ভবিষ্যতের কথা ভেবেই কুম্ভমেলা-গঙ্গাসাগরে স্বেচ্ছাসেবী হয় ছাত্ররা

একেবারে প্রান্তিকরা আয়ের সুযোগ পায় দুর্গাপুজোর সময়েও

 |  2-minute read |   13-01-2019
  • Total Shares

কনকনে শীতে পুণ্যলাভের জন্য সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গেই যখন পুণ্যার্থীরা কোনও রকমে তিনবার ডুব দিয়ে উষ্ণতার খোঁজ করেন, তখন ওরা একটু দূরে প্রস্তুত হয়ে থাকে। কাউকে ডুবে যেতে দেখলে দ্রুত সাঁতরে এসে উদ্ধার করে। বয়স বেশি নয় ওদের। কেউ দশম শ্রেণীর ছাত্র, কেউ সদ্য কলেজে।

মূলত দক্ষিণ ২৪ পরগনা, মেদিনীপুর; এ ছাড়া আরও কয়েকটা জেলার গ্রামের ছেলেরা চলে আসে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে। ভোরে চলে যায় গঙ্গাসাগরে, প্রত্যেকের হাতে থাকে প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় একটা করে বাক্স। আগে তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তাদের যাঁরা প্রশিক্ষণ দেন, তাঁরা প্রশিক্ষণ নেন পুরীতে। সমুদ্রে কাউকে ডুবে যেতে দেখলে কী ভাবে রক্ষা করতে হবে, সেখানেই তাদের সেই প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

seva_dailyobangla_011319060239.jpgভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘের স্বেচ্ছাসেবকরা। (ছবি সৌজন্য: লেখক)

 সব মিলিয়ে এবার হাজার দুয়েক প্রশিক্ষিত স্বেচ্ছাসেবীকে নিয়োগ করেছে ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। হাজার দেড়েক স্বেচ্ছাসেবীকে পাঠানো হয়েছে গঙ্গাসাগরে, বাকিদের কুম্ভমেলায়। অসামরিক প্রতিরক্ষা দফতর যে কাজ করে, এই প্রশিক্ষিত ছাত্ররাও একই কাজ করে।

দু’বেলা পেট ভরে খাওয়া আর সপ্তাহান্তে সামান্য টাকা। এই টাকায় শহরতলির রেস্তরাঁয় একটা ছোট পরিবারের হয়তো একবার খাওয়া হবে না। তবে এই সামান্য টাকা যাদের কাছে অসামান্য আশীর্বাদের মতো, সেই সব প্রান্তিক ঘরের ছেলেরাই এ কাজ করতে আসে। ওদের চোখে স্বপ্ন থাকে স্বাচ্ছন্দ্যের।

এই ক’টা টাকার জন্য যারা এত পরিশ্রম করে, তাদের মার্কশিটে নম্বরের ছড়াছড়ি – এটা কষ্টকল্পনাতেও আসে না। তাই ইচ্ছা থাকলেও পড়াশোনা এগোয় না। ঋণের দুষ্টচক্রের মতো, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের সেই পল্লীগ্রামস্থ প্রজাদের মতো আবর্তিত হতে থাকে তাদের জীবন। তবে সব সময় হয় না। কারণ কম নম্বর পাওয়া ও প্রান্তিক ঘরের এইসব ছাত্র, যাদের সামনে সব দরজা বন্ধ, শুধুমাত্র তাদের জন্যই দরজা হাট করে খুলে দেয় স্বামী প্রণবানন্দ প্রতিষ্ঠিত এই সেবা প্রতিষ্ঠান।

seva_dailyobangla3_011319060353.jpgকুম্ভমেলায় সাধুসন্তদের দানধ্যানে রত সঞ্জীব মহারাজ। (ছবি সৌজন্য: লেখক)

কলকাতায় বিনাপয়সায় থাকা-খাওয়া, কলেজে ভর্তির টাকা দেওয়া ও দরকারে কোথাও সামান্য রোজগারের ব্যবস্থা করে দেওয়া – সৌজন্য: ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘ। দুর্গাপুজোর সময়েও অনেকে কলকাতায় স্বেচ্ছাসেবীর কাজ করে। ফি বছর গঙ্গাসাগরে আর বারো বছর অন্তর পূর্ণকুম্ভ বা অর্ধকুম্ভে তারা হাজির হয়ে যায় আর্তের পরিত্রাণে।

কুম্ভমেলা বিশাল ব্যাপার, তাই ভারতের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রান্তিক ঘরের ছাত্রদের  এনে আবাসিক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ভারত সেবাশ্রম যে সব জায়গায় বিনাপয়সার বা সামান্য পয়সার হস্টেল চালায় সেই সব জায়গায় অনেকে আবার কাজেও লেগে যায় পরবর্তী কালে, যদি ভালো লেগে যায়।

এখানে কোনও আড়ম্বর নেই, জাঁক নেই, চমক নেই। প্রান্তিকদের কাজ করে বলেই হয়তো প্রচারের আলো পায় না প্রতিষ্ঠান, জীবন রক্ষা করেও প্রচার থেকে দূরে সরে থাকে কচি কচি মুখগুলো। সেবার প্রথম অধ্যায় হয়তো এটাই। তারা মনেপ্রাণে একটা কথা বিশ্বাস করে:  

কর্মন্যেবাধিকারস্তে মা ফলেসু কদাচন।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000
Comment