থিয়োরি অফ এভরিথিংয়ের মধ্যেই লুকিয়ে ঈশ্বরের মস্তিষ্ক?
নোবেল না পেলেও জনপ্রিয়তায় স্টিফেন হকিং ঠিক অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের পরেই
- Total Shares
নোবেল পুরস্কার জোটেনি ঠিকই, তবে বিশ্বস্বীকৃতি আর জনপ্রিয়তায় স্টিফেন উইলিয়াম হকিং দাঁড়িয়ে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ঠিক পিছনেই। আইনস্টাইন-পরবর্তী সময়ে বহু নোবেল জয়ীকেও বিস্মৃতির কৃষ্ণ গহ্বরে ঠেলে দিয়েছেন হকিং। হকিং যখন জন্মান ১৯৪২ সালে গ্রেট ব্রিটেনে, তখন আটলান্টিকের ওপারে, মার্কিন মুলুকে, ৬২ বছর বয়সী আইনস্টাইন ‘ইউনিফায়েড ফিল্ড থিয়োরি' নিয়ে গবেষণায় মগ্ন।
মাথাকুটে মরছেন কী ভাবে ব্রহ্মাণ্ডে ঘুরে বেড়ানো যাবতীয় ‘ফান্ডামেন্টাল ফোর্স’ বা বড় আকারের মূল শক্তিগুলোর সঙ্গে ‘এলিমেন্টারি পার্টিকেল’ বা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র মৌলিক পদার্থের সামঞ্জস্য ঘটানো যায়, তা ভেবে?
ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিসম বা তড়িৎচৌম্বকত্ব ক্ষুদ্র পদার্থের মধ্যে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ শক্তি সৃষ্টি করে, যা কোয়ান্টাম মেকানিক্সের অন্তর্গত। আর গ্র্যাভিটেশন, আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি বা সাধারণ আপেক্ষিকতার তত্ত্ব অনুযায়ী, মহাবিশ্বে বিশালাকার বস্তুর দ্বারা স্থান-কালের দুমড়ানো। যার ফলে তুলনামূলক ছোট বস্তু বড় বস্তুর কাছাকাছি চলে আসে এবং বাঁক খেয়ে প্রদক্ষিণ করতে থাকে। আইনস্টাইন চেয়েছিলেন এই দুটোকে এক করতে - ইলেক্ট্রোম্যাগ্নেটিসম এবং গ্র্যাভিটেশন। যার ফলে আর বাকি পাঁচটা তত্ত্বকে মিশিয়ে তৈরি করা যায় একটা সংযুক্ত তত্ত্ব। ব্রহ্মাণ্ডের রহস্যের একটা মাত্র চাবিকাঠি। প্রসঙ্গত, জেমস ক্লার্ক ম্যাক্সওয়েল আগেই ইলেকট্রিসিটি বা তড়িৎ ও ম্যাগনেটিসম বা চৌম্বকত্বকে একটা তত্ত্বে উপস্থাপন করে ফেলেছিলেন।
স্বীকৃতি:জনপ্রিয়তায় স্টিফেন উইলিয়াম হকিং দাঁড়িয়ে অ্যালবার্ট আইনস্টাইনের ঠিক পরেই
এই গবেষণায় আইনস্টাইনের মাথায় একের পর এক নয়া তত্ত্ব চাড়া দিয়েছে, কিন্ত উপযুক্ত প্রমাণের খামতিতে বারবার নস্যাৎ হয়ে গিয়েছে। ফলে আর ইউনিফায়েড থিয়োরি উদ্ভাবন করে উঠতে পারেননি আইনস্টাইন ।
হকিং তাঁর জীবনের শেষ অধ্যায়ে ঠিক একই কাজে হাত দিয়েছিলেন। আইনস্টাইনের জেনারেল রিলেটিভিটি তত্বের সাহায্যে চেষ্টা করেছিলেন একটা ‘থিয়োরি অফ এভরিথিং’ বানাতে। সব তত্ত্বের সম্মিলনে একটি সাধারণ, সহজ ও সরল সংযুক্ত তত্ত্ব। যে তত্ত্বের মধ্যে অন্তর্নিহিত থাকবে গোটা ব্রহ্মাণ্ডের রহস্য। আবার একই সঙ্গে পদার্থ বিজ্ঞানে এখনও পর্যন্ত বিপরীত মেরুতে অবস্থানকারী গ্র্যাভিটেশন এবং কোয়ান্টাম মেকানিক্সকে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে ফেলা যাবে। পদার্থ বিজ্ঞানে উন্মোচিত হবে এক নতুন দিগন্ত।
থিয়োরি অফ এভরিথিং নামে ২০১৪ নামে হকিংয়ের জীবন ভিত্তিক একটা চলচিত্র তৈরি হল, কিন্তু গবেষণার পালে হওয়া লাগল না।
বহু চেষ্টা করেও বিজ্ঞানের দুনিয়ার এই দুই সর্বোচ্চ সেরা মাথা কয়েদ করতে পারলেন না ব্রহ্মাণ্ডের সবটুকুকে, অথচ এঁরাই একসময় নিজেদের উচ্চমার্গীয় কল্পনাশক্তি কাজে লাগিয়ে ভেদ করে ফেলেছিলেন মহাবিশ্বের কয়েকটি গূঢ় রহস্য - আইনস্টাইনের রিলেটিভিটি, আর স্টিফেন হকিংয়ের ‘হকিং রেডিয়েশন’।
দুজনের গবেষণারই মূল এবং মহাপরাক্রমী হাতিয়ার ছিল ‘থট এক্সপেরিমেন্ট’ বা ‘চিন্তন গবেষণা’। শুধু মাত্র মগজ, কাগজ আর কলম -- এই দিয়েই মহাবিশ্বকে আপন করার দুর্নিবার প্রয়াস। হকিং তো আঙুল নাড়তেও অক্ষম ছিলেন, ফলে লিখতেও পারতেন না।
ব্রহ্মাণ্ড অনন্ত, তার রহস্যও অপার। পদার্থবিদ আইনস্টাইন এবং মহাবিশ্বতত্ত্ববিদ হকিং ঘুরে বেড়িয়েছেন সেই অনন্তের আনাচে কানাচে, কেবল কল্পনা শক্তির ইন্ধনে। আইনস্টাইন তাঁর পেটেণ্ট অফিস ঘরের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে আর হকিং হুইল চেয়ারে আবদ্ধ অবস্থায়। আর ব্রহ্মাণ্ডের সেই বিশালত্বের মধ্য থেকেই বিজ্ঞানের এই দুই নক্ষত্র তুলে এনেছেন পৃথিবীর সর্বপেক্ষা সুন্দর এবং খুদে সমীকরণ – আপেক্ষিকতার e=mc2 এবং হকিং বিকিরণের S= πAkc3/2hG।
মহাবিশ্বের রহস্য উদ্ঘাটনে ব্রতী বহু বিজ্ঞানীI চলছে ক্ষুরধার গবেষণাI আইনস্টাইন - হকিংয়ের যোগ্য উত্তরসূরি উঠে আসবে কবে, সেই সময়ের অপেক্ষা। কবে এই মহাবিশ্ব ধরা পড়বে একটি একক তত্ত্বে, বিজ্ঞান সেদিকে তাকিয়ে। তাই তো ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হকিং বলেছিলেন: যেদিন জানা যাবে ‘থিয়োরি অফ এভরিথিং’ সেদিন বোঝা যাবে ঈশ্বরের মস্তিষ্ক।