ভারতে হৃদরোগে মৃত্যুর হার কমাতে চাই স্বাস্থ্য পরিকাঠামোয় উন্নতি ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা
আগামী ১৫ বছরে দেশে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের হার বাড়তে পারে ৩৪%
- Total Shares
একদিকে যেমন হৃদরোগ ও অন্যান্য কার্ডিওভাসকুলার রোগের কারণে মৃত্যুর হার কমেছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে উল্টোদিকে ভারতে আগামী ১৫ বছরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃতের হার বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে মোটামুটি ৩৪ শতাংশ হারে। আমেরিকান কলেজ অফ কার্ডিয়োলজি থেকে প্রকাশিত সাম্প্রতিক একটি গবষণামূলক সমীক্ষায় এই আশঙ্কার কথা জানানো হয়েছে।
বর্তমানে ভারত ও ভারতীয় উপমহাদেশে হৃদরোগ, বিশেষ করে কার্ডিয়ো-ভাস্কুলার রোগে আক্রান্ত হয়ে বহু মানুষের মৃত্যু ঘটে। জীবনধারা ও বিভিন্ন কারণে মানসিক চাপের ফলে এখন অল্পবয়সীদের মধ্যেও হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোক লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়ে যাচ্ছে। খাদ্যাভ্যাস থেকে শুরু করে পরিবেশ দূষণ-- এই সবকিছুই হৃদরোগীর সংখ্যা বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ভারতীয়দের মধ্যে ডায়াবেটিস রোগটির আধিক্য রয়েছে যার ফলে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যা হয়।
নানা কারণে হৃদযন্ত্রে সমস্যা হতে পারে। আমাদের অনেককেই এখন দীর্ঘক্ষণ বসে বসে কাজ করতে হয় যার ফলে কোনও রকম ব্যায়াম তো হয়ই না, হাঁটাচলাও করা হয় না। ভারতীয়দের খাবারদাবারে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেডের আধিক্য থাকে যার ফলে হার্টের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
হৃদরোগের আর একটা বড় কারণ হল ধূমপান। ধূমপানের কারণে যেমন ক্যান্সারের মতো মরণ রোগ হতে পারে তেমন ভাবে যাঁরা ধূমপান করেন তাঁদের মধ্যে হৃদরোগ হওয়ার অশঙ্কাও থাকে খুব বেশি। যাঁরা সবেমাত্র ধূমপান করা আরম্ভ করেছেন সেই সব নতুন ধূমপায়ীদের সংখ্যা আমেরিকার চেয়ে আমাদের দেশে অনেক বেশি। শুধুমাত্র ধূমপান নয় পান, বিড়ি, জর্দা কিংবা গুটকা সেবনের কারণেও হৃদরোগ দেখা দিতে পারে। এমনটা ভাবার কোনও কারণই নেই যে আমাদের দেশে তামাক সেবনের ক্ষতিকর দিকগুলোর সম্বন্ধে যথেষ্ট সচেতনতা নেই, কিন্তু তাও প্রত্যেক বছর ধূমপায়ীদের সংখ্যাটা বেড়েই চলেছে।
ইতিমধ্যে ডায়েবেটিসের মতো এমন রোগ, যাতে শরীরের ক্ষয় দ্রুত হয়, সেই ধরনের রোগ নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আমেরিকায় ব্যবহার করা হচ্ছে দুটি বিশেষ ওষুধ জিএলপি-১ ও ক্যানাগ্লিফ্লজিন (GLP-1, canagliflozin)। এই দুই ওষুধ ডায়াবেটিসকে যেমন নিয়ন্ত্রণে রাখছে তেমনই ডায়াবেটিসের ফলে হৃদযন্ত্রের যে সব সমস্যা হয় সেগুলো পুরোপুরি সারাতে সক্ষম। তবে আর্থিক দিক বিচার করে এবং দামের কথা ভেবে আমাদের দেশের চিকিৎসকরা এই ওষুধ দিয়ে রোগীর চিকিৎসা করতে পারছেন না। যদিও আমাদের দেশে এই দুটি ওষুধ পাওয়া যায়, কিন্তু রোগীর সাধ্যের কথা ভেবে চিকিৎসকরা অন্যান্য ওষুধ দিয়েই চিকিৎসা চালান।
শরীরে কোলেস্টরলের মাত্রা বেশি থাকলেও দেখা দিতে পারে হৃদযন্ত্রের সমস্যা। কোলেস্টরল নিয়ন্ত্রণ করার জন্য যে সব বিশেষ ওষুধ পাওয়া যায় সেগুলোর চল আমাদের দেশের এখনও তেমন ভাবে শুরু হয়নি।
অন্যান্য দেশের তুলনায় ভারতীয় মহিলাদের মধ্যে আর্টারির সমস্যা বেশি দেখা যায়। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের মধ্যেও বিভিন্ন হৃদজনিত সমস্যা দেখা যাচ্ছে। আবার অনেকের ক্ষেত্রে রোগ বংশানুক্রমেও আসে।
ভারতীয়দের মধ্যে হৃদরোগটা হয়, এ ছাড়াও বংশপরম্পরাগত ভাবেও এই রোগগুলো হতে পারে। এমন বহু অসুখ আছে যা ভারত ও ভারতীয় উপমহাদেশেই শুধু দেখতে পাওয়া যায়। যদিও এই সব সমস্যার চিকিৎসা আমেরিকা ও অন্যান্য দেশে রয়েছে কিন্তু আমাদের দেশে ওষুধ বাজারে এখনও পাওয়া যায় না।
খুব স্বাভাবিক ভাবেই একটা চিন্তা চিকিৎসক মহলকে বেশ ভাবায় সেটা হল আমাদের দেশে জনসংখ্যা যে ভাবে বেড়ে চলেছে সেই অনুপাতে কী স্বাস্থ্য পরিকাঠামো বাড়ছে? হার্ট এটাক বা স্ট্রোক হলেই যে রোগী মারা যাবে এমনটা কিন্তু নয়। তবে একজনের হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোক হলে তাঁকে কত তাড়াতাড়ি চিকিৎসা পরিষেবা দেওয়া যাচ্ছে তার উপরে সেই রোগীর আরোগ্য নির্ভর করে। আমাদের দেশে বহু গ্রামাঞ্চলে প্রাথমিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থাই এখনও গড়ে ওঠেনি।
আমাদের দেশে পরিকাঠামোর অভাবে হার্ট অ্যাটাক হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই একজন মানুষকে চিকিৎসা দেওয়া অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাই এখানে মৃত্যুর সংখ্যা যে বেশি হবে সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে সেটা ভেবে নিরাশ হয়ে পড়লে চলবে না।
গ্রামাঞ্চলে এই সমস্যাটা বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে স্বাস্থ্য বিষয়ক সচেতনতাও এখনও অনেক কম।
তাই যাতে হৃদরোগ মহামারীর আকার ধারণ করতে না পারে তাই সাধারণ মানুষকেও যেমন সচেতন হতে হবে সরকারকেও সচেতন হতে হবে এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা ও স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নতি ও সুষ্ঠু পরিকল্পনার দিকে আরও জোরও দিতে হবে।