ইতিহাসে এগিয়ে স্পেন, পশ্চিম ইউরোপের ডার্বি আজ রাশিয়ায়
দু'দেশ ৩৫ বার মুখোমুখি হয়েছে, ১৮ বার জয়ী স্পেন, ৬ বার পর্তুগাল
- Total Shares
বিশ্বকাপে আজ স্পেন ও পর্তুগাল মুখোমুখি। এই দু’টো দেশের খেলাকে আইবেরিয়ান ডার্বি বলে চিহ্নিত করা হয়। কারণ ইউরোপের দক্ষিণ-পশ্চিমে আইবেরিয়ান উপদ্বীপের পাশাপাশি দু’টি দেশ হল এই স্পেন ও পর্তুগাল।
রাশিয়ার মাঠে আজ কী হবে, সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। আগে একটু ইতিহাসের পাতা উল্টে দেখা যাক।
পর্তুগালের এক রাজা হেনরি ছিলেন নিঃসন্তান। ১৬৫১ সালে স্পেনের রাজা ফিলিপ পর্তুগাল দখল করে দু’টি দেশক একত্রিত করে দেন। তা নিয়ে পর্তুগিজরা খুশি ছিলেন না। রীতিমতো যুদ্ধ করে ৬০ বছরের মধ্যেই আবার স্বাধীনতা লাভ করে পর্তুগাল।
দুই দেশের প্রতিদ্বন্দ্বিতার যেন অন্ত নেই। পরবর্তীকালেও স্পেন এক সময় ফ্রান্সের প্রতি সহাভূতিশীল ছিল। উল্টোদিকে আবার পর্তুগালের সমর্থন বরাবরই ফ্রান্সের শত্রু ইংল্যান্ডের দিকে। এই শত্রুতার জেরে দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধ-বিদ্রোহ লেগেই ছিল এবং আঠেরোশো শতাব্দীতে দু'দেশের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছে সাত বারের উপর।
ইতিহাসের পাতার মতোই ফুটবল মাঠেও এদের জোর প্রতিদ্বন্দ্বিতা। দু'দেশ ৩৫ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে অধিকাংশ ক্ষেত্রে, মোট ১৮ বার, জয় লাভ করেছে স্পেন। উল্টোদিকে, পর্তুগাল মাত্র ৬ বার স্পেনকে হারাতে পেরেছে।
কাকতলীয় হলেও পর্তুগালের আন্তর্জাতিক অভিষেক কিন্তু স্পেনের বিরুদ্ধেই, ১৯২১ সালে। সেই ম্যাচে স্পেন ৩-০ গোলে বিজয়ী হয়।
এই দু’টো দেশের খেলাকে আইবেরিয়ান ডার্বি বলে চিহ্নিত করা হয়
এর পর দুই দেশের মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য খেলার কথায় আসা যাক। ১৯৩৪ সালের বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইয়ারে স্পেন পর্তুগালকে ৯-০ ব্যবধানে হারায়। ২০১০ সালের প্রি-কোয়ার্টার ফাইনালে দুই দেশ মুখোমুখি হয়েছিল। সেখানে স্পেন ১-০ ব্যবধানে জয়লাভ করে। ২০১২ ইউরো কাপেও পেনাল্টিতে স্পেন জয় লাভ করে। নির্ধারিত সময় ম্যাচ গোলশূন্য ছিল। স্পেনের বিরুদ্ধে পর্তুগালের একমাত্র উলেখযোগ্য জয় ইউরো কাপ ২০০৪ সালে। সেই পর্তুগালের দল ফিগো, রোনাল্দো, লুনো গোমেজ সমৃদ্ধ ছিল।
এবার আজকের খেলায় আসা যাক।
