সরকারি হাসপাতালের নার্সদের নতুন ড্রেসকোডে লঙ্ঘিত হবে রোগী-সুরক্ষা

পোশাকের রং নীল-সাদা হলে পরিষেবা বাড়বে না, ক্যাপ না থাকলে ছড়াবে জীবাণু

 |  3-minute read |   05-06-2018
  • Total Shares

বহু বছর ধরে চলে আসা নার্সদের পোশাক নাকি পাল্টে যেতে চলেছে। সেই অষ্টাদশক শতকের মাঝামাঝি সময় থেকে চলে আসছে নার্সদের এই পোশাক। নার্সদের ইউনিফর্ম ফ্লোরেন্স নাইটিঙ্গেলের সময় থেকেই শুরু হয়। পোশাকের সাদা রং আস্থা ও শান্তির প্রতীক। এ ছাড়া সাদা রং হল পরিছন্নতারও প্রতীক।

প্রত্যেকটা পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সেই পেশার পোশাক বা ইউনিফর্ম ঠিক করা হয়। পোশাক দেখে সেই ব্যক্তির পেশাকে আমরা নির্ধারণ করতে পারি যেমন পুলিশ, সেনা, চিকিৎসক কিংবা আইনজীবীর পেশা। পোশাক নির্ণয়ের পেছনে অবশ্যিই অনেকগুলো বৈজ্ঞানিক কারণও রয়েছে।

নির্দিষ্ট একটি নার্সিং সংগঠন নার্সদের পোশাকের এই চিরাচরিত সাদা রং পাল্টাতে উদ্যোগই হয়েছে। কিন্তু আমার মনে হয় এই বদল একেবারেই নিষ্প্রয়োজন।

body1_060518043729.jpgএই রাজ্যে নার্সিং শিক্ষার পরিকাঠামোটিও তেমন জোরদার নয়

আমরা রোগীদের স্বাস্থ্য পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি তাই অনেক সময় অপরিছন্নতা থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। নার্সরা সাদা পোশাক পরেন যাতে তাঁদের পোশাকে কোনওরকম নোংরা বা রক্ত লাগলে সেটা সহজেই দেখা যায়, না হলে তা থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।  কিন্তু এই পোশাকটি যদি রঙিন হয় তাহলে সেই নোংরা দাগ বা রক্তের দাগ চট করে চোখে নাও পড়তে পারে এবং এ থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।

নার্সিংয়ের ক্ষেত্রে এর আগেও একবার ইউনিফর্ম পরিবর্তন হয়েছিল। তখন শাড়ি থেকে চুড়িদার পরার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। এতে অবশ্য আপত্তির তেমন কোনও জায়গা নেই, কারণ শাড়ি পরে পরিষেবা দেওয়ায় অনেক প্রতিবন্ধকতা থাকে এবং সাবলীল ভাবে চলা ফেরাতেও অসুবিধা হতে পারে। নতুন নিয়ম কার্যকর হলে নার্সদের পোশাকের রং হবে নীল শাড়ি, তাতে থাকবে সাদা পাড়। 

আগে নার্সদের গয়না পরার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা ছিল, অর্থাৎ কর্তব্যরত অবস্থায় তাঁরা কোনও রকম গয়না পরতে পারতেন না। কারণ গয়না বা হাতের ঘড়ি থেকে সংক্রমণ ছড়াতে পারে। কিন্তু পরবর্তী সময়ে নার্সদের গয়না পরার ব্যাপারটা শিথিল করে দেওয়া হয়। গয়না বা হাত ঘড়ি থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে রোগীর শরীরের ক্ষতি হতে পারে। 

body2_060518043803.jpgঅন্যান্য পেশায় যেখানে ইউনিফর্ম পড়তে হয় সেখানে কী ইচ্ছে করলেই এতো সহজে পোশাকের ডিজাইন বা রং পাল্টে দেওয়া সম্ভব হবে?

এরপর সাদা জুতোতেও বদল আসে। সাদা জুতোর জায়গায় আসে কালো জুতো পরার চল। তাই এখন নার্সরা সাদা পোশাকের সঙ্গে কালো জুতো পরেন। 

তখন আমরা আন্দোলন করেছিলাম এবং স্মারকলিপিও জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু তাতে তখন কোনও কাজ হয়নি।

এবার দাবি উঠেছে নার্সরা যে মাথার ক্যাপ ব্যবহার করেন সেটা নাকি আর থাকবে না। ক্যাপ মাথার চুলকে বিন্যস্ত রাখে এবং চুল থেকে কোনও রকম সংক্রমণ ছড়াবার আশঙ্কাও কম হয়।

আরও একটা বিষয় হল এই ধরণের কোনও বদল আনতে হলে সেই গোষ্ঠীর বাকিদেরও সঙ্গে পরামর্শ করে তবেই কোনও বদল আনা সম্ভব। কিন্তু এ ক্ষেত্রে কারও পরামর্শ নেওয়া হয়েনি এই মুহূর্তে রাজ্যে সরকারি হাসপাতালগুলোতে নার্সের সংখ্যা মোটামুটি ৩৬ হাজারের কাছাকাছি। 

আমরা মনে করছি শহরের বিভিন্ন ভবন, সেতু, বাড়ি, উদ্যান ও বাতিস্তম্ভগুলোকে ঠিক যেমন ভাবে সাদা নীল রং করে ফেলা হচ্ছে ঠিক সে ভাবেই এ বার নার্সদের পোশাকের রং নীল-সাদা করা হবে।

সরকারি হাসপাতালের রক্ষণাবেক্ষণের বিভিন্ন বিভাগগুলো যেমন বেসরকারি সংগঠন পরিচালনা করছে, তেমন ভাবেই খুব অল্প সময়ের মধ্যে কী তা হলে নার্সিং বিভাগটিকেও কোনও বেশিসরকারি সংগঠনের হাতে তুলে দেওয়া হবে?

body3_060518043923.jpgরাজ্যে সব সরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে নার্সদের সংখ্যা মোটামুটি ৩৬ হাজারের কাছাকাছি

প্রায় সমস্ত সরকারি হাসপাতালেই যত সংখ্যায় নার্স সংখ্যা থাকা উচিৎ তার চেয়ে অনেক কম সংখ্যক নার্স দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে, তাই নার্সদের উপরে সব সময়েই বাড়তি চাপ থাকে। এ ছাড়া আমাদের রাজ্যে নার্সিং শিক্ষার পরিকাঠামোটিও তেমন জোরদার নয়।  তাই এই সব নিয়ে আন্দোলন না করে ও এই সব ক্ষেত্রে বদলের কথা না বলে পোশাক পরিবর্তনের বিষয়টিতে কেন জোর দেওয়া হচ্ছে সেটা ঠিক পরিষ্কার নয়।

অন্যান্য পেশায় যেখানে ইউনিফর্ম পরতে হয় সেখানে কী ইচ্ছে করলেই এত সহজে পোশাকের ধরণ ও রং পাল্টে দেওয়া সম্ভব হবে?  তাহলে নার্সদের ক্ষেত্রে নিয়মের ব্যতিক্রম কেন হবে?

তাই পাকাপাকি ভাবে নার্সদের পোশাকের রং বদলে দেওয়ার আগেই আমরা এই আন্দোলনের পথ বেছে নিয়েছি। পাশাপাশি আমরা মনে করি ইন্ডিয়ান নার্সিং কাউন্সিলেরও এই বিষয় নীরব না থেকে প্রতিবাদ করা উচিৎ। 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

PARBOTI PAL PARBOTI PAL

SECRETARY, NURSES UNITY

Comment