ক্রিকেটে নয়া ইতিহাস বাংলাদেশের মেয়েদের
২০০৪ থেকে শুরু হয়েছে মেয়েদের এশিয়া কাপ, শেষ ছয়ে বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ভারত
- Total Shares
অসাধারণ এক জয়ে এশিয়া কাপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশের মেয়েরা। এশিয়া কাপে তীরের কাছে গিয়েও কূলের দেখা পায়নি ছেলেরা। অথচ প্রথমবার ফাইনালে গিয়ে অবিশ্বাস্য এক অর্জন করে দেখালো সালমারা। ঈদের আগে সমর্থকদের ঈদ উপহার হিসেবেই এসেছে এই শিরোপা। রবিবার এশিয়া কাপে ছয়বারের চ্যাম্পিয়ন ভারতকে ৩ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো এই শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ।
যে কোনও পর্যায়ের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এটাই সেরা সাফল্য। গ্রুপ পর্বে ভারতকে হারানোর অভিজ্ঞতা ফাইনালে বেশ কাজে দিয়েছে। ওই ম্যাচের চেয়ে ফাইনাল ম্যাচে আরও বেশি আক্রমণাত্মক ছিল মেয়েরা।
২০০৪ থেকে শুরু হয়েছে মেয়েদের এশিয়া কাপ। ভারত গত ৬ আসরের সবগুলোতেই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। বাংলাদেশ এবারের আসরসহ তিনটি আসরে মাঠে নেমেছে। আগের দুই আসরে সাদামাটা পারফরম্যান্স করলেও তৃতীয় আসরে শিরোপা জেতার স্বাদ পেয়েছে সালমারা। শুধু তাই নয়, আরও একটি বৃত্ত ভেঙেছে বাংলাদেশ। এতদিন ভারতের বিপক্ষে খেলা মানেই ছিল বাংলাদেশে হার। ভাগ্যদেবীর ছোঁয়ায় এবার সেই অসাধ্য সাধন করেছে বাংলাদেশ। সব মিলিয়ে ১০টি টি-টোয়েন্টিতে মুখোমুখি হওয়া দুই দলের মধ্যে ভারত জিতেছে ৮টিতে। হারের বৃত্ত ভেঙে বাংলাদেশ এই টুর্নামেন্টেই জিতলো দুটিতে।
কুয়ালালামপুরে ভারতের দেওয়া ১১৩ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি বাংলাদেশের। জাহানার-শুকতারার ব্যাটে সহজেই এসেছে জয়। ওপেনিং জুটিতে আয়েশা ও শামিমা শুরুটা ভালোই করেছিলেন। তবে ভারতীয় স্পিনার পূনম যাদবের পর পর দুই বলে আয়েশা (১৬) ও শামিমা (১৭) সাজঘরে ফিরলে কিছুটা বিপদে পড়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এই জুটিতে আসে ৩৫ রান। দুই ওপেনারকে হারিয়ে ভারতের বিপক্ষে গ্রুপ পর্বে হাফসেঞ্চুরি করা ফারজানা হক ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান নিগার সুলতানা দেখে শুনে খেলতে থাকেন। যদিও অফস্ট্যাম্পের বাইরের একটি বল খেলতে গিয়ে উইকেট কিপারের হাতে ক্যাচ দিয়ে সাজঘরে ফেরেন ফারজানা (১১)।
এশিয়ার সেরা বাংলাদেশ
চতুর্থ উইকেটে নিগার ও ওয়ানডে অধিনায়ক রুমানা মিলে জয়ের কাছেই নিয়ে যাচ্ছিলেন দলকে। আচমকা বাংলাদেশ শিবিরে চিন্তার ভাঁজ ফেলে দেন ক্যাচ আউট হয়ে। পূনম যাদবের ফুলটস বল মিড অনে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলে দারুণ একটি ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। ২৪ বলে ৪ চারে ২৭ রানের ইনিংস খেলেন নিগার।
বাকি দায়িত্বটুকু ঠিকভাবেই সামলাচ্ছিলেন ফাহিমা-রুমানা। আর শেষ দিকেই নড়বড়ে পরিস্থিতিতে পড়ে যায় বাংলাদেশ। সাত রান করে আউট হন ফাহিমা। ৬ষ্ঠ উইকেটে সানজিদা ও রুমানা মিলে জয়ের কাছেই ছিলেন। কিন্তু সানজিদা বাউন্ডারি লাইনে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেওয়ার পর পর রুমানাও ফিরে যান রান আউটে। ফেরার আগে ২২ বলে ২৩ রানের ইনিংস খেলেন অভিজ্ঞ এই অলরাউন্ডার।
শেষ বলে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল দুই রান। জাহানারা বলটি বাঁ পাশে ঠেলেই দেন ছুট। দৌঁড়ে দুই রান নিয়ে প্রথমবারের মতো শিরোপা জয়ের উপলক্ষ এনে দেয় মেয়েরা। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ৭ উইকেট হারিয়ে। ম্যাচসেরা হয়েছেন রুমানা আহমেদ। টুর্নামেন্ট সেরা ভারতের অধিনায়ক হারমানপ্রীত কর।
যে কোনও পর্যায়ের ক্রিকেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের এটাই সেরা সাফল্য
এর আগে টসে জিতে আগে ব্যাটিং করা ভারত সালমাদের বোলিং তোপে ৯ উইকেটে মাত্র ১১২ রানের পুঁজি তুলতে সক্ষম হয় বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। শুরুতেই ভারতীয় ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরতে সক্ষম হয়েছিল বাংলাদেশ। দলীয় ১২ রানে স্মৃতি মন্ধানাকে ফিরিয়ে ত্রাস ছাড়ানো শুরু সালমাদের। তাকে রান আউটে শিকার করেন অধিনায়ক সালমা। ৩২ রানে চার উইকেট হারিয়ে সেই চাপরা আরও বাড়ে ভারতের। যদিও শেষ পর্যন্ত অধিনায়ক হারমানপ্রীতের অসাধারণ ইনিংসের কল্যানেই মান বাঁচে ভারতের।
একপ্রান্তে থেকে রানের চাকা সচল রেখেছেন কেবল শেষ পর্যন্ত তার দায়িত্বশীল ৫৬ রানের ইনিংসে ভর করে ৯ উইকেটে ১১২ রানে থেমেছে ভারত। ইনিংসের শেষ বলে বিদায় নিয়েছেন ভারতীয় অধিনায়ক। যোগ্য সঙ্গী না পাওয়া শেষ দিকে কিছুটা চড়াও হয়েছিলেন একাই। তার ৪২ বলের ইনিংসে ছিল ৭টি চার।
বাংলাদেশের পক্ষে দুটি করে উইকেট নেন খাদিজা তুল কুবরা ও রুমানা আহমেদ। একটি করে উইকেট নেন সালমা খাতুন ও জাহানারা।