কী ভাবে একজন মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তিও অপরাধ করতে পারে সুপরিকল্পিত ভাবে
মানুষের মন ভালো ভাবে জানার জন্য সাইকোলজিস্টরা বিভিন্ন গবেষণা করছেন
- Total Shares
আমরা অনেক সময় দেখি বহু মানুষ মারাত্মক সব অপরাধ করেছে এবং ধরা পড়ার পর জানা যাচ্ছে যে সেই ব্যক্তি মানসিক ভাবে অসুস্থ বা মানসিক ভারসাম্যহীন। এর ফলে তাদের শাস্তি অনেকাংশেই লঘু হয়ে যায়।
২০১৫ সালের কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটে যে ঘটনাটি ঘটে গিয়েছিল সেটা পুরো দেশকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। সেই মামলায় পার্থ দেকে গ্রেফতার করেছিল কলকাতা পুলিশ। তারপর তদন্তে দেখা গিয়েছিল যে পার্থ দে স্ক্রিৎজোফ্রেনিয়া রোগে আক্রান্ত। তাঁকে দীর্ঘদিন পাভলভ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাখার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। তারপর তাঁর মৃত্যু হয়েছিল বেশ অস্বাভাবিক ভাবে। পুলিশের অনুমান, তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন।
যদিও ওই মামলায় পার্থ দে কোনও খুন করেননি তবে তিনি চূড়ান্ত মানসিক বিকার থেকে নিজের দিদির ও পোষা কুকুর দুটোর কঙ্কালের সঙ্গে এক ঘরে বাস করতেন।
তারপর আমরা বেহালার শুভব্রত মজুমদারের ঘটনাতেও দেখি মানসিক বিকারের জন্য তিনি যে তাঁর মায়ের কঙ্কালকে সংরক্ষণ করে রেখেছিলেন।
এই মানুষগুলোর কোনও রকম অপরাধ বোধ কাজ করে না
এছাড়াও এমন অনেক মামলা আমরা নিত্যদিন খবরের কাগজে পড়ে থাকি যেখানে মানসিক অস্বাভাবিকতার বশবর্তী হয়ে অনেকে মারাত্মক রকম অপরাধ ঘটাচ্ছেন।
আমার মনে হয় যেই মানুষটির মানসিক বিকারের প্রকাশ এতটা মারাত্মক তাকে কোনও ভাবেই ছেড়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ দীর্ঘসময় চিকিৎসাধীন থাকার পরেও এই ধরণের মানসিকতার মানুষজন পুরোপুরি ভাবে সুস্থ হন না বললেই চলে। তাই এরাও সমাজের মূলস্রোতে ফিরতে পারে ভেবে এদের শাস্তি কিছুটা হালকা করে এদের যদি ছেড়ে দেওয়া হয় তা হলে এরা যে ওই ধরণের কাজ আবারও করবে না সেই অনুমান সম্পূর্ণভাবে নস্যাৎ করে দেওয়া যায় না।
এই মানুষগুলোর কোনও রকম অপরাধ বোধ কাজ করে না, এরা অনুতপ্তও হয় না কিংবা এই কাজের ফলে এদের নিজেদের ভবিষ্যৎ যে কতটা ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে সেটাও তারা বিবেচনা করার পরিস্থিতিতে থাকে না। কারণ এখানে মনে রাখতে হবে, যে ব্যক্তি এই ধরণের কাজ একবার করেছে সে কোনও ভাবেই নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না। এর প্রধান কারণ হল সেই ব্যক্তি যখন এই কাজটি করছে সে বুঝতেই পারে না যে সে মারাত্মক কিছু একটা ঘটাতে চলেছে এবং সেই কাজের পরিণামটাও যে একই রকম ভাবে ভয়ানক। সে খারাপ-ভালোর মধ্যে পার্থক্যই করতে পারে না।
যেই মানুষটির মানসিক বিকারের প্রকাশ এতটা মারাত্মক তাকে কোনও ভাবেই ছেড়ে দেওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না
আবার অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে অসুস্থতার আড়ালে অনেক অপরাধপ্রবণ মানুষ খুব সুপরিকল্পিত ভাবে দোষ করে তারপর নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করার জন্য বা অপরাধ করার সময় তার কোনও খেয়াল থাকে না তেমন কিছু যুক্তি খাড়া করার চেষ্টা করে।
যেই ব্যক্তিকে গ্রেফতার করার পর বিভিন্ন পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে যাচাই করতে হবে যে সেই মানসিক ভাবে সেই ব্যক্তি যদি সত্যি অসুস্থ হয় তাহলে তার অসুস্থতার গভীরতা ঠিক কোন পর্যায়।
পার্থ দে
যদিও বিভিন্ন সময়ে বিতর্ক উঠেছে যে যাঁরা মানসিক ভাবে অসুস্থ তাঁরা কী ভাবে এতখানি সুপরিকল্পিত ভাবে অপরাধ করতে পারেন, সেটা কি আদৌ সম্ভব? অ্যান্টিসোশ্যাল ম্যানুয়ালে এই কথাটি বলা যাচ্ছে যে এই ধরণের অসামাজিক কাজ তারা বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই খুব সুপরিকল্পিত ভাবেই করে। তা ছাড়া একজন মানুষের মানসিক বিকার থাকা মানে যে সে সুপরিকল্পিত ভাবে কিছু করতে সক্ষম নয় তেমনটা কিন্তু ভাবার কোনও কারণ নেই। অর্থাৎ এই ধরণের মানুষ তাদের 'মোটিভ'-টাকে চরিতার্থ করার জন্য খুব সুপরিকল্পিত ভাবেই অপরাধ করে এবং তার জন্য তাঁদের কোনও খেদ নেই, কোনও অপরাধবোধ নেই বা দুঃখও নেই।
একজন মানুষের মানসিক বিকার থাকলে যে সে সুপরিকল্পিত ভাবে অপরাধ করতে পারে না এমনটা নয়
এই ধরণের মানুষ অন্যদের নিজেদের আদবকায়দা, বাচনভঙ্গি ও ভাবভঙ্গি দিয়ে অনেককে আকৃষ্ট করতে পারেন, যাকে আমরা বলি আকর্ষণীয় ব্যক্তিত্ব। মানুষের মনের মতো একটা জটিল জিনিসের নাগাল পাওয়া খুব সহজ কথা নয়। আর সেই চেষ্টাতেই সাইকোলজিস্টরা বিভিন্ন গবেষণা চালাচ্ছেন।