প্যারামেডিক্যালের পাঠক্রম তো দুরঅস্ত্, এঁদের কোনও কলেজ ভবন পর্যন্ত নেই
অনেকেই বিভিন্ন কারণে হতাশ হয়ে মাঝপথে এই পড়াশোনা ছেড়ে দিচ্ছেন
- Total Shares
২০০২ সালে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অধীনে দা স্টেট মেডিক্যাল ফ্যাকাল্টি অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল (The State Medical Faculty of West Bengal) -এর দ্বারা প্যারামেডিক্যাল কোর্সগুলি চালানো হয়। প্রতিবছর প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার পড়ুয়া এই কোর্সে ভর্তি হন। পশ্চিমবঙ্গের প্রায় সমস্ত সরকারি মেডিক্যাল কলেজগুলিতে এবং বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে এই কোর্স মেনে পড়ানো হয়ে থাকে। এই মুহূর্তে সরকারি হাসপাতালগুলোতে প্যারামেডিক্যাল পড়ুয়াদের সংখ্যাটা হল প্রায় আড়াই হাজারের কাছাকাছি আর বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে মোটামুটি দেড় হাজারের মতো ছেলেমেয়ে প্যারামেডিক্যাল পড়ছেন। তবে এঁদের মধ্যে অনেকেই পরিকাঠামোর অভাবে, দিনের পর দিন ক্লাস হচ্ছে না দেখে এবং উচ্চশিক্ষার কোনও রকম সুযোগ নেই বলে হতাশ হয় কোর্স শেষ না করেই মাঝপথে প্যারামেডিক্যাল ছেড়ে দিয়ে অন্য ক্ষেত্রে চলে যাচ্ছেন।
২০০২ ও ২০১৩ সালের পরে এ বছর অনেকদিন পর বেশ অনেক পদে নতুন টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ করা হবে।
ইন্টার্নশিপের সময় যৎসামান্য ভাতা দেওয়া হয়
দীর্ঘদিন ধরেই প্রত্যেকটি প্যারামেডিক্যাল পড়ুয়া বিভিন্ন সমস্যার মধ্যে রয়েছে যেগুলো বারবার বলা সত্বেও কোনও সমাধান হয়নি। সেগুলোর মধ্যে কয়েকটা ইস্যু নিয়ে এখানে আলোচনা করলাম।
সঠিক শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব: এই কোর্সগুলো পড়াবার জন্য কোনও প্রশিক্ষক নেই। নির্দিষ্ট কোনও সিলেবাসও নেই। ক্লাসের কোনও নির্দিষ্ট রুটিন বা শিডিউলও নেই। থিয়রিটিক্যাল কোনও শিক্ষার ব্যবস্থা নেই। যাঁরা প্র্যাক্টিক্যাল করেন তাঁদের জন্য ঠিকঠাক যন্ত্রপাতি মজুত থাকে না।
পরিকাঠামোর অভাব: প্যারামেডিক্যালের জন্য কোনও পূর্ণাঙ্গ কলেজে ভবন পর্যন্ত নেই।
উচ্চশিক্ষার সুযোগ নেই: ডাক্তারিতে ও নার্সিংয়ে উচ্চশিক্ষার ব্যবস্থা থাকলেও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট বা প্যারামেডিক্যালের ক্ষেত্রে এই সুবিধাটা নেই। যদিও বাইরের বিভিন্ন রাজ্যে প্যারামেডিক্যালে উচ্চশিক্ষার অনেক সুযোগ রয়েছে। আমি মনে করি প্রতিবছর যে হাজার হাজার ছেলেমেয়ে এই কোর্সটিতে ভর্তি হচ্ছেন তাঁরা যদি বিষয়টি নিয়ে আরও পড়তে চান তা হলে এই রাজ্যে থেকে তাঁদের পক্ষ সেটা করা সম্ভব নয়। তাই অনেক ক্ষেত্রেই তাঁদের উচ্চশিক্ষার স্বপ্ন স্বপ্নই থেকে যায় কিংবা তাঁদের দেশান্তরে যেতে হয় পড়াশোনার জন্য। মাত্র দু'বছরের কোর্সে কখনও প্যারামেডিক্যালের সব দিকগুলো ঠিক ভাবে শেখা হয় ওঠে না।
হয়। শরীরকে এই রশ্মি থেকে বাঁচাবার জন্য যে সব শিল্ডগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো খুবই পুরোনো
অনৈতিক ভাবে খাটানো হয় - বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে পুড়ুয়াদের অনৈতিক ভাবে খাটানো হয়। ছাত্রছাত্রীদের দিয়ে মর্নিং, ইভনিং, নাইট ডিউটি করানো হয়। এমনকি রবিবারেও এঁদের দিয়ে ডিউটি করানো হয়ে থাকে যেগুলো প্রাক্টিকাল ক্লাস বলে চালানো হয়। কর্মচারীদের মতো, ছাত্রছাত্রীদের নামেও ডিউটি রস্টার তৈরি করা হয়। অনেক সময় নানা শরীরিক অসুস্থতা নিয়েও ডিপার্টমেন্টের চাপে তাঁদের উপস্থিত থাকতে হয়।
কোনও রকম হোস্টেলের ব্যবস্থা নেই - নার্সিং ও ডাক্তারি পড়ুয়াদের হোস্টেল থাকা সত্বেও প্যারামেডিকেল পুড়ুয়াদের কোনরকম কোনও হোস্টেলের ব্যবস্থা নেই। রোজই হাসপাতালে ডিউটি করার জন্য দূর দূরান্ত থেকে পড়ুয়াদের হাসপাতালে, যথা সময় পৌঁছাতে হয়।
লাইব্রেরির অভাব -ছাত্রছাত্রীদের পড়াশুনার সুবিধার জন্য নিদেনপক্ষ্যে একটা ছোট লাইব্রেরিও নেই।
ইন্টার্নশীপ ভাতা-ইন্টার্নশীপ-এর সময় যৎসামান্য ভাতা দেওয়া হয়।
নানা শরীরিক অসুস্থতা নিয়েও ডিপার্টমেন্টের চাপে তাঁদের উপস্থিত থাকতে হয়
স্বাস্থ্য সুরক্ষা: কোনও ধরনের স্বাস্থ্য সুরক্ষা সুবিধা নেই। অনেক প্যারামেডিক্যাল ছাত্রছাত্রীকে বিভিন্ন অনেক পরীক্ষাগারে বিভিন্ন ক্ষতিকর বিচ্ছুরণের মধ্যে সারাক্ষণ কাজ করতে হয়। শরীরকে এই রশ্মি থেকে বাঁচাবার জন্য যে সব শিল্ডগুলো ব্যবহার করা হয় সেগুলো খুবই পুরোনো। অনেক জায়গায় সেই শিল্ডগুলো অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। যাঁরা পরীক্ষাগারে কাজ করেন তাঁদের এইচআইভি এবং হেপাটাইটিস বি-র মতো রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থা বা টিকাকরণের ব্যবস্থা নেই।
তৃণমূলপন্থী ছাত্র সংগঠন অল বেঙ্গল প্যারামেডিক্যাল স্টুডেন্টস ইউনিটের (All Bengal Paramedical Students Unit) তরফ থেকে তাই বর্তমান সরকারের কাছে অনুরোধ যাতে এই সমস্যার সমাধান খুব শীঘ্রই করা হয়।