জ্বর-সর্দি-কাশি সঙ্গে শ্বাসসকষ্ট: ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া পর নতুন সমস্যা ব্রঙ্কিয়োলাইটিস

অন্তত পক্ষে ছ' মাস স্তন্যপান করলে শিশুদের এই ধরণের সমস্যা কম হয়

 |  4-minute read |   22-08-2018
  • Total Shares

ঘরে ঘরে এখন জ্বর, সর্দি-কাশি, হাঁচি প্রভৃতি রোগের প্রদুর্ভাব বেড়েছে। হাসপাতালের আউটডোর হোক কী ডাক্তারের চেম্বার, জ্বর, সর্দি সঙ্গে গায়ে ব্যথা নিয়ে রোগীর ভিড় উপচে পড়ছে। সর্দি-জ্বর, হাঁচি, কাশি, নাক থেকে জল পড়া প্রভৃতি উপসর্গ দেখা দিচ্ছে। 

জ্বরটা যেমন বাচ্চাদের কাবু করছেন তেমন বড়রাও বাদ নেই। 

চিকিৎসকদের মতে মূলত কখনও বৃষ্টির ফলে হঠাৎ তাপমাত্রা কমে যাওয়া আবার কখনও খুব গরম -- এই ধরনের আবহাওয়া জীবাণুদের বৃদ্ধি হতে সাহায্য করে। তাই এই সময় জীবাণুর সংক্রমণে বহু রোগ হয়, য়ার উপসর্গ হল জ্বর। 

শেষরাতের দিকে বেশ শীতভাব আবার সকালে অসহ্য রোদ সঙ্গে প্যাচপ্যাচে গরম। আবার গরম থেকে এসেই শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে ঢুকে পড়া, রেফ্রিজারেটরের ঠান্ডা জল খাওয়া-- এর ফলেও জ্বর-সর্দি হচ্ছে অনেকের। 

তবে এবছর সাধারণ ঠান্ডা-গরমের থেকে জ্বর আসা বা ডেঙ্গি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে আরএসভি ভাইরাসের প্রকোপও দেখা গেছে। যা সাধারণ মানুষের কপালের চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। কারণ শুধুমাত্র জ্বর না সর্দি-কাশি নয় অসহ্য শ্বাসকষ্টতেও রোগী কাহিল হয়ে পড়ছেন। 

চিকিৎসক শ্যামাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন যে, "জ্বরের কাশি, স্বাসকষ্ট ও বুকের ভেতরে একটা অস্বস্তি দেখা যাচ্ছে। চিকিৎসার পরিভাষায় আমরা যাকে উইজিং বলি। তবে যাঁদের আগে থেকেই বুকের কোনও অসুখ বা হাঁপানি আছে তাঁদের ক্ষেত্রে কষ্টটা আরও বেড়ে যেতে পারে।"  

এই অসুখটির নাম ব্রঙ্কিয়োলাইটিস বা ফুসফুসে সংক্রমণ। আরএসভি ভাইরাস ব্রঙ্কিয়োলাইটিসের জন্য দায়ী। কোনও কোনও রোগীর ক্ষেত্রে রাইনো ভাইরাস ধরা পড়ছে। যদিও রাইনো ভাইরাসের আক্রমণে সাধারণ জ্বর ও সর্দি-কাশি হয়। এছাড়াও কোনও রোগীর রক্তে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসও ধরা পড়ছে। 

যদিও এই রোগটির প্রকোপ শীতকালেই বেশি হয় তবে এ বছর এই মরসুমে এডিনো ভাইরাসের পাশাপাশি আরএসভি ভাইরাস খুব বেশি দেখা যাচ্ছে। যদিও বর্ষাকালে ব্রঙ্কিয়োলাইটিস যে একদম দেখতে পাওয়া যায় না তেমনটা নয় তবে এখন লোক সংখ্যা যে হরে বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে তার ফলে কোনও না কোনও জীবাণু সম্পূর্ণ রূপে চলে যায় না কিছু সংখক মানুষের মধ্যে তা থেকে যায়  এবং তাঁদের থেকে আবার বাকিদের মধ্যেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়ে। 

শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ পল্লব চট্টোপাধ্যায় বলেন, "এই মরসুমে জ্বর, সর্দি-কাশি, হাঁচি প্রভৃতির পাশাপাশি বহু বাচ্চা শ্বাসকষ্টে ভুগছে।  এদের মধ্যে অনেকেরই হয়তো হাঁপানি বা অন্য কোনও ফুসফুসের সমস্যা নেই তবুও সেই শিশুটি হঠাই করেই শ্বাসকষ্ট দেখা দিচ্ছে। এমনকি শ্বাসকষ্ট এতটাই বেড়ে যাচ্ছে যে তখন নেবুলাইজারে আর কাজ দিচ্ছে না। তখন শিশুটিকে ভেন্টিলেশনে পর্যন্ত রাখা হচ্ছে। এখানে একটা কথা বলে রাখা ভালো যে ব্রঙ্কিয়োলাইটিসে আক্রান্ত রোগীর ক্ষেত্রে নেবুলাইজার বা অক্সিজেন কিংবা কখনও ভেন্টিলেশন দিয়ে সমস্যার সম্পূর্ণ নিরাময় করা সম্ভব নয়। তবে চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেন যাতে এ সব পদ্ধতি ব্যবহার করে রোগীকে বা আক্রান্ত শিশুটিকে সাময়িক স্বস্তি দেওয়া যেতে পারে।“ 

