একেবারে গ্যালারিতে বসে দশটি বিশ্বকাপ দেখেছেন এই দম্পতি
ফাইনাল ম্যাচ দেখা নিয়ে এখনও সংশয়
- Total Shares
প্রতি চার বছর অন্তর তাঁরা যেন ফুটবল-তীর্থ করতে যান, ৮৪ বছরের পান্নালাল চট্টোপাধ্যায় ও তাঁর স্ত্রী ৭৬ বছরের চৈতালি চট্টোপাধ্যায়। ভ্রমণের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করতে তাঁরা কার্পণ্য তো করেনই, দরকারে উঞ্ছবৃত্তি এমনকি এদিক-সেদিক করে দু-পয়সা বাঁচাতে প্রয়োজনে পছন্দের মাছটুকু পর্যন্ত খান না এমনকি একটা নতুন পোশাক পর্যন্ত কেনেন না। কিন্তু এই দাদু-দিদিমার সঙ্গে প্রতিবেশীদের তফাৎটা কোথায় জানেন? খিদিরপুরের এই দম্পতির কাছে ফুটবল হল ঈশ্বর আর বিশ্বকাপ হল তাঁদের তীর্থস্থান।
ছবি: সুবীর হালদার
শুরুটা হয়েছিল আচমকাই এবং বেশ সুন্দর ভাবে, ১৯৮২ সালে যখন তাঁরা ইংল্যান্ডে এক বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন। পান্নালাল বলেন, “আমার বন্ধুটি বলল, আমি তোকে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখাতে নিয়ে যাব, তারপরে গাড়ি চালিয়ে আমরা স্পেনে গেলাম।” তরুণ বয়সে পান্নালাল নিজেও ক্লাব-স্তরে ফুটবল খেলেছেন। স্পেনে বিশ্বকাপ ফুটবল দেখে তিনি বিশ্বে সবচেয়ে বড় আয়োজন দেখার স্বাদ পেয়ে গেলেন। সেই স্মৃতি তাঁর মনে গেঁথে গেল চিরকালের জন্য। ১৯৮৬ সালে মারাদোনার সেই ‘হ্যান্ড অফ গড’ ঘটেছিল একেবারে তাঁদের চোখে সামনে, এ যেন অবিশ্বাস্য। স্কুল পড়ুয়ার মতো সরল ও লাজুক তৃপ্তির হাসি হেসে চৈতালি বললেন, “তিনি তার আগে বিপক্ষদলের তিনজনকে যে ভাবে ড্রিবল করলেন, তা না দেখলে বিশ্বাসই করা যায় না।” তবে ফুটবলের আরেক নায়ক পেলে, যাঁর সঙ্গে তাঁদের ছবিও আছে, তাঁর কথাও বললেন তাঁরা, এই দম্পতি আবার মনেপ্রাণে ব্রাজিলের সমর্থকও বটে। চৈতালি বললেন, মেক্সিকোয় আমাদের ঠিক পাশের হোটেলেই ছিলেন পেলে, আমরা মাঝেমধ্যেই তাঁকে দেখতে পেতাম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ১৯৯৪ সালে তিনি আমাদের দেখে বলেন, ‘আপনা এবারেও এসেছেন!’ মনে হয় আমি শাড়ি পরে ছিলাম বলেই উনি আমাদের চিনতে পেরেছিলেন।”
২০১৪ সালে ব্রাজিলে বিশ্বকাপ দেখা ছিল একাধারে সবচেয়ে সুন্দর আবার সবচেয়ে খারাপ অভিজ্ঞতা। তাঁদের কাছে দক্ষিণ আমেরিকা যাওয়া ছিল ভীষণ খরচসাপেক্ষ। তবে এ এমন দেশ যারা ফুটবলপ্রেমীদের জন্য উদার আর সহমর্মী। পান্নালালের বাঙালি সত্ত্বার পরিচয় পাওয়া গেল যখন তিনি বলেলন, “রিওতে হঠাৎ একজন আমাকে প্রভু জগন্নাথ ঠাওরে সেখানের ইসকন মন্দিরে নিয়ে গেলেন। সেখানে এক থালা ভাত খেয়ে যেন প্রাণ জুড়লো। খাবারটা অবশ্য নিরামিষ ছিল।”
এ বারের খরচ তাঁদের সাধ্যাতীত। বিশ্বকাপের জন্য টাকা জমানো মানে ভাড়া থেকে যে কটা টাকা জোটে সেই কটা টাকা আর পেনশন কোনও মতে জমানো। চৈতালি বলেন, “আমাদের দু-জনের ফাইনাল খেলা দেখতে টিকিটের জন্যই দেড় লাখ টাকা লাগবে। অত টাকা আমরা খরচ করার সামর্থ্য আমাদের নেই। ওখানে এক কাপ চায়ের দামই ২০০ টাকা।”
ছবি: সুবীর হালদার
তবে এখনও তাঁরা আশাবাদী, দূতাবাস ও ক্রীড়া সংস্থাগুলো থেকে হয়তো কোনও সাহায্য পাওয়া যাবে। চৈতালির কথায়, “ওরা যদি আমাদের (ফাইনালের) টিকিটটা দেয়, তা হলে চেষ্টা করব। কিন্তু তার পরেও পাঁচ দিনের থাকা-খাওয়ার খরচ আছে। মনে হয় না পারব বলে।”
৩১ জুলাই তাঁদের পঞ্চাশতম বিবাহবার্ষিকী। চৈতালি বলেন, “আমাদের কোনও সন্তান নেই বলে এই দিনটা আমরা ভালো করে উদযাপন করি। তবে এ বছর আর তা করা হবে না। তখন তো সবেমাত্র রাশিয়া থেকে ফিরব, তাই।”