছিলেন সুব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেক ম্যাচে মাত্র ১৮ ওভার হাত ঘুরিয়েই ৪৭ রানে ৩ উইকেট পেয়েছিলেন সুব্রত। দুই ওপেনার - জিওফ মার্শ ও মার্ক টেলর ছাড়াও সুব্রতের শিকারের তালিকায় ছিলেন মার্ক ওয়া। অথচ কোনও এক অজানা কারণে প্রথম ইনিংসের সেরা বোলারকে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যবহারই করা হল না। এখানেই শেষ নয়, সুব্রত আর কোনও দিনও টেস্ট খেলার সুযোগ পাননি।

এবার আসা যাক চার বছর পরে ইংল্যান্ডের এক গ্রীষ্মের কথায়। সেবারও ভারতীয় দলের নেতা আজহারউদ্দিন। বার্মিংহামে বসে ছিল সিরিজের প্রথম টেস্ট। ভারতীয় ক্রিকেটে সেই ম্যাচটি উল্লেখযোগ্য একটি কারণে। দুই পেসার, ভেঙ্কটেশ প্রসাদ ও পরশ মামরে-সহ মোট চারজন ভারতীয়র অভিষেক ঘটেছিল সেই ম্যাচে। এই সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে আরও দু'জন ভারতীয়র অভিষেক হয়ে ছিল - সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় ও রাহুল দ্রাবিড়। পর পর দু'টি টেস্টে একটি দলের ছ'জনের অভিষেক কিন্তু খুব একটা বেশি লক্ষ করা যায় না।

body1_083118021802.jpgইমরান, আক্রাম, ওয়াকারদের তৈরি করতে পারত পাকিস্তান, কিন্তু আমরা পারতাম না

প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসে চারটি উইকেট পেয়ে ছিলেন প্রসাদ। দ্বিতীয় ইনিংসে আরও দুটি। পরের টেস্টটি লর্ডসে ছিল। আর, সেই  টেস্টের প্রথম ইনিংসে পাঁচ উইকেট নিয়েছিলেন প্রসাদ। কর্নাটকের এই পেসার যে জাভাগল শ্রীনাথের সঙ্গে জুটি বেঁধে অনেকদিন ভারতীয় ক্রিকেটে শাসন করবেন তাঁর নিদর্শন কিন্তু একেবারে শুরুর দিন থেকেই দেখতে পেরে ছিলেন তিনি। আগের টেস্টে তাঁর সঙ্গে টেস্ট অভিষেক হওয়া পরেশ মামরে অবশ্য হারিয়ে গেলেন। বার্মিংহ্যামের পর লর্ডসেও সুযোগ পেয়েছিলেন মামরে। কিন্তু সুযোগ কাজে লাগাতে না পেরে মামারের টেস্ট জীবন মাত্র দুটি টেস্টেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়।

উপরের দুটি ঘটনা থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার। স্বাধীনোত্তর ভারতীয় ক্রিকেট বরাবরই ভালো মানের পেস বোলারের অভাবে ভুগেছে। আবার অনেক সময় ভালো মানের পেস বোলার পাওয়া গেলে ভারতীয় ক্রিকেটের অন্ধকার রাজনীতিতে তাঁরা হারিয়ে গিয়েছেন। পরেশ মামরে ছাড়াও, সলিল আঙ্কোলা, আবে কুরুভিল্লা, অজিত আগরকর, মুনাফ প্যাটেল, দেবাশিস মোহান্তি - শেষ দশকে ভারতীয় টেস্ট দলে সুযোগ পাওয়া বা দলের কড়া নাড়া পেস বোলারের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। কিন্তু হাতে গোনা কয়েকজন ছাড়া শেষ দু'দশকে ভারতীয় দল ম্যাচ-উইনার পেসার পেল কোথায়, যারা টেস্ট দলে নিয়মিত খেলেছেন।

নব্বইয়ের দশকের যখন ক্রিকেট বুঝতে শুরু করি তখন থেকেই একটা প্রশ্ন বারংবার উদয় হত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পারে, অস্ট্রেলিয়া পারে এমনকি প্রতিবেশী পাকিস্তানও ইমরান খান, ওয়াসিম আক্রম, ওয়াকার ইউনিসদের মতো পেসার তৈরি করতে পারে। কিন্তু ভারত কেন পারে না? কপিল দেবের অবসরের পরে কখনও শ্রীনাথ, কখনও প্রসাদ, কখনও জাহির খান, কখনও ইরফান পাঠানদের পাওয়া গিয়েছে ঠিকই, কিন্তু একসঙ্গে একাধিক ম্যাচ উইনার পেসার ভারতীয় দল কোনও দিনও পায়নি।

body2_083118021847.jpgবুমরাহরা স্বপ্ন দেখাচ্ছেন ভারত সমর্থকদের

একটু ভুল বলা হল। বিরাট কোহলির ভারত পেয়েছে। বুমরাহ, শামি, ইশান্ত শর্মা এরা প্রত্যেকেই ম্যাচ উইনার। অর্থাৎ, একার হাতে ম্যাচ জেতাবার ক্ষমতা রাখেন। তার চেয়েও বড় বিষয় ভুবনেশ্বর কুমারের মতো প্রতিভা চোট কাটিয়ে দলে ফেরার জন্য অপেক্ষা করছেন। শামিরা খুব ভালো করেই জানেন যে এখন আর বিলাসিতার কোনও জায়গা নেই। একটি ম্যাচ খারাপ খেললেও হয়ত কোপ পড়তে পারে। আর, তাই ভালো পারফর্ম্যান্সের জন্যে এরা প্রতিদিনই মুখিয়ে থাকে।

সৌরভের ভারত হয়তো বিদেশে টেস্ট জিততে শিখিয়েছে আমাদের। কিন্তু বিদেশে সিরিজ জয় সেই সময়তেও নিয়মিত ভাবে আসেনি। তার কারণ তখনও নিয়মিত ভাবে বিপক্ষের ২০ উইকেট দখল করার মতো পেসারের অভাব ছিল। 

২০১৮ সালের বিরাটের ভারত কিন্তু ভারত সমর্থকদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। বিরাট-শাস্ত্রী যদি স্ট্রাটেজি ঠিক রাখতে পারেন তা হলে বিদেশের মাটিতেও টেস্টে ভয়ঙ্কর হয়ে  উঠবে ভারত।

নটিংহ্যাম টেস্ট ও সাউদাম্পটন টেস্টের প্রথম ইনিংস তো সেই কথাই জানান দিচ্ছে।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

ARPIT BASU ARPIT BASU @virusfound007

Arpit Basu is the Special Correspondent with the India Today Group’s fact check team. With more than one-and-a-half decade's experience in print and digital media, he has reported on aviation, transport, crime, civic and human interests issues. His sting operation on how precious Aviation Turbine Fuel, meant for Kolkata airport, was pilfered and sold in local market as ‘white kerosene’ received widespread acclaim. Arpit has worked with reputed media houses like The Times of India and Hindustan Times and had received letter of appreciation for reporting during the Phalin cyclone in Odisha in 2013.

Comment