'এফআরডিআই' থেকে বেল-ইন ক্লজ বাতিল হলেও এখনও কয়েকটি ধারা নিয়ে চিন্তা আছে
রাঘব-বোয়ালদের তুষ্ট করতেই ‘ইনসলভেন্সি অ্যান্ড ব্যাঙ্করাপসি কোড’ সংক্ষেপে আইবিপি
- Total Shares
বিভিন্ন ব্যাঙ্ক যখন বছরের পর বছর কোটি কোটি টাকা আয় করেছে, তখন সেই লাভের গুড় সরকারি মদতপুষ্ট কর্পোরেট দুনিয়ার পিঁপড়ে খেয়ে গেছে। এর ফলে বিপুল আর্থিক বোঝা বা নন পারফর্মিং অ্যাসেট তৈরি হচ্ছে। বার বার সতর্ক করা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় ঋণখেলাপিদের বিরুদ্ধে কোনও রকম ফৌজদারি ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এমনকি তাঁদের নামও প্রকাশ করা হয় না।
এত তীক্ষ্ণ সংসদীয় নজরদারি ও কঠোর নিয়ন্ত্রণ থাকা সত্ত্বেও আজ পর্যন্ত কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক লাটে ওঠেনি। বিভিন্ন গ্রাহকদের সঙ্গে কথা বলে একটা বিষয় আমার কাছে বেশ স্পষ্ট হয়েছে সেটা হল নিঃসন্দেহে বহু ভালো ভালো বেসরকারি ব্যাঙ্ক এখন হয়েছে তবে বেশিরভাগ মানুষ এখনও নিজেদের সঞ্চয় রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের রাখতে সবচেয়ে সুরক্ষিত মনে করেন।
তা সত্ত্বেও দুঃখের বিষয় হল ১৯৯১ সালে নতুন উদারবাদী আর্থিক নীতি চালু হওয়ার সময় থেকেই রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে দুর্বল করার বিভিন্ন চেষ্টা করা হয়ে চেলেছে। একটা শক্তিশালী রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়া খুব সহজ নয়, তাই এবার তাঁদের কোমর ভাঙার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের নতুন কৌশল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলোকে আর্থিক ভাবে দুর্বল করা, এমন কিছু করা যাতে এই সব ব্যাঙ্কগুলির পরিষেবার মান খারাপ হতে শুরু করে যেমন নানা ভাবে দুর্নাম দিয়ে সাধারণ মানুষের আস্থা নষ্ট করে দেওয়া চেষ্টা করা হচ্ছে। আর এ ভাবেই বেসরকারিকরণের পথ সুগম করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এই লক্ষ্যে শেয়ার মাধ্যমে ধাপে ধাপে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের মালিকানা আংশিক ভাবে বেসরকারি মালিকানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
এই পর্যায় নবতম প্রয়াস হল ‘ফিনান্সিয়াল রেগুলেশনস অ্যান্ড ডিপোজিট ইন্সিয়োরেন্স’ বা এফআরডিআই। অর্থাৎ কোনও ব্যাঙ্ক আর্থিক ভাবে দেউলিয়া হওয়ার পরিস্থিতি সৃষ্টি হলে সেই ব্যাঙ্কের আমানতকারীদের টাকায় সেই আর্থিক দায়ভার মেটানো হবে অর্থাৎ সঞ্চিত অর্থ ফেরত দেওয়ার দায় পুরোপুরি বা আংশিক ভাবে অস্বীকার করা বা মুলতবি রাখা যাবে না। এর উদ্দেশ্য হল ব্যাঙ্ক পরিষেবার উপর যাতে মানুষের আস্থা নষ্ট হয়ে যায় এবং যাতে গ্রাহকদের শেয়ার বাজারের দিকে ঠেলে দেওয়া যায়। দীর্ঘদিন এই খসড়া বিলটির বিরোধিতা করে চলতি বছরের ১৮ জুলাই বিলটির থেকে এই ক্লজটি বাতিল করা হয়েছে। ক্লজটির নাম বেল-ইন।
তবে বিলটিতে আরও একটি বিষয় রয়ে গেছে -- ‘ডিপোজিট ইন্সিয়োরেন্স অ্যান্ড ক্রেডিট গ্যারান্টি কর্পোরেশন’ সংক্রান্ত ধারা। এই নিয়মটি অবশ্য বহু বছর ধরেই বর্তমান। এর সার কথাটা হল যদি কোনও ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে যায় তা হলে গ্রাহকের যত গচ্ছিত টাকা রয়েছে তার থেকে সর্বোচ্চ ১ লক্ষ টাকা ফেরত দেওয়া হবে। একজন গ্রাহক যত বড় অঙ্কেরই টাকা গচ্ছিত রেখে থাকুন না কেন ফেরতের অঙ্কটি বাঁধা এক লক্ষ টাকাই থাকবে।
যদিও আমরা যখন এই এফআরডিআই বিলের বিরোধিতা করি তখন আমার এই বিষয়টি নিয়েও বিচার-বিবেচনার কথা সুপারিশ করেছিলাম। যদিও এই বিশেষ এখনই ইতিবাচক কোনও পদক্ষেপ করা হয়নি। আমার মনে হয় সংসদে বিলের এই বিষয়টি নিয়ে যথেষ্ট বিচার বিবেচনা করার প্রয়োজন রয়েছে কারণ যে সব মানুষ নিজের সারাজীবনের সঞ্চয় পাই-পয়সা জমা করে অনেকেই ব্যাঙ্কে টাকা গচ্ছিত রাখেন। যদি কোনও কারণে ব্যাঙ্ক দেউলিয়া হয়ে যায় তাহলে এমন বহু মানুষ আছেন যাঁরা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বেন।
কেন্দ্রীয় সরকারের এই ধরণের নীতি ও কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ব্যাঙ্ক কর্মচারীরা ১৯৯১ সাল থেকে লাগাতার ভাবে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আন্দোলনের অন্যান্য কর্মচারী ছাড়াও শুধুমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক বাঁচানোর দাবিতে আমরা ৫৭ দিন ধর্মঘটও করেছিলাম।
তবে কেন্দ্র সরকারের এখনও কোনও রকম হেলদোল নেই এমনকি তারা একটু বেপরোয়া বললেও ভুল হবে না খুব একটা।