সিকিমে বিমান পরিষেবা সেপ্টেম্বরে: গ্যাংটক কি এবার উইকেন্ড ডেস্টিনেশন হবে?
ছুটির শনিবার সকালে বেড়িয়ে, দু'দিন পাহাড়ি আবহাওয়ার মজা নিয়ে, সোমবার অফিসের আগেই ফিরে আসা
- Total Shares
'সারা ভারত ঘুরে বেড়াস, এদিকে কথা উঠলেই খালি পাহাড় পাহাড় করিস কেন বলত?' - প্রশ্নটা আমার দিকে ছুড়ে দিয়েছিল অভিরূপ বেশ কিছুদিন আগের এক আড্ডাতে। এর সত্যিই কোনও যুৎসই উত্তর আমি তখনও দিতে পারেনি আর আজকেও আমার কাছে নেই।
সত্যিই তো, এত কষ্টের সফর তার পরেও কেন সেই উচ্চতার হাতছানি মনের সপ্তকে বারবার টুংটাং আওয়াজ করে সমস্ত শরীর অস্থির করে নিজের কাছে ডাকে। ঠিক যেন বহুদিনের সম্পর্কের পরেও অচেনা প্রেমিকার প্রতি আগ্রহের টান।
আমি কেবল উত্তরে বলেছিলাম, "ভালো লাগার কোনও কারণ হয় না ভাই, তোর তো ঘোরা মানেই হয় দিঘায়, মুকুটমণিপুর, মন্দারমণি এসব, খালি দুস্টুমির মতলব। ঘোরার জন্য তো তুই ঘুরিস না। তাই পাহাড়ের রসও বুঝবি না।"
রুমটেক মনাস্ট্রি
আমার মনে পড়ে গেল গ্যাংটকের তারকন হোটেলের জানলা দিয়ে মাউন্টেন ভিউ দেখতে দেখতে অলস ভাবে সময় কাটানোর মজা। এ মজা অভিরূপ পায়নি। ওর মজা একটু অন্য। তাই তো ৩৪ বছর বয়েসেও এখনও ও বিয়ে করতে পারল না।
সুদীপ হটাৎই বলে উঠল, "শুধু ওকে বলছিস কেন, আমারও তো সেই অবস্থা। সেই ছেলেবেলায় দার্জিলিং গেলাম বাবা-মার্ সঙ্গে। তারপর এই আইটির চাকরি, ছুটি তো সেই দু'দিন। চাইলেও দেয় না। বিয়ের পর বৌয়ের আবদারে ব্যাঙ্কক গেলাম, সেই সমুদ্র। কবে থেকে প্ল্যান করছি কোথাও একটা যাব, ছুটি চাইলে বসের গালাগাল আর ঘুরতে নিয়ে যেতে পারছি না বলে বৌয়ের গালাগাল - অসহ্য। তাই অগত্যা দিঘা-তাজপুর জিন্দাবাদ, অন্তন্ত বিদ্রোহ দমন করা যায়।"
সেপ্টেম্বরে শুরু হচ্ছে বিমান পরিষেবা
গ্যাংটকের এমজি মার্গ
এই যুক্তিটা আমায় সেদিন দমিয়ে দিয়েছিল। সত্যি তো বাংলার মানুষদের এত কাছের জায়গায় ঘুরতে গেলে কত সময় লাগে।
কিন্তু আজকের রবিবারের আড্ডায় ফের সেই সকলকেই ডেকেছি আমার বাড়িতে, সেদিনকার বিষয় উত্থাপন করব বলে। মাঝে এতদিন কেটে গেছে। সকলে হয়ত ভুলেও গেছে, কিন্তু আমি ভুলিনি। সমস্ত পাকা খবর জোগাড় করেই ওদের ডেকেছি। আজ ওদের বলব 'দিঘা-বকখালি খালি খালি যাওয়া কেন বাবা, যখন গ্যাংটকই এখন উইকেন্ড ডেস্টিনেশন হচ্ছে।'
আগামী সেপ্টেম্বর থেকেই পাকিয়ং বিমানবন্দরে বিমান পরিষেবা শুরু হচ্ছে। মন্ত্রী সুরেশ প্রভু লাইসেন্স পাওয়ার পরই স্পাইস জেট গত ১০ মে পরীক্ষা মূলক ভাবে বিমান উড়িয়েছে সেখানে। শুধু তাই নয়, কেন্দ্রীয় বিমান মন্ত্রকের উদান প্রকল্পের আওতায় থাকায় , ভাড়াও অত্যন্ত কম। যারা কোনওদিন বিমানে চাপেনি, তাদের পক্ষেও এই সুযোগ দারুন। ছুটির শনিবার সকালে পেকিয়ং পৌঁছে মাত্র এক ঘণ্টার পথ গ্যাংটক। দু'দিন পাহাড়ি আবহাওয়ার মজা নিয়ে ফের সোমবার অফিসের আগেই ফিরে আসা। এ যেন ঠিক ধর্মতলার বাসে টুক করে দিঘা ঘুরে আসার মতো ব্যাপার। যাদের পাহাড়ে টান এবং চাকরির অসুবিধা, তাঁদের ক্ষেত্রে এই পরিষেবা অনেকটা অক্সিজেনের মতো।
আজ আসুক বেটারা। জানিনা এই তথ্য যতটা আমাকে উজ্জীবিত করেছে ততটা ওদের করবে কিনা। যাঁরা শুধু বিদ্রোহ দমন নিয়েই চিন্তিত, তারা জীবনের স্বাদ নিতে পারে কি?