স্পেন দলের বেশিরভাগ খেলোয়াড়ই রিয়াল মাদ্রিদ ও বার্সেলোনার। এমনকি পর্তুগালের সেরা খেলোয়াড় রোনাল্দোকে আজ মুখোমুখি হতে হেব তাঁর মাদ্রিদ দলের ছ'জন সহ-ফুটবলারের, যাঁরা এই স্প্যানিশ দলের মূল মুখ। যাঁদের মধ্যে আছেন র্যামোস, ইস্কো, নাচো ও অ্যাসেনসিও।
স্প্যানিশ ফুটবল মূলত মাঝমাঠের দখলের উপর নির্ভরশীল এবং সেখানে তাঁদের নেতৃত্ব দেবেন বর্ষীয়ান ফুটবলার ইনিয়েস্তা। ৩৪ বছর বয়সের ইনিয়েস্তা ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছেন এটাই তাঁর শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। সুতরাং, দলের সহকর্মীরা চাইবেন বিশ্বকাপ জয় দিয়েই তাঁকে বিদায় জানাতে।
বিশ্বকাপ শুরুর আগে লোপেজ গুইকে সরিয়ে নতুন প্রশিক্ষক হিয়েরোকে এনেছে স্পেন। লোপেজ গুইয়ের অনুশীলনে যোগ্যতা নির্ধারণ পর্বে স্পেন অপরাজিত ছিল। এই মুহূর্তে অবশ্য হিয়েরোর পক্ষে নতুন ছকে দল সাজানোর সম্ভাবনা ক্ষীণ, তবু বিশ্বকাপের মতো বড় টুর্নামেন্টের আগে কোচ পরিবর্তনের একটা প্রভাব তো থাকবেই।
দর্শকরা তাকিয়ে থাকবেন রোনাল্দো-র্যামোসের লড়াইয়ের দিকে
উল্টোদিকে, পর্তুগালের ফুটবল ব্যক্তি নির্ভর। এবং সেই ব্যক্তির নাম রোনাল্ডো। যোগ্যতা নির্ধারণ পর্বে রোনাল্ডো একাই ১৫টা গোল করেছেন। এবং চ্যাম্পিয়ন্স লিগেও দেখা গেছে তাঁর ক্ষুরধার ফর্ম। ৩৩ বছরের রোনাল্ডো হয়ত এখন আর আগের মতো উইং বরাবর আক্রমণ করবেন না। কিন্তু পেনাল্টি বক্স এবং শূন্যে তিনি আগের মতই বিপদ্দজনক।
এছাড়া পর্তুগালের দলের খেলোয়াড় বার্নান্দো সিলভা, ব্রুনো, পেপে, মোটিনহো ইউরোপের বিভিন্ন লিগে নিজেদের দক্ষতা প্রমাণ করেছেন। কোনও বড় পর্যায়ের টুর্নামেন্টে পর্তুগাল বরাবরই কালো ঘোড়া বলে আখ্যা পেয়ে থাকে। এর মধ্যেই ২০১৬ সালের ইউরো কাপে মধ্য মানের দল নিয়েও অভিজ্ঞ কোচ ফার্নান্দো সান্তোস ফ্রান্সকে হারিয়ে পর্তুগালকে চ্যাম্পিয়ন করেছিলেন।
রোনাল্দো এই দলের নেতা এবং তাঁর দিকেই তাকিয়ে গোটা পর্তুগাল। সেটা মেনে নিয়েও তাঁদের কোচ বলেছেন ফুটবল ১১ জনের খেলা।
আজ অবশ্য দর্শকদের আনন্দ দেওয়ার জন্য প্রচুর উপাদান মজুত থাকবে। দর্শকরা তাকিয়ে থাকবেন রোনাল্দো-র্যামোসের লড়াইয়ের দিকে। ইনিয়েস্তার মাঝমাঠের কর্তৃত্ব দেখতে।
এই ম্যাচে পরিসংখ্যান স্পেনকে এগিয়ে রাখছে। কিন্তু বিশ্বকাপের মতো টুর্নামেন্টে, যেখানে সবাই নিজেদের উজাড় করে দিতে চাইবে, ম্যাচের ভাগ্য শেষ অবধি নির্ধারিত হয় ৯০ মিনিটের চূড়ান্ত লড়াইয়ে।