সরকারের কেন বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির বিক্রির দিকে নজর দেওয়া উচিৎ?
বিদ্যুৎ চালিত গাড়ি যেমন দূষণ দূর করবে তেমনই রাস্তায় যান সমস্যাও দূর করবে
- Total Shares
সম্প্রতি প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানা গেছে যে বিদ্যুৎ চালিত গাড়িগুলি কেনার সময় ক্রেতাদের যে আর্থিক সুবিধা দেওয়া হত কেন্দ্র সরকার সেই সুবিধা বন্ধ করে দেওয়া সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। যদিও কেন্দ্র সরকার সব সময় প্রকৃতিকে নির্মল রাখার দিকে জোর দিয়েছে তা সত্ত্বেও বিদ্যুৎ চালিত এই গাড়িগুলো বিক্রির সময় যদি আর্থিক সুবিধা তুলে দেওযা হয় তাহলে গাড়িগুলির বিক্রি কিছুটা হলেও ধাক্কা খাবে। বিশেষ করে শহরগুলোর জন্য খবরটা বেশ খারাপ।
যদিও বিদ্যুৎ চালিত বাস ও দু'চাকার গাড়ির বেশি বিক্রির উদ্দেশে এগুলির বিক্রির উপর আর্থিক ছাড় দেওয়া হয় কিন্তু এবার থেকে এই ছাড়ের হার ৬০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৪০ শতাংশ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
মনে করা হচ্ছে ওলা ও উবেরের মতো সংস্থাগুলিকে বিদ্যুৎ চালিত গাড়িগুলি কেনার জন্য আরও বেশি মাত্রায় আর্থিক সুবিধা দেওয়ার জন্যই কেন্দ্র সরকার ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়িগুলির ক্ষেত্রে এ হেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে। ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়িগুলির চেয়ে ওলা ও উবের অনেক বেশি মাইলেজ দেয়ে।
এটাই যদি কারণ হয়, তাহলে বাসগুলি বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতাকে ৪০ শতাংশের বেশি আর্থিক সুবিধা দেওয়া উচিত। কারণ একটি বাসে প্রায় দশটি চার চাকার গাড়িতে যতগুলো সিট আছে তার চেয়ে অনেক বেশি সিট থাকে এবং একটি দু'তলা বাসে তার চেয়ে দ্বিগুন সিট থাকে।
কেন্দ্র সরকার ব্যক্তিগত মালিকরা গাড়িগুলির ক্ষেত্রে সবরকম আর্থিক ছার তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে অনড় কারণ সরকার মনে করেছে যে এই আর্থিক ছাড়ের ফলে বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির বিক্রিতে আমাদের দেশে তেমন একটা তারতম্য ঘটবে না বা তা কোনও ভাবে প্রকৃতিকে দূষণমুক্ত রাখার ক্ষেত্রে সহায়তাও করবে না।
কেন্দ্র সরকারের 'ফেম' - ফাস্টার অ্যাডপশান অ্যান্ড হাইব্রিড অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ভেহিকল-এর আওতায় বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির বিক্রির সময় ১.৩ লক্ষ টাকার ছাড় দেওয়া হয়। কেন্দ্র সরকার প্রকৃতিকে নির্মল রাখার যে উদ্যোগটি নিয়েছে তার নাম হল 'ফেম' - ফাস্টার অ্যাডপশান অ্যান্ড হাইব্রিড অ্যান্ড ইলেক্ট্রিক্যাল ভেহিকল। বিশেষ এই উদ্যোগটির আওতায় বিদ্যুৎ চালিত গাড়ির বিক্রির সময় ১.৩ লক্ষ টাকার ছাড় দেওয়া হয়।
যদিও ভারী শিল্পমন্ত্রী যখন ফেম-এর দ্বিতীয় পর্যায়ের খসড়াটি তৈরি করেন তখন তার থেকে এই প্রস্তাবটিকে বাতিল করার কথা বলা হয়েছিল।
সরকারের মতে যাঁরা ভর্তুকি পাবেন তাঁদের তালিকায় যদি ওলা ও উবেরের নাম থাকে তাহলে খুব সহজেই এরাও বিদ্যুৎ চালিত এই ইলেকট্রিক গাড়িগুলি কিনতে উদ্যত হবেন। এর ফলে ডিজেল বা পেট্রোল কিংবা সিএনজি-তে গাড়ি চালালে যে খরচ পরে সেটা অনেক কমে যাবে।
এই সমস্ত কারণের জন্যই সরকার আগের অবস্থান থেকে পুরোপুরি উল্টো অবস্থান নিয়েছে।
দিনে দিনে যেমন রাস্তায় গাড়ির সংখ্যা বাড়ছে তেমনই এই সব গাড়ির থেকে বিষাক্ত দূষণও ছড়িয়ে পড়ছে বাতাসে। তাই এই বিষয়গুলিকে মাথায় রেখে যাতে সমস্ত গাড়ির ইঞ্জিনকে ২০৩০এর মধ্যে বিদ্যুৎ চালিত ইঞ্জিনে রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে ভারত সরকার।
পাঠকরা নিশ্চয়ই জানবেন যে গতবছর আমাদের দেশে প্রায় ৩২ লক্ষ পেট্রল, ডিজেল ও সিএনজি চালিত গাড়ি বিক্রি হলে পাশাপাশি বিদ্যুৎশক্তি চালিত ১,৫০০টি গাড়ির বিক্রি হয়েছে।
প্রাক্তন শক্তিমন্ত্রী ও বর্তমাযনে রেল ও অর্থের দায়িত্বে থাকা পীযূষ গোয়েল এবং সড়ক ও বহুতল পরিবহন মন্ত্রী নীতিন গড়করিও সিদ্ধান্তটিকে স্বাগত জানিয়েছেন। যদিও গাড়ি বিক্রি ও গাড়ির নির্মাণ সংস্থাগুলি - সোসাইটি অফ ইন্ডিয়ান অটোমোবিল ম্যানুফ্যাকচার্স (সিএম), বিষয়টিকে পুনর্বিবেচনা করার জন্য আদালতের কাছে আবেদন জানিয়েছে।
আমার মনে হয়, যে ভাবে গাড়ির সংখ্যা বেড়ে চলেছে তার জেরে ব্যক্তিগত মালিকানার গাড়িই হোক বা ওলা কিংবা উবেরের মতো গাড়ির সংস্থাগুলোই হোক, একটি পরিবহন নীতির প্রণয়ন করা উচিত। যার ফলে শহরের মধ্যে বা শহরের বাইরে যেমন মেট্রো, বিদ্যুৎ চালিত ই-বাস ও ব্যক্তিগত মালাকানার গাড়িগুলো যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করে ঠিক তেমন ভাবেই তখন বিদ্যুৎ চালিত গাড়িগুলোকেও এই কাজে খুব সহজেই ব্যবহার করা যাবে।
তাই এই ধরণের একটি ব্যবস্থার কথা মাথায় রেখে যেই প্রাইভেট গাড়িগুলোতে চারজন যাত্রী নিয়ে যাতায়াত করছে সেই সব গাড়িগুলোর থেকে কোনও রকম পার্কিং-এর ভাড়া বা টোল গেটে ভাড়া নেওয়া উচিত হবে না।
লেখাটি ইংরেজিতে পড়ুন