কীভাবে আবার ফিরছে ফাইন ডাইনিং
কবির সুরি এবং রাহুল খান্নাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল মামাগোতো
- Total Shares
জনপ্রিয় ও অতি সফল রেস্তোরাঁ চেন- সাইবার হাবের একটি অন্যতম শাখা - দা ওয়াইন কোম্পানির অন্যতম মালিক জয় সিংহ নিজের এবং রেস্তোরাঁর আরেক মালিক আশিস কাপূরের জন্য একটি নিয়ম তৈরি করেছেন। এবার থেকে তাঁরা আর কোনও অনুষ্ঠানে নাইটলাইফ বিভাগের পুরস্কার গ্রহণ করতে যাবেন না। সম্প্রতি রেস্তোরাঁর অস্ট্রেলিয়ান শেফ সারা টোডকে কাপূর জিজ্ঞেস করেন, “কেন শ্রেষ্ঠ রেস্তোরাঁ হিসেবে আমরা পুরস্কৃত হব না?”
সিংহ এবং কাপূর যৌথ ভাবে ইও চায়না রেস্তোরাঁ শুরু করেন। ইও চায়না রেস্তোরাঁ চেনটি আমাদের চেনা পরিচিত বহু চাইনিজ খাবারদাবারের একটু স্বাদ অদলবদল করে নতুন সব চাইনিজ পদের সৃষ্টি করেছে। ভালো খাবারের জন্য পুরস্কৃত হওয়ার আকাঙ্ক্ষা পাশাপাশি ফাইন ডাইনিংয়ের জগতে প্রবেশ করার জন্য তাঁরা দা ওয়াইন কোম্পানি এবং হুইস্কি সাম্বা শুরু করেন। গুরুগ্রামের অভিজাত এলাকা ওয়ান হরাইজন সেন্টারে রেস্তোরাঁ দু'টি যেমন জনপ্রিয়তা লাভ করে তেমনই ব্যবসাও করে প্রচুর।
হুইস্কি সাম্বা রেস্তোরাঁর শেফ হিসেবে তাঁরা বিক্রমজিৎ রায়কে নিয়োগ করেন। কিঞ্চিৎ মেজাজি মানুষ এই বিক্রমজিৎ রায় তবে নিজের কাজে খুবই দক্ষ। এখানে আসার আগে তিনি আইটিসি মৌর্যতে ওয়াসাবি ও তিয়ান রেস্তোরাঁর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। দা ওয়াইন কোম্পানির জন্য নিয়োগ করা হল টোডকে। অট্রালিয়াতে মাস্টারশেফ অনুষ্ঠাটিতে টোড বাটার চিকেন এবং আলু গোবি রান্না করে বিখ্যাত হয়ে গিয়েছিলেন। নতুন রেস্তোরাঁর খাবারের তালিকায় তাঁরা নতুন ধরণের সব খাবারের পদ রেখেছেন।
মামাগোতো এবং ধাবা বাই ক্লারিজেস রেস্তোরাঁ খুলে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে ছিলেন যেই কবির সুরি এবং রাহুল খান্না, তাঁরাই এখন দিল্লির খান মার্কেট অঞ্চলে একটি ফাইন ডাইনিং রেস্তোরাঁ খুলেছেন নাম স্লাই গ্র্যানি। এই রেস্তোরাঁটির মাধ্যমে তাঁরা ফাইন ডাইনিং রেস্তোরাঁর জগতে প্রবেশ করতে চেয়েছিলেন। পুরোনো দিনের বারগুলো ঠিক যেমন দেখতে হতো ঠিক তেমন ভাবেই রেস্তোরাঁর বারটিকে সাজিয়ে তোলা হয়েছে।
কবির সুরি এবং রাহুল খান্নাকে সাফল্যের শিখরে পৌঁছে দিয়েছিল মামাগোতো
জয়ন্তী দুগ্গল যাঁকে খাবারের রানী বলা হয় তিনি এবং এক অল্পবয়সী শেফ যিনি আগে রাহুল আখারকারের রেস্তোরাঁ ইন্ডিগো নেশনের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন এঁদের দু'জনকেও এই রেস্তোরাঁর সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে। যে খাদ্য সমালোচকরা মনে করতেন যে নতুন প্রজন্মের হাতে যথেষ্ট অর্থ থাকে না বলে এবং তাঁরা এই জাতীয় খুব ভালো ভালো রেস্তোরাঁর আদবকায়দার সঙ্গে নিজেদের ঠিক খাপ খাওয়াতে পারে না বলে এঁদের কাছে ফাইন ডাইনিং রেস্তোরাঁগুলোর আর তেমন চাহিদা নেই, সে সব সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে এই রেস্তোরাঁটি।