১০৪-১০৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট পর্যন্ত জ্বর উঠতে পারে। তাই জ্বর বা সর্দি-কাশি হলে ঠান্ডা-গরমের থেকে জ্বর এসেছে দু-একদিনেই ঠিক হয়ে যাবে মনে করে শিশুকে চিকিৎসকের কাছে না নিয়ে গিয়ে বাড়িতে জ্বরের ওষুধ খাওয়ানো কোনও কাজের কথা নয়। এই সমস্যা ১০ থেকে ১৫ দিন ভোগায়। 

পল্লব চট্টোপাধ্যায় বলেন, বাড়িতে খুব ছোট বাচ্চা বা সদ্যজাত শিশু থাকলে এই সময় খুব সতর্ক থাকতে হবে কারণ একবার ব্রঙ্কিয়োলাইটিস হলে ভবিষ্যতে হাঁপানি বা অ্যাজমা হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়। 

তাই কয়েকটা সাধারণ সতর্কতা যেমন কড়া রোদ এড়িয়ে চলা, খুব গরম থেকে এসেই ঠান্ডা ঘরে না ঢোকা, বাইরের থেকে এসেই ফ্রিজের ঠান্ডা জল না খাওয়া, বারবার ঘাম মুছে ফেলা, ইত্যাদি কয়েকটা নিয়ম মেনে চলেই ঠান্ডা-গরমের কারণে জ্বর এড়ানো সম্ভব। 

fever_body_082218074954.jpg

একটি শিশু যদি অন্তত পক্ষে ছ' মাস পর্যন্ত স্তন্যপান করে তাহলে পরবর্তী কালে সেই শিশুর এই ধরণের শারীরিক সমস্যা হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম হয়। বড়দের জন্য যে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকাটি পাওয়া যায় সেটা দিয়ে নেওয়া যেতে পারে। এই সময় বড় হোক কী বাচ্চা সবাইকে অনেকটা করে জল খেতে হবে।

হালকা রান্না করা খাবারদাবার খাওয়াই ভালো। বাড়িতে কারও সর্দি-কাশি হলে তার কাছ থেকে বাচ্চাকে দূরে রাখতে হবে। প্রয়োজনে বাচ্চাটিকে মাস্ক পরিয়ে রাখুন। ভালো করে বারবার সাবান বা হ্যান্ডওয়াশ দিয়ে হাত ধুয়ে ফেলতে হবে। 

সর্দি কাশি হলে সেই শিশুকে স্কুলে পাঠাবেন না, না হলে যে শিশু ভুগছে তার থেকে জীবাণুটি অন্য বাচ্চাদের মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। শিশুদের সময়মতো টিকা দিতে হবে। জন্মের পর যে টিকার তালিকাটি দেওয়া হয় এখন তার মধ্যে ইনফ্লুয়েঞ্জা টিকা থাকে, তাই যদি কোনও শিশুর ক্ষেত্রে এই টিকাটি দেওয়া না হয়ে থাকে তা হলে সময় নষ্ট না করে তাকে এই টিকাটি দিয়ে দিতে হবে। 

অনেক সময় দেখা যায় যে একই বাড়িতে দু-জন তিন জন বাচ্চা একসঙ্গে বড় হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে খুব সাবধান হতে হবে এবং কোনও একজনের যদি এই ধরণের কোনও সমস্যা হয় তাহলে অন্য বাচ্চাদের থেকে তাকে দূরে দূরেই রাখতে হবে। জীবাণুটি বাতাস-বাহিত, তবুও যথাসম্ভব সতর্ক থাকতে হবে। 

খেয়াল রাখতে হবে যাতে যে শিশুটির জ্বর হয়েছে তার এঁঠো করা খাবার যেন অন্য শিশু না খায়। তার তোয়ালে বা গামছা পৃথক করে ফেলতে হবে। 

প্রথমে খুব সাধারণ জ্বর বলে মনে হলেও পরে কিন্তু সেটাই খুব বড় আকার নিয়ে নিচ্ছে তাই বড় হোক বা ছোট প্রথম থেকেই সতর্ক থাকুন এবং ঠিক সময় চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। 

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment