শুধু স্বাদের জন্যই নয়, ইলিশ খান পুষ্টির জন্যও
‘ইলিশ মাছ যদি রোজ খাওয়া হয় তা হলেও তেমন কোনও ক্ষতি হয় না’
- Total Shares
কথাতেই বলে মাছে-ভাতে বাঙালি। আর বর্ষাকাল পড়তে না পড়তেই বাজারে ছেয়ে যায় ছোট-বড় নানা রকম ইলিশ মাছ। বাঙালির অতি প্রিয় ইলিশ। ভাজা ইলিশ হোক বা সর্ষে বাটা ইলিশ, কিংবা ইলিশের পাতলা ঝোল, ইলিশ মাছের যে কোনও পদই আমরা তারিয়ে তারিয়ে খাই। ইলিশ মাছের নামটাই সব বাঙালির জিভে জল আনে।
প্রত্যেকটি মাছের নানান পুষ্টিগুণ আছে। তবে ইলিশ মাছ খাবার সময় শুধুমাত্র স্বাদের কথা চিন্তা করেই আমরা মাছটি খাই। ইলিশ মাছ পাতে পড়লে তার ডিম থেকে শুরু করে কাঁটা পর্যন্ত কিছুই আর পড়ে থাকে না। ইলিশ মাছ যেমন সুস্বাদু তেমনই ইলিশ মাছের অনেক পুষ্টিগুণ আছে।
ইলিশ মাছ যদি রোজ খাওয়া হয় তাহলে তেমন কোনও ক্ষতি হয় না
অন্যান্য মাছের তুলনায় ইলিশ মাছে অনেক বেশি পরিমাণে প্রোটিন ও ফ্যাটি অ্যাসিড বা স্নেহ পদার্থ রয়েছে। ইলিশ মাছে যে স্নেহ পদার্থ বা ফ্যাটি অ্যাসিডটি থাকে সেটা হল ওমেগা-৩। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডটি হার্টকে ভালো রাখে কারণ শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রাও নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
ইলিশে থাকে নায়সিন, ট্রিপ্টোফ্যান, ভিটামিন বি ১২, সোডিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, সেলেনিয়াম, দস্তা, আয়োডিন এবং পটাশিয়াম। অনেক মাছে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের পরিমাণ খুব বেশি থাকে। স্যাচুরেটেড ফ্যাট শরীরের অনেক রকম ক্ষতি করে। তবে ইলিশে স্যাচুরেটেড ফ্যাটের মাত্রা অনেক কম।
কথাতেই বলে মাছে-ভাতে বাঙালি
ইলিশে থাকা ওমেগা-থ্রি ত্বক ভালো রাখে। শরীরে ব্যথা হলে ইলিশ মাছ খেলে তা অনেকটাই উপশম হয়। ইলিশ মাছ স্নায়ুকে সতেজ রাখে, মস্তিষ্ক ভালো রাখে এবং স্মৃতিশক্তিও বৃদ্ধি করে।
সুতরাং ইলিশ মাছ যদি রোজ খাওয়া হয় তাহলেও তেমন কোনও ক্ষতি হয় না।
যদিও অনেকেই মনে করেন ইলিশ মাছ বেশি পরিমাণে খেলে খুব সহজে হজম হতে চায় না যার ফলে পেটের সমস্যা দেখা দিতে পারে কিংবা গ্যাস-অম্বলও হতে পারে। আর একটা কথা বলব যাদের হজমের সমস্যা আছে তাঁরা নিরাশ হবেন না। তাঁদের বলব যেদিন সর্ষে বাটা ইলিশ বা ইলিশ পাতুরি খাবেন সেদিন বাকি খাবারগুলো যেন একটু হালকা হয়।
তবে গবেষণায় দেখা গেছে কেউ যদি দীর্ঘদিন ধরে স্বল্প পরিমাণে ইলিশ মাছ খান তাহলে তাঁর শরীরে ক্ষতিকর কোলেস্টেরলের মাত্রা যেমন কম হয় তেমন ভাবেই শরীরের পক্ষে উপকারী কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়।
ইলিশে থাকা ওমেগা-থ্রি ত্বক ভালো রাখে
তবে একটা কথা মনে রাখতে হবে যেই পরামর্শটা আমি সবসময় দিয়ে থাকি সেটা হল সব কিছুই খেতে তবে মাত্রা বুঝে। যেকোনও খাবার যেমন অতিরিক্ত খাওয়া ভালো নয় ঠিক তেমন ভাবেই ইলিশ মাছও খেতে হবে পরিমিত মাত্রায়।
অর্থাৎ ১০০ গ্রাম মতো ইলিশ মাছ রোজ খাওয়া যেতেই পারে তাতে কোনও ক্ষতি হবে না। তবে যাঁরা ইলিশ মাছ খেতে খুব ভালোবাসেন আর ইলিশের মরসুমে পাতে চাই ইলিশ তাঁদের উদ্দেশে বলব প্রত্যেকদিন সর্ষে বাটা বা খুব তৈলাক্ত রান্না না খেয়ে যদি ইলিশের পাতলা ঝোল খান তাহলে কোনও সমস্যা হয়ে না। ইলিশ মাছ বায়ু কমায়, পিত্ত ও কফ কম করে।
যদিও এখন সারা বছরই বাজারে সব রকম মরশুমি খাবারদাবারই পাওয়া যায় তাই ইলিশ মাছও এখন বছরের যে কোনও সময় বাজারে মিলে যাবে। তবে বর্ষা কালে সব চেয়ে টাটকা এবং তাজা ইলিশটাই বাজারে পাওয়া যায়।
এমন বহু মানুষ আছেন তাঁদের বিভিন্ন মাছে অ্যালার্জির হওয়ার প্রবণতা থাকে। তাই তাঁদের আমি পরামর্শ দেব যে আগে যাচাই করে নিন ইলিশ মাছ খেলে চুলকানি বা অ্যালার্জির কোনও সমস্যা দেখা দিচ্ছে কি না। নিশ্চিত হয়ে তবেই ইলিশ মাছ খান।
প্রত্যেকটি মাছের নানান পুষ্টিগুণ আছে
যাঁদের উচ্চ রক্তচাপ কিংবা ডায়াবেটিসের সমস্যা রয়েছে তাঁরা চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে ইলিশ খান।
তাই বর্ষাকালে প্রাণ ভোরে খান ইলিশ মাছ।