কৃষকদের প্রতি নরেন্দ্র মোদী যে পাঁচটি বিশ্বাসঘতকতা করেছেন
বারংবার জানানোর সত্ত্বেও বিজেপি কৃষকদের ঋণ মকুবের আবেদন নস্যাৎ করে দিয়েছিল
- Total Shares
২০১৪ লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মোদী কৃষকদের কথা বেশ কয়েকবার বলেছিলেন।
ক্ষমতায় এলে কৃষকদের উন্নতি সাধনে তাঁর সরকার সদা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ থাকবে। ভারতীয় 'পাইড পাইপারের' কথায় বিশ্বাস করে কৃষকরা তাঁকে ভোটে জিতিয়েও ছিল।
আমার মতে, সরকার কিন্তু কৃষকদের প্রতি তার প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বাধ্য হয়েছে।
ইউপিএ আমলে প্রস্তাবিত জমি অধিগ্রহণ আইন, ২০১৩ জারি করার সিদ্ধান্ত নিয়ে কৃষকদের সঙ্গে প্রথম বিশ্বাসঘতকতা করে বর্তমান সরকার। এই আইনের ফলে কৃষকরা জমির উপর তাদের ন্যায্য অধিকার হারায়।
কৃষকদের দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেননি নরেন্দ্র মোদী [সৌজন্যে: টুইটার]
এই আইনের ফলে, সরকার জমি অধিগ্রহণ করতে চাইলে সরকারকে আর কৃষকদের অনুমতির জন্য অপেক্ষা করতে হবে। এই অর্ডিনান্সের এক জায়গায় প্রস্তাব করা হয়েছিল, জমি অধিগ্রহণ করতে হলে তা পরিবেশের উপর কতটা প্রভাব ফেলবে তা নিয়ে পর্যালোচনা করা বাধ্যতামূলক নয়। শেষ পর্যন্ত কংগ্রেসের মরিয়া চাপের সামনে নতিস্বীকার করে এই অর্ডিনান্স বাতিল করে দিয়েছিল বিজেপি।
কিন্তু এর পরেও কৃষকদের প্রতি আরও বেশ কিছু বিশ্বাসঘতকতা করে প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে সরকার।
সময় মতো খরার ত্রাণ সরবারহ করেনি সরকার। ২০১৪-১৫ ০ ২০১৫-১৬ সালে দেশ জুড়ে খরা দেখা গিয়েছিল। সেই খরার চলাকালীন সরকার তৎপর না হওয়ার জন্য সুপ্রিম কোর্টের ভৎসনাও শুনতে হয়েছে সরকারকে।
মোদী সরকার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির কথা ঘোষণা তো করে নি। তার উপর আবার ক্ষতিপূরণ পাওয়ার যোগ্যতাও বদলে দিয়েছিল যাতে ক্ষতিপুরণের দাবিদার কমে যায়।
মোদী সরকার দুর্ভিক্ষ পরিস্থিতির কথা ঘোষণা করেনি [ছবি: রয়টার্স]
কৃষকদের ঋণ মুকুবের দাবিও অর্থ মন্ত্রী অরুন জেটলি বারংবার 'অর্থনীতির উপর প্রভাব পড়বে' বলে নস্যাৎ করে দিয়েছেন।
কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর একটি উদাহরণও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
নূন্যতম সহায়ক মূল্যের মাধ্যমে বিজেপি সরকার কৃষকদের প্রতি তৃতীয় বিস্বাসঘাতকতা করে ফেলল।
মোদীর প্রতিশ্রুতি ছিল যে সহায়ক মূল্য ইনপুট মূল্যের থেকে ৫০ শতাংশ বেশি হবে। কিন্তু তা কোনও দিনও সম্ভবপর হয়নি। মুদ্রাস্ফীতি বৃদ্ধির জন্যে ইনপুট মূল্য বাড়তে থাকায় সহায়ক মূল্যে কিন্তু উল্টে কমেছে।
কৃষক আন্দোলন বৃদ্ধি হয়েছে [ছবি: এপি]
বিষয়টি এমএস স্বামীনাথনের মতো প্রথম শ্রেণীর কৃষি গবেষকরাও শিকার করে নিয়েছেন, যিনি ২০১৪ নির্বাচনের প্রাক্কালে মোদীর প্রতিশ্রুতির উপর নির্ভর করে একটি গবেষণামূলক রিপোর্টও তৈরি করেছিলেন।
এই সহায়ক মূল্যের কারণেই কিন্তু দেশজুড়ে কৃষকরা আজ আন্দোলন শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু তাতে কর্নপাত করার কোনও ইচ্ছেই প্রধানমন্ত্রীর নেই।
কৃষকদের প্রতি মোদীর চতুর্থ বিস্বাসঘাতকতা প্রধানমন্ত্রী ফসল বীমা যোজনা। এই বীমা কৃষকদের উন্নতি সাধনের লক্ষে করা হয়েছিল। কিন্তু এই বীমার ক্ষীর খেয়ে গেল বীমা সংস্থাগুলো। বেসরকারি বীমা সংস্থাগুলোর কাছে এই প্রকল্প তো জ্যাকপট রূপে দেখা দিয়েছিল। স্বভাবতই, কিছুদিনের মধ্যে কৃষকরা এই প্রকল্পে উৎসাহও হারিয়ে ফেলেছিল।
পঞ্চম বিশ্বাসঘতকতা হল, কৃষকদের আয়ে ২০২২ সালের মধ্যে দ্বিগুন করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি। সম্প্রতি, সাংসদের শীতকালীন অধিবেশনে কেন্দ্রীয় খাদ্য উৎপাদন দপ্তরের প্রতিমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন যে এরকম কোনও পরিকল্পনা বর্তমানে সরকারের নেই।
রাজস্থান, ছত্তিশগড় ও মধ্যপ্রদেশ নির্বাচনে কংগ্রেসও তাদের ইস্তেহারে সরকার গঠন করতে পারলে ১০ দিনের মধ্যে ঋণ মকুবের কথা বলেছিল।
নির্বাচন জিতে ঋণ মকুব করে কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি রক্ষা করেছে [সৌজন্যে; ইন্ডিয়া টুডে]
সরকার গঠনের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই কংগ্রেস তার কথা রেখেছে। এর ফলে তিনটি রাজ্যে ৮১ লক্ষ কৃষকের মঙ্গল হবে।
দেশের জনসংখ্যার এক বৃহৎ অংশ কৃষিশিল্পের উপর নির্ভরশীল এবং তাদের কাছে কৃষি ঋণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। দুর্ভাগ্য, কেন্দ্র ও রাজ্যের বিজেপি সরকার কিন্তু এই বিষয়টিকে পাত্তা দেয়নি। এর ফলে দেশজুড়ে বহু কৃষকই যে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছে সে বিষয় কোনও সন্দেহ নেই।
কৃষি ঋণ মকুবকে সমস্যারসমাধান বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু একটা সময় সরকার নিশ্চয় বুঝতে পারবে যে এটাই একমাত্র সমাধান নয়।
কৃষকদের কথা ভেবেই বাকি সমাধানগুলো দ্রুত খুঁজে বের করতে হবে।
দেশের কৃষকরা সুখে থাকলে গোটা দেশও সুখে থাকবে।
লেখাটি পড়ুন ইংরেজিতে