ভালো হুজুগে মেতে থাকলে ক্ষতি নেই তবে চিন্তা হুজুগ যখন প্রাণঘাতী নেশায় রূপান্তরিত হয়
হুজুগ ব্যাপারটা খুবই অল্প মেয়াদি তাই যেকোনও হুজুগ বেশিদিন টিকে থাকে না
- Total Shares
সম্প্রতি একটা খবর পড়ে বেশ বিস্মিত হলাম মুর্শিদাবাদের সামশেরগঞ্জের এক যুবক দ্রুতগতিতে মোটরবাইক চালানোর সময় ফেসবুক লাইভ করতে গিয়ে পথ দুর্ঘটনায় মারা যায়। মোটরবাইক চালাবার সময় ফেসবুকে লাইভ করতে গিয়ে অসাবধানতার ফলে বাইকটি একটি লরিতে গিয়ে ধাক্কা মারে। ফেসবুকের বাকি বন্ধুদের কাছে হিরো হয়ে ওঠার নেশাই যুবকটিকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিল।
এর আগেও এই ধরণের অনেক ঘটনা সম্পর্কে আমরা পড়েছি। নতুন প্রজন্ম যেন একটা হুজুগে মেতে আছে, আর এই নেশায় থাকার ফলে তারা ভালো বা মন্দর পার্থক্য করতে পারছে না। ফলে বড় বিপদ ঘটে যাচ্ছে। আমরা দেখেছি একজন ব্যক্তি ফেসবুক লাইভ রেখে আত্মহত্যা করেছেন।
বিভিন্ন হুজুগ যাকে আমরা ইংরেজিতে ক্রেজ বলি তার বশবর্তী হয় মানুষ অনেক সময় এমন কিছু কাজ করে বসে যার ফলে তাঁর প্রাণসংশয় হয়ে যায়। এখানে একটা বিষয় বুঝতে হবে সেটা হল হুজুগ যদি কোনও ভালো বিষয় হয় তাহলে সেটা খারাপ নয়।
আমার মনে হয় যুগের সঙ্গে হুজুগের সংজ্ঞাটাও বদলে যাচ্ছে। আগে বাচ্চাদের মধ্যে হটাৎই হুজুগ উঠত আম পেড়ে খাওয়ার বা পাল্লা দিয়ে পুকুরে কে কতবার সাঁতরে এপার ওপর করতে পারে তার, কিন্তু এ যুগের বাচ্চাদের মধ্যে হুজুগ ওঠলে তারা একদিনে কে কতগুলো ভিডিও গেমস খেলা শেষ করতে পারে, তার। তবে আমি একবারও বলছি না ভিডিও গেমস খেলা ভালো নয়। তবে মাত্রাতিরিক্ত কোনও কিছুই ভালো নয়। তাছাড়া যুগের সঙ্গে নিজেকেও বদলে নিতে হবে। সেটাও সত্যি কথা।
এ কী প্রাণঘাতী হুজুগ?
আর এইসব মানুষের মধ্যে কয়েকজন রয়েছেন যাঁরা আবার 'মহাহুজুগে'। অনেক সময় ফেসবুকে দেখেছি যদি কোনও বন্ধু কোনও একটি বিষয় নিয়ে কিছু লেখেন তখন অন্য আর একজন কিছু বুঝুক বা না বুঝুক, তাঁকেও ওই পোস্টটি সঙ্গে সঙ্গে আরও পাঁচজনের সঙ্গে 'শেয়ার' করতে হবে বা 'লাইক' করতে হবে।
একজন কাশলে অন্যজনকেও কাশতেই হবে। আমরা হামেশাই দেখতে পাই মোবাইলে 'সেলফি' তোলার হুজুগে কত মানুষ প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে ছবি তুলতে গিয়ে মারা পর্যন্ত গেছেন।
তবে এখানে একটা মজার ব্যাপার হল হুজুগ ব্যাপারটা খুবই অল্প মেয়াদি তাই যেকোনও হুজুগ বেশিদিন টিকে থাকে না।
তবে হুজুগের বশবর্তী হয় কেউ যদি নিজের জীবনে বিপদ ডেকে আনে তাহলে সেটা অবশই চিন্তার বিষয়। এখানে আরও একটা বিষয় হল যে ব্যক্তি এইধরণের কাজ করে অন্য মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার চেষ্টা করছে সে নিজেই বুঝতে পারছে না যে সে একটা বিরাট ঝুঁকি নিতে চলেছে।
হুজুগের ব্যাপারটা ফ্যাশনের ক্ষেত্রে খুব দেখা যায়। যখন কোনও ধরণের পোশাকের চল ওঠে তখন দেখা যায় যে বহু মানুষ সেই ফ্যাশন মাফিক পোশাক পড়ছেন বা সাজগোজ করছেন।
সবাই পাল্লা দিয়ে ওই এক পোশাক পড়তে শুরু করে দিল কিংবা বিশেষ কোনও ধরণের চুলের ফ্যাশন হল সঙ্গে সঙ্গে মানাক বা নাই মানাক প্রায় সবাই একই রকম চুলের ফ্যাশন করতে মেতে উঠল। একটা ক্রেজ বা হুজুগ যতক্ষণ কোনও মানুষের বিপদ ডেকে না আনছে বা অন্য কোনও ব্যক্তির অসুবিধার বা বিপদের কারণ না ঘটাছে ততক্ষন কোনও ক্ষতি নেই।
ঠিক একইভাবে আগে দূর্গা প্রতিমার একধরণের সাজ বা মুখের আদল হতো। তবে এখন মায়ের মুখের আদল বদলে গেছে। থিম পুজোর রমরমা হয়েছে চারদিকে। সেই হুজুগটাই এখন শিল্পের পর্যায় চলে গেছে এবং আমরা সবাই এই বদলকে স্বাগত জানিয়েছি।
ভালো হুজুগে মেতে থাকা যেমন ভালো কথা, ঠিক তেমন বলাই বাহুল্য যে খারাপ হুজুগ মানুষের ক্ষতি করে। বাড়ীর বড়দের এই বিষয় নজর রাখতে হবে।