আবহাওয়ার চূড়ান্ত পরিবর্তন, ঝুঁকির মুখে বিশ্ব
“আমি এই প্রথম তাপমাত্রাকে গতকয়েক বছরের মধ্যে এভাবে লাফিয়ে লাফিয়ে পরিবর্তিত হতে দেখছি”
- Total Shares
সম্প্রতি আবহাওয়া পরিবর্তনের কারণগুলো নিয়ে আমি আরও কিছুটা গবেষণা করি। গবেষণায় আবহাওয়ার যে দিকগুলো উঠে এসেছে সেটা সত্যিই ভাবায়।
আবহাওয়ার তিনটি দিক রয়েছে ইংরেজিতে যেগুলোকে বলা হয় চেঞ্জ (বদল), ভেরিয়াবিলিটি (পরিবর্তনশীলতা) এবং অন্যটি এক্সট্রিম (চূড়ান্ত)। আমার ৩৬ বছরের গবেষণার তথ্য সংগ্রহর ভিত্তিতে এই প্রথম আমাদের চারপাশের তাপমাত্রাকে গতকয়েক বছরের মধ্যে লাফিয়ে লাফিয়ে এভাবে পরিবর্তন হয়ে যেতে দেখলাম।
যদি বৃষ্টিপাতের কথা ধরা হয় তাহলে দেখা যাচ্ছে সারা বছরে বৃষ্টিপাতের অনুপাতে তেমন একটা তারতম্য হয়নি বরং একই রয়েছে। ঠিক একই ভাবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও বলার মতো তেমন একটা তফাৎ হয়নি। তবে আবহাওয়ার একটা চূড়ান্ত পরিবর্তন ঘটেছে।
একটু বুঝিয়ে বলি। ধরা যাক আগে কোনও একটি নির্ধিষ্ট বছরে যদি ২৪ বার বিদ্যুৎপাত হতো তাহলে ঠিক তার পরের বছর বছরের বিদ্যুৎপাতের পরিমাণ ছিল মোটে চারটে। এখানে একটা মজার বিষয় হল আগে যেমন বলেছিলাম বৃষ্টির অনুপাত কিন্তু ঠিক একই রয়েছে। এটা সম্ভব হচ্ছে কারণ দেখা যাচ্ছে কোনও এক বছরের জেলার একটি অঞ্চলে যেমন অনাবৃষ্টি এবং অন্য আর একটি অঞ্চলে অতিবৃষ্টি। তাই এভাবে সারা বছরে ঠিক যতটা বৃষ্টি হওয়ার কথা সেটা কোথাও গিয়ে পুষিয়ে যাচ্ছে।
তাই এই যে আবহাওয়ার চূড়ান্ততা সেটাই গবেষকদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলছে কারণ এটা কখনও কাম্য নয়। শীতকালে এখন তেমন একটা ঠান্ডা পড়ে না বরং একটা হালকা গরম জামা চাপিয়েই শীতের বেশিরভাগ সময়টা দিব্য কাটিয়ে দেওয়া যায়। এমনটাতো হওয়ার কথা নয়। যখন যেটা হওয়ার ঠিক সেটাই হওয়া বাঞ্চনীয়। তাই বিভিন্ন আবহাওয়াবিদরা এখন এই বিষয়টি নিয়েই মূলত গবেষণা চালিয়ে চলেছেন।
এখন সবকোটা মরশুম অসময় দেখা দিচ্ছে। ইন্টারগভর্নমেন্টাল প্যানেল অন ক্লাইমেট চেঞ্জ (আইপিসিসি)-র পাঁচ নম্বর মূল্যায়ন রিপোর্টে বলা রয়েছে যে অবহাওয়ার পরিবর্তনের চেয়ে আবহাওয়ার এই যে চূড়ান্ত বদল সেটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ পৃথিবীর সর্বত্র যে ভাবে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটছে তার একটা খারাপ প্রভাব রয়েছে।
শহরে মাঝে মধ্যেই চার দিক কালো করে প্রচন্ড বৃষ্টি হচ্ছে তারপরেই আবার প্রচন্ড গরম পড়ছে। আগে ঠিক এই সময়টাতে বৃষ্টি হত না। এখন বৃষ্টি হয় অসময়।
আবহাওয়ার এ হেন খামখেলায়ইপোনার অনেকগুলো কারণ আছে।শহরগুলোকে আরও সুন্দর ও উন্নত করার জন্য অট্টালিকার মতো যে একের পর এক হাই রাইজ তৈরি হয়ে চলেছে সেগুলো আদতে আরও গরম টেনে আনছে। এই বাড়িগুলো বানাতে পুকুর, খেয়ালবিল প্রভৃতি বুজিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এছাড়াও যেমন ভাবে কোনও রকম পরিকল্পনা ছাড়া কলকারখানাগুলো গজিয়ে উঠছে এবং যে হারে এরা তেল-কালি ও বর্জ্য চারপাশে ছড়াচ্ছে তার ফলেও আমাদের বায়ুমণ্ডলের মারাত্মক ক্ষতি সাধন হচ্ছে।
এছাড়া শহর সৌন্দর্যায়নের জন্য একের পর এক গাছ কেটে ফেলা হচ্ছে। গাছ যেহেতু আবহাওয়ার অনেক খারাপ পদার্থ শুষে নিতে পারে। তাই গাছ কেটে ফেললে আখেরে আমাদেরই খারাপ উপকার হচ্ছে।
ব্যাপারটা বেশ মারাত্মক তাই আমরা জাতীয় স্তরে গবেষণা চালাচ্ছি।