বৃষ্টির এই বিলম্ব ও খামখেয়ালিপনার দায় এড়াতে পারে না ধাপার মাঠ
বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে মেতে থাকলেই চলবে না, অন্য ব্যাপারেও সচেতন হতে হবে
- Total Shares
হাঁসফাঁস করা গরমের দহনের পর চারদিক শীতল করে বৃষ্টি নামল। বেশ কয়েকদিনের অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সঙ্গে তাপপ্রবাহ থেকে রেহাই মিলল। না তবে খুব একটা আনন্দিত হওয়ার বোধহয় এখনও তেমন একটা কারণ ঘটেনি, কারণ আলিপুর আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে রাজ্যে বর্ষার বৃষ্টি আসতে এখনও একটু দেরি আছে। ২৩ তারিখের আগে রাজ্যে লাগাতার বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
পাশাপাশি হাওয়া দপ্তর জানিয়েছে যে আজ সকাল থেকে শহরের মানুষ যে বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টি উপভোগ করল তা কেবল মাত্র বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি। বর্ষাকালে মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে যে বিস্তৃত ভাবে বৃষ্টি হয় আজকের বৃষ্টি তা নয়। তাই আরও কয়েকদিন এ রকম গরমই থাকবে।
বুধবারের বৃষ্টি ছিল সাময়িক, গরম এখনই কমছে না
আজ সকাল ৮.৩০ থেকে দুপুর ২.৩০ পর্যন্ত ১৭.৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আজকের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৩৬.১ ও ২৯.৬-এর কাছাকাছি ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা ছিল ৮৯ শতাংশের কাছাকাছি। গতকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৪০.৬ ও সর্বনিম্ন ৩০.৯। অর্থাৎ, একপশলা বৃষ্টিতে তাপমাত্রা অনেকটাই কমেছে, সাময়িক হলেও স্বস্তি সূচক উঠেছে।
আমাদের রাজ্যে কালবৈশাখী হয় সাধারণত ১৫ এপ্রিল থেকে ৩১ মের মধ্যে। সেই সময়সীমা পেরিয়ে যাওয়ায় কালবৈশাখীর সম্ভাবনা নেই। মাসের প্রথম দিকে কিছুটা বিক্ষিপ্ত বৃষ্টি হলেও তারপর বৃষ্টির আর কোনও নামগন্ধই নেই। যেমন বেড়েছে গরম, তেমন অসহ্য তাপপ্রবাহের প্রকোপ রাজ্যজুড়ে।
বর্ষাকালের মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে যে বিস্তৃত ভাবে বৃষ্টি হয় আজকের বৃষ্টি তা নয়
অনেকেই বলছেন আগে ঠিক এতটাও গরম পড়ত না কিংবা গরমে এতো কষ্টও হত না। তা হলে কেন এমনটা ঘটল? কী কারণে ইদানীং গরম এত বেড়ে যাচ্ছে?
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সুতপা চৌধুরী জানিয়েছেন, অস্বস্তি সূচক ধীরে ধীরে বেড়ে চলেছে। তাই গরমে এখন এত কষ্ট হয়। অর্থাৎ তাপমাত্রা যদি ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে মনে হচ্ছে যেন তাপমাত্রা ডিগ্রি সেলসিয়াসের কাছাকাছি।
এমনটা মনে হওয়া বিভিন্ন কারণ রয়েছে। হাওয়ার মধ্যে ক্ষুদ্র ধুলোকণা সব সময় ভাসতে থাকে যাকে ইংরেজিতে এরোসল বলা হয়। আমাদের চারপাশে যে হারে দূষণ বাড়ছে সেই দূষণের কারণে বায়ুতে এরোসলের মাত্রাও বাড়ছে লাফিযে লাফিয়ে। বায়ুমণ্ডলে থাকা এই এরোসলের সংখ্যা যদি বেড়ে যায় তখন সূর্য থেকে যেই রশ্মি ও তার বিকিরণ পৃথিবীর উপরে এসে পড়ে তা আর ফিরে যেতে পারে না। পৃথিবীতেই আটকে পড়ে। এর ফলে গরম আরও বেড়ে যায়। আকাশে কোন গভীর ও বড় ধরণের মেঘ সৃষ্টি হতেও পারে না, যার ফলে বৃষ্টির হারও কমে যায়।
আর একটা কারণ হল, সমুদ্র ও মহাসমুদ্রের পৃষ্ঠ ক্রমশ উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। সমুদ্রের মধ্যে বিভিন্ন ধরণের গাছপালা, মাছ-সহ বিভিন্ন প্রাণী ও প্ল্যাঙ্কটন রয়েছে। বৃষ্টির পরিমাণ ও সময়ের হেরফের হলে সমুদ্রের জলে লবনের ঘনত্বের যে তারতম্য ঘটে, তার প্রভাব পড়ে পুরো সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের উপর। উদারহণ হিসাবে বলা যায়, লবনের ঘনত্বের তারতম্যের জন্যই এখন মাছগুলো আর আগের মতো আকারে তেমন একটা বড় হয় না।
বৃষ্টির হেরফের হলে সমুদ্রের জীবজগতেও তার প্রভাব পড়ে
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুধু বিশ্ব উষ্ণায়ন নিয়ে মেতে থাকলেই চলবে না, পৃথিবীর মানুষকে আরও অনেক বেশি করে সজাগ হতে হবে। সাধারণ মানুষের মধ্যে এই বিষয়ে যেমন সচেতনতা নেই। যাঁদের এ ব্যাপারে সচেতন করার কথা, তাঁরাও ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন না। তাই সমস্যা বেড়েই চলেছে।
শহরের ধাপার মাঠও কিন্ত অনাবৃষ্টির অন্যতম কারণ
সুতপা চৌধুরী বলেন, “আমাদের শহরের ধাপার মাঠও কিন্ত অনাবৃষ্টির বিরাট কারণ। অবাক হচ্ছেন? ওখানে যে সারা শহরের আবর্জনা ফেলা হয় আমরা মনে করি আমাদের শহর পরিছন্ন হচ্ছে কিন্তু আমরা জানি না যে এই আবর্জনার পাহাড় থেকে আরও কোটি কোটি ভাসমান কণা বায়ুতে মিশছে যার প্রত্যক্ষ পরিণাম বৃষ্টি কমে যাওয়া। ঠিক যেমন আমাদের দেশে বন্যা বা প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবিলা কেন্দ্র রয়েছে, কিন্তু কেন বা কোন পরিস্তিতিতে প্রাকৃতিক বিপর্যয় হয়, সে সব নিয়ে কোনও পড়াশোনা ও গবেষণা আমাদের রাজ্যে হয় না বললেই চলে। সমস্যার উৎস যদি আমরা জানতে না পারি তা হলে তার সমাধান করব কী করে?”
ঘর পরিষ্কার রাখতে গিয়ে বাইরের পরিবেশকে দূষণ করলে চলবে না
তাই দায় আমাদেরও। নিজের ঘর পরিষ্কার রাখতে গিয়ে বাইরের পরিবেশকে দূষণ করলে ভুগতে আমাদেরই হবে আর আমরা যেই বিষবৃক্ষ রোপন করছি তার বিষফল খাবে আমাদের পরের প্রজন্ম।