যেখানে এখন স্লাই গ্র্যানি রেস্তোরাঁটি দাঁড়িয়ে আছে আগে সেখানে একজন বয়স্ক মহিলা থাকতেন যিনি হলিউড অভিনেতা আর্নল্ড সোয়ার্ৎজেনেগারের প্রেমে পাগল ছিলেন এবং অভিনেতার বিভিন্ন অর্ধ নগ্ন ছবি তাঁর ভীষণ প্রিয় ছিল। আর্নল্ড সোয়ার্ৎজেনেগার ছাড়াও তাঁর জীবনে আর একটা প্রেম ছিল সেটা হল মদ্যপান করা। তিনি পুরোনো আসবাবপত্র খুব ভালোবাসতেন এবং তাঁর নিজের বাড়ির দেয়ালে পুরোনো দিনের ফ্রেমে আঁটা যেসব ছবি ছিল সেগুলোও ছিল তাঁর বড় সাধের। রেস্তোরাঁটির ভিতরকার নকশা এবং সাজশয্যা সঙ্গে মনোরম গান-বাজনা স্লাই গ্র্যানিকে আরও বেশি প্রাণবন্ত করে তুলেছে। দিল্লির সব অভিজাত এলাকার অভিজাত পরিবার, যাদের স্থানীয় ভাবে বাবালোগ বলে, তাঁদের ছেলেমেয়েরা আমিরেকা জয় করে দেশে ফিরে নতুন কিছু করার তাগিদে দেশে ফিরে আন্তর্জাতিক পুঁজিবাদের চাকার দাঁতের সঙ্গে নিজেদের খাপ খাওয়াতে যান বাবার আশীর্বাদ নিয়ে, খানিকটা ভালোবাসা থেকে, খানিকটা পাল্লায় পড়ে।
দা ওয়াইন কোম্পানিতে খেতে এসে যাঁরা টিগনানেলো খান তাঁদের দেখলে মনে হয় যে তাস্কান থেকে আনানো এই দামি ওয়াইনটি তাঁদের বাড়ির পেছনের উঠানে তৈরি হয়ে থাকে। তবে যে সব দম্পতি দু'জনেই উপার্জন করেন এবং নিঃসন্তান তাঁদের কোনও অসুবিধেই হওয়ার কথা নয়। আবার তাঁরাই যখন স্লাই গ্র্যানিতে খেতে গিয়ে কোয়েম্বত্তুর থেকে আনানো শুয়োরের পাঁজর দিয়ে রান্না করা বিভিন্ন খাবারদাবার দেখে লোভে পড়ে গিয়ে অন্যদের কাছে গল্প করেন যে গতবার স্পেনে ছুটি কাটাতে গিয়ে এই ধরণের একটি খাবার খেয়েছিলেন কিংবা ফ্রান্সের প্রভোসায়ে ব্রি-ও-ত্রুতর স্বাদটাও কিছুটা এরমই ছিল। যাঁরা স্লাই গ্রানাইট খেতে আসেন তাঁরা নিঃসন্দেহে যাঁরা দা ওয়াইন কোম্পানিতে খেতে যান তাঁদের চেয়ে একটু বেশি জায়গা দেখেছেন তবে আসল ব্যাপারটা হল এই দু'ধরণের খাদ্যরসিকই এখন আবার ফাইন ডাইনিং রেস্তোরাঁ মুখী হচ্ছেন।
স্লাই গ্র্যানি রেস্তোরাঁটি খুলে সুরি তাঁর জীবনের বৃত্ত সম্পূর্ণ করেছেন, পুরোটা না হলেও অর্ধেক তো বটেই। দা ওবেরয়ে নিজের কাকা অর্জুন ওয়েনিকে তাঁর রেস্তোরাঁ জুমার আর একটি শাখা খুলতে সহায়তা করার জন্য ২০০৮ সালে তিনি লন্ডন থেকে নয়া দিল্লি চলে আসেন। তবে শেষ পর্যন্ত দোকানটি চালু না হওয়ায় তিনি এবং তাঁর ব্যবসার অংশীদার খান্না যৌথ ভাবে সাধারণ মানুষের রসনাতৃপ্তির জন্য মামাগোতো রেস্তোরাঁটি খোলেন এবং তারপর ধাবা বাই ক্লারিজেস খাবার দোকানটিও কিনে নেন। খান্নার পরিবারের রেস্তোরাঁটির নাম হল দা ক্লারিজেস। মামাগোতোতে ভেড়ার মাংসের চপ যতই জনপ্রিয় হোক না কেন স্লাই গ্র্যানি দোকানটি সুরি ও খান্নার অনেক বেশি আপন।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন