চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহশালার স্থপতি ও গবেষক দিলীপকুমার মৈতে প্রয়াত

আগ্রহীদের ঘুরিয়ে দেখাতেন সেই ছোট ঘরে রাখা ইতিহাসের নানা নিদর্শন

 |  2-minute read |   21-05-2018
  • Total Shares

শৈশব থেকেই থেকেই তাঁর শখ ছিল মাঠঘাট ঘুরে বিচিত্রদর্শন মাটির জিনিস কুড়িয়ে আনা। কখনও মাটির পাত্র, কখনও বা পুতুল। বড় হয়ে জানতে পারলেন, নেহাত খেলার ছলে যা জমা করেছেন তা আসলে বহু প্রাচীন বাঙালি সভ্যতার পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন। গ্রিকদের লেখায় যে সভ্যতাকে গঙ্গারিডি বা গঙ্গারিডাই বলে বর্ণনা করা হয়েছে। মাটি থেকে কুড়িয়ে আনা সেই সব সংগ্রহ সাজিয়ে নিজেই তিল তিল করে গড়ে তুললেন চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহশালা।

দিলীপকুমার মৈতে। বেড়াচাঁপা বলতে গেলে যাঁর নাম প্রথম মনে আসে, সেই স্থানীয় ইতিহাসবেত্তা প্রয়াত হয়েছেন ২০ মে রাত সাড়ে ন’টা নাগাদ।

body3_052118051735.jpgদিলীপকুমার মৈতে

বেড়াচাঁপা বাস স্ট্যান্ডে নেমে দেগঙ্গা থানার দিকে গেলে বাঁহাতে তাঁর সিঁড়ির দরজা, অবারিত দ্বার। সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলে দোতলায় সংগ্রহশালা। আগ্রহী কেউ গেলে নিজেই তাঁকে ঘুরিয়ে দেখাতেন সেই ছোট ঘরে রাখা ইতিহাসের সাক্ষীসাবুদ। পরিচয় করিয়ে দিতেন ইতিহাসের সঙ্গে। তারপরে জানলার ধারে রাখা চেয়ারে বসে শোনাতেন তাঁর সংগ্রহ করার কথা। জন্ম ১৯৩৬ সালে। ছেলেবেলা থেকে কুড়িয়েছেন ঝুড়িছাপ পাত্র, রোমান অ্যাম্ফোরা, যক্ষীমূর্তি, নানা ধরনের পুঁতি, মুদ্রা প্রভৃতি। সে সবের ইতিহাস, তাৎপর্য শোনাতেন উল্টোদিকে বসা মানুষটিকে। অনেকে তাঁর লেখা বইও সংগ্রহ করতেন তাঁর থেকেই। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে দেখেছেন খনামিহিরের ঢিবির উৎখনন। সেই ছবি আজও টাঙানো তাঁর দেওয়ালে।

বছরখানেকের বেশি সময় অবশ্য মৈতেবাড়িতে ঢোকার পথটাই বদলে গিয়েছিল। বাড়ির পিছন দিয়ে প্রবেশ পথ, সেখানে অস্থায়ী থানা। থানায় জবাবদিহি করলে, মৈতেবাড়ির সঙ্গে আত্মীয়তা-সখ্যতা থাকলে তবেই অনুমোদন মিলত প্রবেশের। তখন দিলীপকুমার মৈতে শয্যাশায়ী। পরিচিতদের এমন বিড়ম্বনায় পড়তে দেখলে দিলীপকুমার মৈতের ছেলে দীপন ভীষণ অস্বস্তিতে পড়তেন। কিন্তু তাঁরও কিছু করার ছিল না।

এত নিরাপত্তার কারণ চন্দ্রকেতুগড় সংগ্রহশালা। সেই সংগ্রহ নিয়ে রাজ্য সরকার সংগ্রহশালা বানাবে। কিন্তু সেটা আর জীবদ্দশায় দেখে যেতে পারলেন না আজীবন ইতিহাসের নিদর্শন আঁকড়ে থাকা সেই মানুষটি।

কলকাতায় বড় হলে বক্তৃতা করতে তাঁকে দেখা যায়নি, ভালোবাসতেন মাটির কাছাকাছি থাকতে। তাই তাঁর প্রয়াণে শোকবার্তার ঢলও নামেনি। যদিও তাঁকে যাঁরা জানেন, তাঁরা মানছেন, তাঁর মৃত্যু মানে বড় ক্ষতি। তাঁর মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায়।

sukhendu1_052118051702.jpg

মনমোহন সিং যখন দেশের প্রধানমন্ত্রী তখন তাঁর কন্যা গবেষক উপিন্দর সিং, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা নয়নজ্যোত লাহিড়ী ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতত্ত্ব বিভাগের রূপেন চট্টোপাধ্যায় তাঁর সংগ্রহ ঘুরে দেখেন। যখনই কেউ গবেষণার জন্য সহায়তা চেয়েছেন, তখনই সানন্দে তাঁদের সহায়তা করেছেন দিলীপকুমার মৈতে।

body2_052118051852.jpgদিলীপকুমার মৈতের সংগ্রহ থেকে

সরকার আইন করায় যখন সংগ্রহ করা বন্ধ করে দেন, তখন পুরোনো সংগ্রহই আরও যত্নে রাখার চেষ্টা করতেন। যত নিদর্শন তিনি পেয়েছেন ও দেখেছেন, সংখ্যার বিচারে সবচেয়ে বেশি যক্ষীমূর্তি। তিনি নিজেই বলেছিলেন। আর অনন্য বলতে ছিল ওই অ্যাম্ফোরা, যা অতি প্রচীন যুগে বেড়াচাঁপার সঙ্গে জলপথে ইউরোপের যোগাযোগের প্রামাণ্য দলিল।

বয়সের ভারে দীর্ঘদিন অসুস্থ ছিলেন, শেষ দিকে উত্থানশক্তি রহিত হয়ে পড়েছিলেন। বেড়াচাঁপায় দিলীপকুমার মৈতে আর কাকদ্বীপে নরোত্তম হালদার হয়ে উঠেছিলেন গঙ্গারিডি সভ্যতার আকর।

If you have a story that looks suspicious, please share with us at factcheck@intoday.com or send us a message on the WhatsApp number 73 7000 7000

Writer

Comment